মাধ্যমিক শিক্ষার বৃত্তিমুখীকরণ এবং কারিগরি ও ব্যবস্থাপনার শিক্ষা প্রসঙ্গে জাতীয় শিক্ষানীতির বক্তব্য উল্লেখ করাে।

মাধ্যমিক শিক্ষার বৃত্তিমুখীকরণ এবং কারিগরি ও ব্যবস্থাপনার শিক্ষা প্রসঙ্গে জাতীয় শিক্ষানীতির বক্তব্য উল্লেখ করাে। Class 12 | Education | 8 Marks

উত্তর:-

মাধ্যমিক শিক্ষার বৃত্তিমুখীকরণ এবং কারিগরি ও ব্যবস্থাপনার শিক্ষা প্রসঙ্গে জাতীয় শিক্ষানীতির বক্তব্য জাতীয় শিক্ষানীতির পঞ্চম অধ্যায়ে মাধ্যমিক শিক্ষার বৃত্তিমুখীকরণ এবং ষষ্ঠ অধ্যায়ে কারিগরি ও ব্যবস্থাপনার শিক্ষা প্রসঙ্গে আলােচনা করা হয়েছে। মাধ্যমিক শিক্ষার বৃত্তিমুখীকরণ জাতীয় শিক্ষানীতি মাধ্যমিক শিক্ষা পুনর্গঠন সম্পর্কে আলােচনাকালে এই স্তর থেকেই বৃত্তিশিক্ষা চালু করার প্রসঙ্গে যে বিষয়গুলি উল্লেখ করেছে, তা সংক্ষেপে আলােচনা করা হল—

[1] বৃত্তিশিক্ষার উদ্দেশ্য : প্রস্তাবিত শিক্ষার পুনর্গঠনে ধারা বাহিক, সুপরিকল্পিত এবং কঠোরভাবে বাস্তবিকরণের পাশাপাশি বৃত্তিশিক্ষামূলক কর্মসূচির অন্তর্ভুক্তি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এই কর্মসূচির উদ্দেশ্য হল ব্যক্তির বৃত্তিযােগ্যতা বৃদ্ধি করা, দক্ষ মানবশক্তির চাহিদা ও জোগানের মধ্যে পার্থক্য দূর করা এবং যেসব ব্যক্তি উৎসাহ ব্যতিরেকে ও উদ্দেশ্যবিহীনভাবে উচ্চশিক্ষা চালিয়ে যাচ্ছে, তাদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা করাবৃত্তিশিক্ষার স্বার্থে শিল্প প্রশিক্ষণের সঙ্গে বৃত্তিশিক্ষার সংযুক্তি ঘটাতে হবে। 

[2] বৃত্তিশিক্ষার বিষয়: 

i. Health Planning ও Health Service Management-কেও বৃত্তিশিক্ষার আওতায় আনা হবে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে Health Education চালু করে শিক্ষার্থীদের পারিবারিক ও সামাজিক স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতন করে তােলা দরকার। এরপর এই ছাত্ররাই +2 স্তরে স্বাস্থ্য বিষয়ে বৃত্তিমূলক কোর্স নিয়ে পড়াশােনা করবে। ii. কৃষি, মার্কেটিং, সমাজসেবা ইত্যাদি বিষয়েও বৃত্তিমূলক কোর্সের ব্যবস্থা থাকবে। 

iii. সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মালিকদের বৃত্তিমুখী কোর্স বা প্রতিষ্ঠান স্থাপনের দায়িত্ব নিতে হবে। iv. সমাজে বঞ্চিত গ্রামীণ ও উপজাতি ছাত্রছাত্রী এবং নারীদের চাহিদা পরিপূরণের জন্য সরকারকে উপযুক্ত বৃত্তিশিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। 

v. প্রতিবন্ধীদের জন্যও উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়ােজন। 

vi. বৃত্তিশিক্ষার কোর্সে স্নাতকদের পেশাগত বা চাকুরিতে উন্নতির জন্য।

পূর্বনির্ধারিত শর্তে সাধারণ, কারিগরি ও পেশাগত কোর্সে ভরতি হবার সুযােগ থাকবে, অবশ্যই উপযুক্ত ব্রিজকোর্স সম্পূর্ণ করার পর। 

vii. নবসাক্ষর, প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্তকারী যুবক, বিদ্যালয়-ছুট, কর্মরত। ব্যক্তি, বেকার বা আংশিক কর্মরত ব্যক্তিদের জন্য প্রথাবহির্ভূত, নমনীয় এবং চাহিদাভিত্তিক বৃত্তিমুখী কর্মসূচির ব্যবস্থা থাকবে। 

viii. এক্ষেত্রে মহিলাদের প্রতি বিশেষ নজর দিতে হবে। সাধারণ কোর্সে উচ্চমাধ্যমিক পাস করা যুবকদের জন্য তৃতীয় স্তরের শিক্ষার ব্যবস্থা থাকবে এবং এদের জন্য বৃত্তিমুখী কোর্সের ব্যবস্থা করতে হবে। উচ্চমাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য 1990 ও 1995 সালের মধ্যে যথাক্রমে 10% এবং 25% বৃত্তিমুখী কোর্সের ব্যবস্থা থাকবে। বৃত্তিমুখী কোর্সের শিক্ষার্থীদের অধিকাংশ যাতে চাকরি পায় বা স্বনিযুক্ত বৃত্তিতে প্রবেশ করে, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে।

কোর্সগুলির নিয়মিত পুনর্বিবেচনা প্রয়ােজন। কারিগরি ও ব্যবস্থাপনার শিক্ষা জাতীয় শিক্ষানীতির ষষ্ঠ অধ্যায়ে কারিগরি ও ব্যবস্থাপনার শিক্ষা সম্পর্কে আলােচিত বিষয়গুলি নীচে উল্লেখ করা হল— 

[1] কারিগরি ও ব্যবস্থাপনায় শিক্ষার পুনর্গঠন: নতুন শতাব্দীর অর্থনীতি, সামাজিক পরিবেশ, উৎপাদন ও ব্যবস্থাপনা (ম্যানেজমেন্ট) পদ্ধতি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পর্কিত জ্ঞানের বিস্ফোরণের সঙ্গে সংগতি রেখে কারিগরি ও ব্যবস্থাপনার শিক্ষা (Technical and Management Education) পুনর্গঠিত করা প্রয়ােজন। এর জন্য করণীয়গুলি হল —

i. তথ্যপ্রযুক্তিকে শক্তিশালী করা: জনসম্পদ সম্পর্কিত তথ্যসরবরাহের জন্য যে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবস্থা গড়ে উঠছে, তাকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। 

ii. প্রবহমান শিক্ষাব্যবস্থাকে উন্নত করা: আধুনিক প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে যে প্রবহমান শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে উঠছে সেটিকে আরও উন্নত করা প্রয়ােজন।

iii. বিদ্যালয় স্তর থেকে কম্পিউটার শিক্ষাব্যবস্থা চালু করা: কম্পিউটার শিক্ষা কর্মসূচিকে বিদ্যালয় স্তর থেকে শেখানাের ব্যবস্থা। করতে হবে এবং একে পেশাগত শিক্ষার অঙ্গ হিসেবে স্থান দিতে হবে।

iv. পলিটেকনিক শিক্ষাব্যবস্থাকে নমনীয় করা; Technical & management শিক্ষাসূচির মধ্যে পলিটেকনিককে নিয়ে এমন একটি নমনীয় পরিবর্তনশীল ব্যবস্থা গড়ে তােলা দরকার, যেখানে শিক্ষার্থীরা এই স্তর থেকে যে-কোনাে ক্ষেত্রে প্রবেশ করতে পারো।

v. বৃত্তিমূলক শিক্ষা সম্প্রসারণে শিক্ষক ও কর্মী নিয়ােগ : বৃত্তিমূলক শিক্ষার সম্প্রসারণ, প্রযুক্তির উন্নতি, পাঠক্রমের উন্নতি ইত্যাদির জন্য বহু শিক্ষক ও কর্মীর প্রয়ােজন। এ ব্যাপারে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়ােজন।

vi. স্বনিযুক্তি প্রকল্পকে উৎসাহিত করা : স্বনিযুক্তি প্রকল্পকে উৎসাহিত করার জন্য ডিগ্রি বা ডিপ্লোমা স্তরে ঐচ্ছিক কোর্স চালু করা প্রয়ােজন, যেখানে নিজ চেষ্টায় ব্যাবসা পরিচালনা সম্পর্কে শিক্ষাগ্রহণ করা যাবে। গ্রামাঞ্চলের পলিটেকনিকগুলির গুণগত ও সংখ্যাগত মান বৃদ্ধির প্রতি গুরুত্ব দেওয়া প্রয়ােজন। 

vii. কারিগরি বিষয়ে উন্নত গবেষণা : উচ্চতর কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিতে উন্নত গবেষণার দিকে নজর দেওয়া প্রয়ােজন | গবেষণার বিষয় হিসেবে গ্রামীণ উন্নয়নমূলক কাজ, গ্রামীণ প্রযুক্তির উদ্ভাবনা এবং উৎপাদন বৃদ্ধির বিষয়কে গুরুত্ব দিতে হবে l 

[2] সর্বস্তরের দক্ষতা ও কার্যকারিতা বৃদ্ধি: সর্বস্তরের দক্ষতা ও কার্যকারিতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে জাতীয় শিক্ষানীতি (1986)-এ বলা হয়েছে— 

i. আধুনিকতার ওপর গুরুত্বদান: জনসমাজ ও থানীয় শিল্পে সাহায্যদানের ক্ষমতা বিকাশের দিকে লক্ষ রেখে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলিতে আনুষ্ঠানিক শিক্ষাব্যবস্থা, লাইব্রেরি ও কম্পিউটারের ব্যবস্থা করতে হবে। শিক্ষকদের শিক্ষকতা ছাড়াও গবেষণা, শিক্ষা সামগ্রীর উন্নয়ন ওব্যবহার, সম্প্রসারণ, প্রশাসন ইত্যাদি বিভিন্ন কাজের সঙ্গে যুক্ত হতে হবে।

ii. মহিলাদের জন্য হােস্টেলের ব্যবস্থা; মেয়েদের জন্য হােস্টেলের ব্যবস্থা করা দরকার। এ ছাড়া খেলাধুলা, সৃষ্টিমূলক ও সাংস্কৃতিক বিভিন্ন কার্যাবলির সুবিধাকে সম্প্রসারিত করা প্রয়ােজন। 

ii. বিভিন্ন উন্নয়নমুখী কর্মসূচির মধ্যে সমন্বয়সাধন : কারিগরি শিক্ষা ও শিল্প, গ্রামীণ উন্নয়ন সংস্থা, সমাজ উন্নয়নমূলক কর্মসূচি প্রভৃতির মধ্যে সমন্বয়সাধন করা প্রয়ােজন।

Iv .মানবসম্প নবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রকের দায়িত্ব : মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রকের। দায়িত্ব হবে প্রযুক্তি, বৃত্তিমূলক ও ব্যবস্থাপনার শিক্ষাসহ সব ধরনের শিক্ষার সমন্বয়সাধন করা l

V. কারিগরি ও ব্যবস্থাপনা শিক্ষার সমন্বয় : কারিগরি ও ব্যবস্থাপনা aষার সমন্বয় ও সংহতির জন্য নিখিল ভারত কারিগরি শিক্ষা পরিষদের (AITEC) ওপর আইনগত ক্ষমতা তুলে দেওয়া হবে। সবক্ষেত্রে মূল্যায়নের জন্য একটি অ্যাক্রিডিয়েশন বাের্ড গঠন করা প্রয়ােজন।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment