প্রাকপ্রাথমিক শিক্ষা কী? প্রাকপ্রাথমিক স্তরের শিক্ষার উদ্দেশ্য, কাঠামাে এবং পাঠক্রম সম্পর্কে কমিশনের সুপারিশসমূহ উল্লেখ করাে।

প্রাকপ্রাথমিক শিক্ষা কী? প্রাকপ্রাথমিক স্তরের শিক্ষার উদ্দেশ্য, কাঠামাে এবং পাঠক্রম সম্পর্কে কমিশনের সুপারিশসমূহ উল্লেখ করাে। Class 12 | Education (কোঠারি কমিশন) | 8 Marks

উত্তর:-

প্রাকপ্রাথমিক শিক্ষা 

প্রথাগত প্রাথমিক শিক্ষার আগে যে শিক্ষা, তাকে বলা হয় প্রাথমিক শিক্ষা। সাধারণত পাঁচ বা ছয় বছর বয়সের আগের শিক্ষাকেই প্রাথমিক শিক্ষা বলে। 

প্রাকপ্রাথমিক শিক্ষার উদ্দেশ্য, কাঠামাে ও পাঠক্রম সম্পর্কে কমিশনের সুপারিশসমূহ

[1] লক্ষ্য: প্রাক্‌-প্রাথমিক শিক্ষার গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যগুলি হল— 

i. শিশুদের মধ্যে স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তােলা এবং ব্যক্তিগত অভিযােজনের জন্য, যেমন— পােশাক-পরিধান, টয়লেটের অভ্যাস, খাদ্যগ্রহণ, পরিচ্ছন্নতা ইত্যাদির জন্য মৌলিক দক্ষতা গড়ে তােলা। ii. প্রয়ােজনীয় সামাজিক অভ্যাস ও আদবকায়দা গড়ে তােলা, দলগত কাজে অংশগ্রহণে উৎসাহ দান করা এবং অন্যদের অধিকার ও সুযােগসুবিধার প্রতি অনুভূতিশীল করে তােলা। 

iii. শিশুকে তার অনুভূতি, আবেগ বুঝতে, প্ৰকাশ ও নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করা এবং নির্দেশনার মাধ্যমে প্রক্ষোভ বিকাশ ও পরিণমনে সাহায্য করা। 

iv. শিশুর নান্দনিক বােধকে উৎসাহিত করা। 

v. শিক্ষার্থী যে পরিবেশে বাস করছে তাকে জানার এবং নতুন কিছু উদ্ভাবন ও পরীক্ষানিরীক্ষার সুযােগ তৈরির মাধ্যমে শিক্ষার্থীকে পরিবেশ সম্পর্কে আগ্রহী করে তােলা। 

vi. আত্মপ্রকাশের যথেষ্ট সুযােগ সৃষ্টি করে শিশুর স্বাধীন চেতনা এবং সৃজনশীলতাকে উৎসাহ দান করা।

vii. শিশুর চিন্তা ও অনুভূতিকে স্পষ্ট, সঠিক এবং সাবলীলভাবে ব্যক্ত করার ক্ষমতাকে বিকাশ করা। সুস্বাস্থ্য, পেশিসমূহের সঠিক সমন্বয় এবং চলন ক্ষমতার মৌলিক দক্ষতাগুলির বিকাশসাধন করা।

[2] কাঠামাে: ভারতীয় শিক্ষা কমিশনের মতে, প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষাস্তরের শিক্ষাকাল হবে 1 থেকে 3 বছরের শিশুরা 3 বা 4 বছর বয়সে পোঁছােলে এই স্তরের পাঠগ্রহণের উপযুক্ত বলে বিবেচিত হবে। এই পাঠ চলবে তাদের 5 থেকে 6 বছর পর্যন্ত। অতঃপর তারা প্রাথমিক স্তরে ভরতি হওয়ার উপযুক্ত হবে। প্রাকপ্রাথমিক স্তরের শিক্ষার কাঠামােটি হবে নিম্নরূপ

শিক্ষাস্তরের নামশ্রেণির নামশিশুর বয়স 
প্রাক্‌প্রাথমিক শিক্ষাকেজি ওয়ান3+ বছর
কেজি টু4+ বছর

[3] পাঠক্রম: প্রাক্‌প্রাথমিক শিক্ষাস্তরের পাঠক্রমের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সমাজ কল্যাণ পর্ষদ নিয়ােজিত কমিটির সঙ্গে একমত হয়ে নিম্নলিখিত বিষয়গুলি সুপারিশ করে— 

i. খেলাধুলার মাধ্যমে শিক্ষাদান—এর মধ্যে রয়েছে খেলনা, বিভিন্ন indoor এবং outdoor খেলা, যেখানে সব শিশু মুক্তভাবে খেলাধুলায় অংশগ্রহণ করতে পারবে। 

ii. শারীরিক ক্রিয়াকলাপ। 

iii. শারীরশিক্ষা—যার মধ্যে আছে সাধারণ ব্যায়াম, নাচ ইত্যাদি। 

iv. মানসিক শিক্ষা—যার মধ্যে রয়েছে বাগান তৈরি, বিভিন্ন সামাজিক সহজ কাজে অংশগ্রহণ। 

v. প্রাকৃতিক বস্তু ও বিশেষভাবে তৈরি জিনিসপত্র দিয়ে শিক্ষা। 

vi. বিভিন্ন ধরনের হাতের কাজ; আঙুলের দক্ষতা বাড়ে এমন ধরনের কাজ। এই কারণে অঙ্কন, বাদ্যযন্ত্র প্রভৃতি শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। 

vii. শিখনমূলক কাজের মধ্যে রয়েছে ভাষা, স্বাস্থ্যসম্মত নিয়ম, প্রাথমিক প্রকৃতি সম্বন্ধে ধারণা (অর্থাৎ প্রকৃতিতে আশ্রিত বিভিন্ন জীবন, জীবজন্তু সম্বন্ধে ধারণা)। 

viii. গণনা শেখা ও পাটিগণিত শেখা। 

ix. বিদ্যালয়ের জীবনযাত্রায় নিজের কাজ নিজে (বড়ােদের সাহায্য নিয়ে) করার ইচ্ছা।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment