Class 12 Class 12 Education মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পর্কে কোঠারি কমিশনের সুপারিশ সম্পর্কে আলােচনা করাে।

মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পর্কে কোঠারি কমিশনের সুপারিশ সম্পর্কে আলােচনা করাে।

মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পর্কে কোঠারি কমিশনের সুপারিশ সম্পর্কে আলােচনা করাে। Class 12 | Education (কোঠারি কমিশন) | 8 Marks

উত্তর:-

মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পর্কে কমিশনের সুপারিশ মাধ্যমিক শিক্ষার ওপর কমিশনের সুপারিশগুলিকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়

[1] মাধ্যমিক শিক্ষার প্রসার: মাধ্যমিক শিক্ষার প্রসার সম্পর্কে কমিশনের সুপারিশগুলি হল— 

i. ছাত্রসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ: আগামী কুড়ি বছরের মধ্যে মাধ্যমিক শিক্ষাগ্রহণকারী ছাত্রসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলির অবস্থান সম্পর্কে উপযুক্ত পরিকল্পনা গ্রহণ, শিক্ষার মানােন্নয়নের ব্যবস্থা এবং ও যােগ্যতম শিক্ষার্থী নির্বাচন করা একান্ত প্রয়ােজন।

ii. শিক্ষার মানােন্নয়ন: প্রত্যেকটি জেলার জন্য একটি মাধ্যমিক শিক্ষার উন্নয়ন সংক্রান্ত পরিকল্পনা রচনা করে পরবর্তী দশ বছরের মধ্যে তা কার্যকর করতে হবে। 

iii. যােগ্য শিক্ষার্থী ভরতি: বহিস্থ পরীক্ষার ফলাফল ও বিদ্যালয়ে রেকর্ডের ভিত্তিতে যাতে যােগ্যতম শিক্ষার্থীকে মাধ্যমিক স্তরে ভরতি করা যায়, তার ব্যবস্থা করা প্রয়ােজন। 

iv. বিদ্যালয়গুচ্ছ গঠন: একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের সমস্ত বিদ্যালয়ের মধ্যে সহযােগিতামূলক মনােভাব গড়ে তােলার জন্য এবং শিক্ষার মানের উন্নতি ঘটানাের উদ্দেশ্যে কয়েকটি বিদ্যালয় নিয়ে একটি করে বিদ্যালয়গুচ্ছ (School Complex) গড়ে তুলতে হবে। 

[2] মাধ্যমিক শিক্ষার বৃত্তিমুখীকরণ: মাধ্যমিক শিক্ষার বৃত্তিমুখীকরণ প্রসঙ্গে কমিশনের মূল বক্তব্যগুলি হল— 

i. নিম্ন ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরে বৃত্তিশিক্ষা: মাধ্যমিক স্তর থেকেই বৃত্তিশিক্ষার ব্যবস্থা থাকবে। নিম্নমাধ্যমিক স্তরে 20% এবং উচ্চমাধ্যমিক স্তরে 50% ছাত্র যাতে 1986-র মধ্যে বৃত্তিশিক্ষার সুযােগ পায়, সেই ব্যবস্থা করতে হবে।

ii. আংশিক ও পূর্ণ সময়ের বৃত্তিশিক্ষা: গ্রাম ও শহরের ছেলেমেয়ে, উভয়ের প্রয়ােজন মেটাবার উপযােগী নানা ধরনের আংশিক সময় ও পুরাে সময়ের বৃত্তিশিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। মাধ্যমিক শিক্ষাকে বৃত্তিমুখী করবার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্য সরকারকে সাহায্য করবে। 

[3] স্ত্রীশিক্ষার প্রসার: মাধ্যমিক স্তরে বালিকাদের শিক্ষার প্রতি কমিশন বিশেষ গুরুত্ব দেয়। স্ত্রীশিক্ষা প্রসারে কমিশনের অভিমত নীচে উল্লেখ করা হল—

i. আগামী কুড়ি বছরের মধ্যে বালিকা ও বালকদের অনুপাত নিম্নমাধ্যমিক স্তরে 1:2 ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরে 1:3 করতে হবে। 

ii. কমিশন বালিকাদের জন্য পৃথক বিদ্যালয় গড়ার সুপারিশ করে। কমিশন আরও সুপারিশ করে যে, যদি আর্থিক কারণে বা স্থানাভাবে বালিকাদের জন্য পৃথক বিদ্যালয় নির্মাণ করা না যায়, তাহলে বিদ্যালয়ে কিছু শিক্ষিকা ও মহিলা শিক্ষাকর্মীর ব্যবস্থা করতে হবে। 

iii. বালিকাদের শিক্ষার উন্নতি করার জন্য ছাত্রাবাসের ব্যবস্থা করতে হবে। যেসব ছাত্রীর বাড়ি বিদ্যালয় থেকে অনেক দূরে, তারা ছাত্রাবাসে থেকে পড়াশােনা করবে। 

iv. অধিক সংখ্যক ছাত্রীকে শিক্ষায় আগ্রহী করে তােলার জন্য বৃত্তি বা স্কলারশিপের ব্যবস্থা করতে হবে। 

v. কমিশন বালিকাদের জন্য আংশিক সময়ের শিক্ষা এবং বৃত্তিমুখী শিক্ষারও সুপারিশ করেছে।

[4] মাধ্যমিক স্তরে ভাষাশিক্ষা: নিম্নমাধ্যমিক স্তরে (নবম ও দশম শ্রেণি) তিনটি ভাষাশিক্ষার ব্যবস্থা থাকবে। যথা—মাতৃভাষা বা আঞ্চলিক ভাষা, রাষ্ট্রভাষা (হিন্দি) বা সহযােগী ভাষা (ইংরেজি) এবং উপরিউক্ত দুটির মধ্যে নেই তেমন একটি আধুনিক ভারতীয় বা ইউরােপীয় ভাষা, যা শিক্ষার মাধ্যমরূপে ব্যবহৃত হয়নি। উচ্চমাধ্যমিক স্তরে (একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণি) দুটি বাধ্যতামূলক হবে, যথা—মাতৃভাষা বা আঞ্চলিক ভাষা এবং রাষ্ট্রভাষা বা সহযােগী ভাষা।

5) মাধ্যমিক শিক্ষার গুরুত্ব : কমিশনের মতে— 

i. শিক্ষার্থীর বয়ঃসন্ধিকাল মাধ্যমিক শিক্ষাস্তরের অন্তর্ভুক্ত। জীবনের বিকাশগত এবং শিক্ষাগত, উভয়দিক থেকে এই শিক্ষাকালটিকে একটি তাৎপর্যপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে ধরা হয়। মাধ্যমিক শিক্ষা শেষ করে বহু শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষায় প্রবেশ করে, আবার বহু শিক্ষার্থী বিভিন্ন ধরনের কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়। তাই এই স্তরটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। ii. মাধ্যমিক শিক্ষা শিক্ষার্থীর সর্বাঙ্গীণ বিকাশের প্রতি নজর দেয় যাতে তারা যােগ্য, সক্ষম ও সুনাগরিক হয়ে ওঠে। 

iii. এই শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীর মধ্যে বৃত্তিমূলক ও উৎপাদন ক্ষমতার বিকাশ ঘটানাে হয়। এর ফলে তারা দেশের পুনর্গঠন ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ করতে পারে। 

iv. এই শিক্ষায় শিক্ষার্থীকে আগামী দিনে নেতৃত্বদানের জন্য প্রস্তুত করা হয়।

v. এই শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীর সৃজনশীলতা ও সৌন্দর্যবােধের বিকাশ ঘটানাে হয়। এগুলি ব্যক্তির আত্মপ্রকাশ এবং ব্যক্তিত্বের বিকাশের জন্য অত্যাবশ্যক। 

[6] অন্যান্য সুপারিশ: উপরিউক্ত সুপারিশগুলি ছাড়াও কমিশন মাধ্যমিক স্তরে আরও কতকগুলি গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ করে। যথা

i. নিম্নমাধ্যমিক স্তরে গণিত ও বিজ্ঞান শিক্ষার ওপর গুরুত্ব আরােপ করতে হবে। বাধ্যতামূলকভাবে সমাজসেবাকেও গ্রহণ করতে হবে। 

ii. কমিশন সুপারিশ করে— দশম শ্রেণির পাঠ শেষ হলে প্রথম বহির্বিভাগীয় পরীক্ষা গ্রহণ করতে হবে এবং দ্বাদশ শ্রেণির শেষে দ্বিতীয় বহির্বিভাগীয় পরীক্ষা গ্রহণ করতে হবে।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment

error: Content is protected !!