মুদালিয়র কমিশনের প্রতিবেদনের বৈশিষ্ট্য কী? মুদালিয়র কমিশন প্রচলিত শিক্ষার যে সকল ত্রুটি সম্পর্কে আলােকপাত করেন, সেগুলি আলােচনা করাে। 2+6 Class 12 | Education (শিক্ষাবিজ্ঞান) | 8 Marks
উত্তর:-
মুদালিয়র কমিশনের প্রতিবেদনের বৈশিষ্ট্য মুদালিয়র কমিশন তার প্রতিবেদনে মাধ্যমিক শিক্ষার প্রতিটি দিক সম্পর্কে আলােকপাত করে সুচিন্তিত সুপারিশ নথিভুক্ত করে। এই কমিশন একদিকে যেমন প্রচলিত মাধ্যমিক শিক্ষার ত্রুটিগুলি সম্পর্কে বিচারবিশ্লেষণ করেছে, অন্যদিকে স্বাধীন ভারতে মাধ্যমিক শিক্ষার স্বরূপ কী হওয়া উচিত এবং কী নীতি গৃহীত হলে এই নতুন মাধ্যমিক শিক্ষা প্রচলিত হতে পারবে, সে সম্পর্কে বিশদভাবে আলােকপাত করেছে। এই কমিশনের প্রতিবেদনে 16টি অধ্যায়ে নিম্নলিখিত বিষয়গুলি সম্পর্কে আলােচনা করা হয়— [1] ভূমিকা, [2] প্রচলিত ব্যবস্থার সমীক্ষা, [3] নতুন মাধ্যমিক শিক্ষার লক্ষ্য, [4] মাধ্যমিক শিক্ষাব্যবস্থার পুনর্গঠন, [5] ভাষা শিক্ষা, [6] মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলির পাঠক্রম, [7] মাধ্যমিক শিক্ষার নতুন পদ্ধতি, [8] চরিত্রগঠনের শিক্ষা, [9] বিদ্যালয়ে পথনির্দেশ ব্যবস্থা, [10] শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যশিক্ষা, [11] পরীক্ষাপদ্ধতির পরিবর্তন, [12] শিক্ষকদের উন্নতিবিধান, [13] প্রশাসনিক সমস্যা, [14] আর্থিক সমস্যা, [15] কমিশনের দৃষ্টিতে মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ধারণা গঠন এবং [16] উপসংহার।
প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থার ত্রুটি বিষয়ে মুদালিয়র কমিশনের অভিমত : মুদালিয়র কমিশনের সদস্যবৃন্দ যখন প্রচলিত শিক্ষার অবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্য ভারতের বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করেন, সেই সময় বিভিন্ন রাজ্যের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে বহু তথ্য সংগৃহীত হয় তার ভিত্তিতে শিক্ষার সংস্কার ও পুনর্গঠনের সুবিধার জন্য কমিশন কতকগুলি ত্রুটি সুসংবদ্ধভাবে প্রকাশ করে। সেগুলি হল—
[1] বাস্তবজীবনের সঙ্গে সংগতিহীন শিক্ষাক্রম: সারা দেশের বিভিন্ন বিদ্যালয়ে যে শিক্ষা দান করা হয়, তার সঙ্গে সঠিক অর্থে জীবনের কোনাে সংযােগ নেই। তাই এই শিক্ষাক্রমের মধ্য দিয়ে যারা শিক্ষা লাভ করে, তারা ভবিষ্যতে সমাজজীবনের উপযুক্ত হয়ে উঠতে পারে না।
[2] বৈচিত্র্যহীন শিক্ষা : প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থার পাঠক্রম বৈচিত্র্যহীন ও গতানুগতিক | তাই এই শিক্ষায় শিক্ষার্থীর সার্বিক বিকাশ ঘটে না। ফলে জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে এই শিক্ষায় শিক্ষিতরা পিছিয়ে পড়ে।
[3] পুথিগত বিদ্যার ওপরে গুরুত্ব: প্রচলিত শিক্ষায় বিদ্যালয়গুলিতে কেবল পুথিগত বিদ্যার আয়ত্তের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। খেলাধুলাে, গানবাজনা, শরীরচর্চা, হাতের কাজ, সমাজ উন্নয়নমূলক কাজ প্রভৃতির ওপর কোনাে গুরুত্ব দেওয়া হয় না।
[4] মাতৃভাষার প্রতি অবহেলা : তৎকালীন মাধ্যমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে কেবল ইংরেজি শিক্ষার বিষয়ে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হত। মাতৃভাষা বা অন্যান্য দেশীয় ভাষাকে তেমন কোনাে গুরুত্ব দেওয়া হত না। ফলে ইংরেজি মুখস্থ করতেই শিক্ষার্থীদের বেশিরভাগ সময় কেটে যেত ৷
[5] যান্ত্রিক পুনরাবৃত্তিমূলক শিখন পদ্ধতি : মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলিতে যান্ত্রিক পুনরাবৃত্তিমূলক শিখনে ছাত্রছাত্রীদের উৎসাহ দান করা হত। ফলে ছাত্রছাত্রীরা স্বাধীনভাবে কোনাে বিষয়ে চিন্তা করার পরিবর্তে মুখস্থবিদ্যার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠত। ফলে কোনাে বিষয়ে সিদ্ধান্তগ্রহণ বা নেতৃত্বদানের ক্ষেত্রে তারা ব্যর্থ হত।
[6] শিক্ষার্থীর অত্যধিক সংখ্যা : বিদ্যালয়গুলির প্রত্যেকটি শ্রেণিতে অধিক সংখ্যক শিক্ষার্থী থাকায় তারা ব্যক্তিগতভাবে শিক্ষকের সান্নিধ্যে আসার সুযােগ থেকে বঞ্চিত হয়। ফলে একদিকে যেমন ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক সঠিকভাবে গড়ে উঠতে পারে না, অন্যদিকে শ্রেণিতে ছাত্রছাত্রীদের আচরণে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়।
[7] শিক্ষকদের আর্থিক দুরবস্থা: বেশিরভাগ বিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষকরা উপযুক্ত পারিশ্রমিক ও সুযােগসুবিধা পেতেন না। ফলে তারা বিদ্যালয়ে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালনে অনীহা প্রকাশ করতেন। এর ফলে মাধ্যমিক শিক্ষাব্যবস্থায় বিপর্যয় দেখা দিয়েছিল।
[8] ত্রুটিপূর্ণ পরীক্ষাপদ্ধতি : তৎকালীন মাধ্যমিক শিক্ষাব্যবস্থায় যে পরীক্ষাপদ্ধতি অনুসৃত হত, তা অনেকাংশেই ত্রুটিপূর্ণ। ফলে শিক্ষার্থীরা কেবল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার জন্যই সচেষ্ট হত। জ্ঞানার্জন, দক্ষতালাভ, চারিত্রিক বিকাশ প্রভৃতি তাদের কাছে ছিল মূল্যহীন।
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।