ধর্মশিক্ষা ও নৈতিক শিক্ষা, নারীশিক্ষা, ছাত্রকল্যাণ ও শরীরচর্চা সম্পর্কে রাধাকৃষণ কমিশনের সুপারিশগুলি লেখাে। Class 12 | Education (শিক্ষাবিজ্ঞান) | 8 Marks
উত্তর:
ধর্মশিক্ষা ও নৈতিক শিক্ষা, নারীশিক্ষা, ছাত্রকল্যাণ ও শরীরচর্চা প্রসঙ্গে রাধাকৃরূণ কমিশনের সুপারিশসমূহ
স্বাধীনতা লাভের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ড. সর্বপল্লি রাধাকৃষ্ণণের নেতৃত্বে সরকার একটি উচ্চশিক্ষা কমিশন গঠন করে। ওই কমিশনের রিপাের্টে নৈতিক ও ধর্মীয় শিক্ষা, নারীশিক্ষার বিকাশ, ছাত্রকল্যাণ ও শরীরচর্চা সম্পর্কেও মূল্যবান সুপারিশ নথিভুক্ত করা হয়। নীচে এই সব সুপারিশগুলি উল্লেখ করা হল।
ধর্মশিক্ষা ও নৈতিক শিক্ষা সম্পর্কিত সুপারিশ
ধর্মশিক্ষা ও নীতি শিক্ষার ক্ষেত্রে রাধাকৃয়ণ কমিশন যে সুপারিশগুলি করে, সেগুলি হল —
[1] নীরব প্রার্থনা: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিতে দিনের কাজ শুরু হওয়ার আগে শিক্ষার্থীদের কয়েক মিনিট নীরব প্রার্থনা বা ধ্যান করতে হবে।
[2] জীবনীপাঠ: স্নাতক স্তরের প্রথম বর্ষে গৌতম বুদ্ধ, কনফুসিয়াস, সক্রেটিস, জিশুখ্রিস্ট, মহম্মদ কবীর, মহাত্মা গান্ধি প্রমুখ মহাপুরুষের জীবনীপাঠের ব্যবস্থা করতে হবে।
[3] ধর্মগ্রন্থপাঠ; দ্বিতীয় বর্ষে পৃথিবীর বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ থেকে বিশ্বজনীন আবেদনযুক্ত কিছু কিছু নির্বাচিত অংশ পাঠের জন্য প্রয়ােজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
[4] ধর্মীয় দর্শন আলােচনা : তৃতীয় বর্ষে ধর্মীয় দর্শনের গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাগুলি আলােচনা করার বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে।
এ ছাড়া মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা, সৌভ্রাতৃত্ববােধ প্রভৃতি গুণগুলির বিকাশ ঘটাতে হবে। এই গুণগুলির বিকাশের জন্য রাধাকৃয়ণ কমিশন তিন ধরনের
আধ্যাত্মিক চিন্তার কথা বলেছে — i. ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস, ii. মানুষের প্রতি ভালােবাসা এবং iii. নিজের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালােবাসা।
নিজের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালােবাসা বলতে গিয়ে কমিশন মন্তব্য। করেছে—যে মানুষ নিজের ওপর বিশ্বাস হারিয়ে ফেলে, সে নিজেকেও হারিয়ে ফেলে।
নারীশিক্ষা সম্পর্কিত সুপারিশ
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা কমিশন নারীশিক্ষা সম্পর্কে কতকগুলি মূল্যবান সুপারিশ নথিভুক্ত করে। এগুলি হল —
[1] সমসুযােগ: শিক্ষাক্ষেত্রে মহিলারাও পুরুষের মতাে সমান সুযােগ ভােগ করবে।
[2] সামাজিক সচেতনতা: সহশিক্ষা সমন্বিত মহাবিদ্যালয়ে মহিলাদের জন্য যেমন উপযুক্ত সুযােগসুবিধার ব্যবস্থা করতে হবে, তেমনই ছেলেরাও যাতে সেখানে সৌজন্যবােধ এবং সামাজিক দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন। হয়, তার ব্যবস্থা করতে হবে।
[3] বিশেষ বিষয়ে পাঠদান: মহিলাদের জন্য গার্হস্থ্য বিজ্ঞান, গৃহ পরিচালনা, গার্হস্থ্য অর্থনীতি প্রভৃতি বিষয়ে পাঠদানের ব্যবস্থা করতে হবে।
ছাত্রকল্যাণ ও শরীরচর্চা সম্পর্কিত সুপারিশ
ছাত্রকল্যাণ ও শরীরচর্চার বিষয়ে কমিশনের সুপারিশগুলি হল —
[1] কল্যাণমূলক কর্মসূচি: কমিশন বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে একটি করে উপদেষ্টা কমিটি গঠনের সুপারিশ করে। ওই কমিটির কাজ হবে শিক্ষার্থীদের জন্য বিভিন্ন ধরনের কল্যাণমূলক কর্মসূচি স্থির করা এবং শিক্ষার্থীদের ওই সকল কল্যাণমূলক কাজে উৎসাহিত করা।
[2] স্বাস্থ্যপরীক্ষা: বছরে কমপক্ষে একবার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিনা খরচে স্বাস্থ্যপরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে|
[3] পাঠক্রম নির্ধারণ : বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে শারীরশিক্ষার পাঠদানের জন্য পাঠক্রম নির্ধারণ করতে হবে।
[4] NCC বিভাগ : প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং প্রতিটি মহাবিদ্যালয়ে একটি করে এনসিসি বিভাগ খুলতে হবে | এনসিসি বিভাগের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থবরাদ্দ করবে৷ ওই অর্থের কিছু অংশ সাজসরঞ্জাম কেনার জন্য ব্যয় করা হবে।
[5] ছাত্রসংসদ গঠন; দলগত রাজনীতি থেকে মুক্ত এবং শৃঙ্খলাবিধানের অনুকূলে ও ছাত্রকল্যাণের পরিপ্রেক্ষিতে ছাত্রসংসদ গঠন করতে হবে।
[6] ছাত্রাবাস নির্মাণ : স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ, ছাত্রদের প্রয়ােজনীয় আসবাবপত্র ও সাজ-সরঞ্জামসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন ছাত্রাবাস নির্মাণ করতে হবে।
[7] শরীরচর্চা : শিক্ষার্থীরা যাতে নিয়মিত শরীরচর্চার সুযােগ পায়, তার জন্য প্রয়ােজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।