Class 12 Class 12 Education গ্রামীণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ধারণাটি আলােচনা করাে

গ্রামীণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ধারণাটি আলােচনা করাে

গ্রামীণ বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের ব্যাপারে রাধাকৃষণ কমিশনের দৃষ্টিভঙ্গি কীরকম ছিল—তা আলােচনা করাে। গ্রামীণ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরবতী অবস্থা সম্পর্কে কী জান? অথবা, গ্রামীণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ধারণাটি আলােচনা করাে। Class 12 | Education (শিক্ষাবিজ্ঞান) | 8 Marks

উত্তর:

গ্রামীণ বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনে রাধাকৃষ্মণ কমিশনের দৃষ্টিভঙ্গি

রাধাকৃষণ কমিশনের প্রতিবেদনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল গ্রামাঞ্চলে বসবাসকারী ছেলেমেয়েদের উচ্চশিক্ষা সম্বন্ধে একটি সর্বাত্মক নতুন ধারণা গড়ে তােলা। তৎকালীন ভারতের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক জীবনে গ্রামের গুরুত্ব উপলদ্ধি করে এই কমিশনে শিক্ষাব্যবস্থাকে গ্রামজীবনের সঙ্গে সমন্বয়সাধনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। 

[1] পল্লি উন্নয়ন: কমিশন লক্ষ করেছিল, ভারতের অধিকাংশ মানুষ গ্রামাঞ্চলে বসবাস করে। তাদের সামগ্রিক উন্নতি ঘটাতে হলে, মুষ্টিমেয় বিত্তবান শহরাঞ্চলের শিক্ষার্থীদের স্বার্থরক্ষা করলে চলবে না। বরং সবার আগে পল্লি উন্নয়নের দিকে দৃষ্টি দিয়ে গ্রামাঞ্চলগুলিকে বিজ্ঞানসম্মতভাবে পুনর্গঠিত করতে হবে।

[2] কৃষি, জনশিক্ষা ও সমাজ উন্নয়ন: কমিশনের মতে, গ্রামীণ বিশ্ববিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয়গুলিতে কৃষি, উদ্যানপালন, জনশিক্ষা, গ্রামােন্নয়ন, সমাজ উন্নয়ন প্রভৃতি বিষয়গুলি প্রাধান্য লাভ করবে। কমিশনের প্রতিবেদনে স্পষ্ট ভাষায় উল্লেখ আছে—গ্রামীণ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠক্রম, শিক্ষাদান পদ্ধতি ও অন্যান্য বিষয়ের পরিকল্পনা গ্রহণের সময় গ্রামাঞ্চলে বসবাসকারী মানুষের প্রয়ােজনের দিকগুলি বিশেষভাবে বিবেচনা করতে হবে।

[3] গ্রামীণ শিক্ষার রূপরেখা : কমিশনের প্রতিবেদনে উত্তর- বুনিয়াদি বিদ্যালয়কে গ্রামীণ বিদ্যালয় হিসেবে গ্রহণ করার কথা বলা হয়। প্রতিবেদনে এ ছাড়াও বলা হয়, কয়েকটি বিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে একটি করে গ্রামীণ মহাবিদ্যালয় গড়ে উঠবে এবং কয়েকটি গ্রামীণ মহাবিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে একটি গ্রামীণ বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠবে।

[3] গ্রামীণ শিক্ষাব্যবস্থার বিভিন্ন স্তর : রাধাকৃষ্ণণ কমিশন গ্রামীণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ধারণায় একটি পূর্ণাঙ্গ গ্রামীণ শিক্ষা পরিকল্পনা উপস্থাপন করে। ওই শিক্ষা পরিকল্পনায় চারটি স্তরের কথা বলা হয়, সেগুলি হল—

স্তরের নামসময়কাল
নিম্ন ও উচ্চবুনিয়াদি শিক্ষা7 অথবা ৪ বছর
উত্তরবুনিয়াদি বা মাধ্যমিক শিক্ষা3 অথবা 4 বছর
গ্রামীণ মহাবিদ্যালয়ের স্নাতক শিক্ষা3 বছর
গ্রামীণ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর শিক্ষা2 বছর

[4] মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও আদর্শ গ্রাম গঠন: কমিশনে উত্তরবুনিয়াদি তথা মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলিকে আবাসিক করার সুপারিশ করা হয় এবং প্রতিটি উত্তরবুনিয়াদি বিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে যাতে একটি আদর্শ গ্রাম গড়ে তােলা যায়, তার জন্য পরামর্শ দান করা হয়। 

[5] ততগত ও ব্যাবহারিক শিক্ষার ব্যবস্থা; উত্তরবুনিয়াদি পর্যায়ের শিক্ষা শেষ হলে গ্রামাঞ্চলের ছাত্রছাত্রীদের উচ্চশিক্ষার ব্যবস্থা হবে গ্রামীণ মহাবিদ্যালয়ে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে। ওইসব বিদ্যালয়গুলিতে পাঠক্রমে তত্ত্বগত বৌদ্ধিক জ্ঞানের পাশাপাশি ব্যাবহারিক জ্ঞানার্জনের সুযোগ থাকবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্রামীণ শিল্প, অর্থনীতি, সংস্কৃতি প্রভৃতি বিষয়ে গবেষণামূলক কাজেরও সুযােগ থাকবে। 

[6] কর্মসূচির বিষয়ে সুপারিশ ; কমিশনে গ্রামীণ বিশ্ববিদ্যালয়গুলির জন্য যেসব কর্মসূচির বিষয়ে সুপারিশ করা হয়, সেগুলির গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি দিক হল— 

i. অনুমােদনের ব্যবস্থা : বিশ্ববিদ্যালয়ের নিকটবর্তী অঞ্চলগুলিতে বস্থিত মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয়গুলিকে অনুমােদন দানের ব্যবস্থা করা। 

ii. আবাসিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রূপান্তর : মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং মহাবিদ্যালয়গুলিকে আবাসিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরিণত করার ব্যবস্থা করা। 

Iii. পাঠক্রমে গ্রামীণ বিষয় সংযোজন : গ্রামীণ সমাজ-সংস্কৃতি, শিল্প ও অর্থনীতির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত বিষয়গুলিকে পাঠক্রমে অন্তর্ভুক্ত করার ব্যবস্থা করা। 

iv. গ্রাম্যজীবন সম্পর্কে গবেষণা : গ্রাম্যজীবনের ক্ষেত্রে তাৎপর্যপূর্ণ। বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণার সুযােগ সৃষ্টি করা। 

v. তথ্যসংগ্রহ: গ্রাম্যজীবনের বিভিন্ন দিকের সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয়ে তথ্যসংগ্রহের ব্যবস্থা করা।

গ্রামীণ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরবর্তী অবস্থা

1948-49 খ্রিস্টাব্দের বিশ্ববিদ্যালয় কমিশনের প্রস্তাব সরকার সম্পূর্ণভাবে গ্রহণ করেননি। তাই গ্রামীণ উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে ভারত সরকারকে পরামর্শ দানের জন্য 1956 খ্রিস্টাব্দে ‘National Council of Rural Higher Education’ গঠন করা হয়। এই কাউন্সিলের সুপারিশ অনুযায়ী ভারতের বিভিন্ন স্থানে প্রায় চোদ্দো-পনেরােটি Rural Institute গঠন করা হয়। আমাদের রাজ্যে বােলপুরের কাছে শ্রীনিকেতনে এইরূপ একটি প্রতিষ্ঠান গঠন করা হয়। NCRHE-এর সুপারিশে গ্রামীণ অর্থনীতি, সমবায়, সমাজবিজ্ঞান ও সমষ্টি উন্নয়ন বিষয়ে পঠনপাঠন ও ডিগ্রি প্রদানের কথা বলা হলেও, বাস্তবে মাত্র কয়েকটি বিষয়ে ডিপ্লোমা ও সার্টিফিকেট কোর্স চালু হয়। কোর্সগুলির নাম ও সময়সীমা নীচে উল্লেখ করা হল — 

কোর্সের নামসময়সীমা/ব্যাপ্তি
গ্রামীণ বিজ্ঞানে সার্টিফিকেট কোর্স2 বছর
গ্রামসেবা বিজ্ঞানে ডিপ্লোমা কোর্স3 বছর
কৃষিবিজ্ঞানে সার্টিফিকেট কোর্স2 বছর
সেনেটারি ইনস্পেকটর-এর সার্টিফিকেট কোর্স3 বছর
ডিগ্রি কোর্সে ভরতি হওয়ার জন্য ম্যাট্রিকুলেশন 1 বছর
পাস শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতি কোর্স1 বছর

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment