1986 সালের জাতীয় শিক্ষানীতির পশ্চাৎপট উল্লেখ করাে। উক্ত শিক্ষানীতির মূল বিচার্য বিষয়গুলি আলােচনা করাে

1986 সালের জাতীয় শিক্ষানীতির পশ্চাৎপট উল্লেখ করাে। উক্ত শিক্ষানীতির মূল বিচার্য বিষয়গুলি আলােচনা করাে Class 12 | Education (শিক্ষাবিজ্ঞান) | 8 Marks

উত্তর:

1986 সালের জাতীয় শিক্ষানীতির পশ্চাৎপট

ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধি, জাতির উদ্দেশ্যে তার প্রথম ভাষণে একটি নতুন ও গতিশীল শিক্ষানীতির কথা উল্লেখ করেন। এই নীতিতে মানব এবং প্রাকৃতিক সম্পদকে সর্বোৎকৃষ্টভাবে ব্যবহার করে জাতির পুনর্গঠন ও উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করার কথা বলা হয়।

          স্বাভাবিকভাবেই প্রধানমন্ত্রীর অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ভাষণের পর ভারত সরকারের শিক্ষামন্ত্রক বিভিন্ন দিকে পুনরুজ্জীবন এবং উন্নয়নের উদ্দেশ্যে এবং দেশের অভ্যন্তরীণ এবং বাহ্যিক বিভিন্ন ধরনের সমস্যার মােকাবিলার জন্য, নতুন শিক্ষাব্যবস্থার একটি রূপরেখা প্রস্তুত করেন। তার ভিত্তিতে শিক্ষামন্ত্রক ‘চ্যালেঞ্জ অব এডুকেশন—এ পলিসি পারসপেকটিভ’ নামে একটি প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেন। প্রস্তাবনায় 1968 সালের জাতীয় শিক্ষানীতিতে যে সাফল্য দেখা গেছে এবং বিভিন্ন কারণে যে নীতিগুলি কার্যকরণে অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়েছে, তার সম্পর্কেও উল্লেখ করা হয়েছে|অতঃপর প্রস্তাবনাটি বিভিন্ন স্তরে পর্যালােচনা করার পর সংশােধিত আকারে পার্লামেন্টে উপস্থাপিত করা হয় এবং বিস্তারিত আলােচনার পর গৃহীত হয়। এটিই জাতীয় শিক্ষানীতি (1986) বা National Policy of Education (1986) হিসেবে স্বীকৃত হয় এবং 1986-এর শিক্ষাবর্ষ থেকেই কার্যকর হয়।

জাতীয় শিক্ষানীতি (1986) র মূল বিচার্য বিষয়

ঘটাব্দে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধির দেওয়া প্রতিশ্রুতি। 1086 সালের 21 এপ্রিল একটি জাতীয় শিক্ষানীতি প্রকাশিত হয়। অধ্যায় সমন্বিত এই শিক্ষানীতির প্রথম ও শেষ অধ্যায় বাদে বাকি দশটি . ভারতের শিক্ষার গতিপ্রকৃতি নিয়ে আলােচনা করা হয়েছে।নীচে এই শিক্ষানীতির প্রধান বিষয়গুলি উল্লেখিত হল—

[1] শিক্ষার উপাদান ও ভূমিকা: শিক্ষা হবে সকলের জন্য। শিক্ষা হবে। সর্বাঙ্গীণ উন্নয়নের সুত্র।

[2] জাতীয় ব্যবস্থায় শিক্ষা: একটি নির্দিষ্ট স্তর পর্যন্ত শিক্ষাক্ষেত্রে জাতিধর্মবর্ণ, স্ত্রীপুরুষ নির্বিশেষে সব শিক্ষার্থীর সমান সুযােগ থাকবে। 

[3] সাম্যের জন্য শিক্ষা: দেশের অনুন্নত সম্প্রদায়, যেমন— তপশিলি জাতি ও উপজাতি, সংখ্যালঘু, মহিলা এবং প্রতিবন্ধীদের শিক্ষার প্রসারে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে। 

[4] বিভিন্ন স্তরের শিক্ষার পুনর্গঠন

1. প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষাকে সঠিক ও সুষ্ঠু উপায়ে রূপায়িত করা হবে। 

ii. প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার প্রসার ঘটানাে, সমস্ত ছেলেমেয়েকে বিদ্যালয়ে ভরতি করা ও অন্তত 14 বছর বয়স পর্যন্ত সব শিক্ষার্থীকে বিদ্যালয়মুখী রাখা, সর্বোপরি শিক্ষার গুণগত মানের প্রকৃত উন্নয়ন ঘটানাে। 

iii. মেধাবী এবং প্রতিভাবান শিক্ষার্থীদের উপযুক্ত সুযােগসুবিধা দিতে সারা | দেশের প্রতিটি জেলায় একটি করে মডেল স্কুল’ বা নবােদয় বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

iv. বৃত্তি ও কারিগরি শিক্ষা প্রসারের এবং কারিগরি শিক্ষায় এক অঞ্চল। থেকে অন্য অঞ্চলে শিক্ষার্থীদের অবাধ সরণের সুযােগ সৃষ্টি করা হবে। 

v. স্বয়ংশাসিত কলেজের সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য সচেষ্ট হতে হবে শিক্ষায় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা এবং উচ্চশিক্ষার সুযােগ সকলের কাছে পৌঁছে দেওয়ার উদ্দেশ্যে মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রসার ঘটাতে হবে। 

vi. নির্বাচিত ক্ষেত্রে চাকরির সঙ্গে ডিগ্রির বিচ্ছেদ ঘটানাের সুচনা করা হবে। 

[5] সর্বস্তরের দক্ষতা ও কার্যকারিতা বৃদ্ধি: সর্বস্তরের দক্ষতা ও কার্যকারিতা বৃদ্ধির জন্য গতানুগতিকতার অবসান ঘটিয়ে আধুনিকতার ওপর জোর দেওয়া হবে। 

[6] শিক্ষাব্যবস্থার সক্রিয়করণ: বিশৃঙ্খলার মধ্যে নতুন বা পুরােনাে শিক্ষামূলক কোনাে কাজই সম্পাদিত হতে পারে না। তাই প্রচলিত ব্যবস্থার মধ্যে যত শীঘ্র সম্ভব শৃঙ্খলাবিধানের প্রক্রিয়া চালু করতে হবে। 

[7] শিক্ষার বিষয়বস্তু ও শিক্ষাপ্রক্রিয়ার পুনর্বিন্যাস। 

i. শিক্ষার বিষয়সূচি ও পদ্ধতির সঙ্গে সাংস্কৃতিক বিষয়সমূহ অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। 

ii. মূল্যবােধের শিক্ষাকে শক্তিশালী করতে হবে। 

iii. 1968 খ্রিস্টাব্দের ত্রিভাষাসুত্র অনুসরণ করতে হবে।

iv. পুস্তকের গুণগত মানের উন্নতি, শিক্ষাপ্রযুক্তির ব্যবহার, অঙ্ক ও বিজ্ঞানশিক্ষা, দৈহিক শিক্ষা ও খেলাধুলাে ইত্যাদির ওপর গুরুত্ব দেওয়া হবে। 

v. বহিঃপরীক্ষার প্রাধান্য হ্রাস করে অভ্যন্তরীণ মূল্যায়নের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। গ্রেডপ্রথা চালু করতে হবে। 

[8] শিক্ষক: শিক্ষকের সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি করার দিকে নজর দিতে হবে। শিক্ষকের বেতন ও চাকরির শর্তাবলি তাদের সামাজিক ও পেশাগত দায়িত্বের সঙ্গে সংগতি রেখেই নির্ধারণ করতে হবে। শিক্ষক-শিক্ষণ ব্যবস্থাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। শিক্ষক-শিক্ষণ হবে একটি নিরবচ্ছিন্ন প্রক্রিয়া। প্রতিটি জেলায় DIET প্রতিষ্ঠা করতে হবে। 

[9] শিক্ষা পরিচালনা: জাতীয় স্তরে শিক্ষা পরিচালনায় CABE গুরুত্বপূর্ণ। ভুমিকা পালন করবে। সর্বভারতীয় সার্ভিস হিসেবে ইন্ডিয়ান এডুকেশন সার্ভিস প্রতিষ্ঠিত হবে | CABE-এর মতাে রাজ্যস্তরে SABE গঠিত হবে। উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাস্তর পর্যন্ত শিক্ষা পরিচালনার জন্য জেলা স্কুল বাের্ড গঠিত হবে।

[10] আর্থিক সংস্থান: ধীরে ধীরে শিক্ষার জন্য অর্থ বরাদ্দ বৃদ্ধি করে অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় এই বরাদ্দ যাতে ছয় শতাংশ ছাড়িয়ে যায় সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে৷ জাতীয় শিক্ষানীতি (1986 খ্রি.) ভারতের শিক্ষার ইতিহাসে একটি বলিষ্ঠ পদক্ষেপ—এ বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই। কেননা এই শিক্ষানীতিতে শিক্ষার সর্বাঙ্গীণ বিকাশের জন্য নানান প্রয়ােজনীয় সুপারিশ করা হয়। তবে এ কথাও ঠিক যে, এই শিক্ষানীতিতে ঘােষিত প্রস্তাবগুলি সম্পূর্ণভাবে সমালােচনার ঊর্ধের্ব নয়।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment