জাতীয় শিক্ষানীতি (1986) সম্পর্কে তােমার মতামত ব্যক্ত করাে। Class 12 | Education | 8 Marks
উত্তর:-
জাতীয় শিক্ষানীতি সম্পর্কে মতামত শিক্ষাক্ষেত্রে জাতীয় শিক্ষানীতি এক বলিষ্ঠ পদক্ষেপ। তবে বিভিন্ন কারণে এটি। আশানুরূপ সফলতা অর্জনে এখনও সক্ষম হয়নি। এর কারণগুলি হল—
[1] সুপারিশ কার্যকরীকরণে শ্লথগতি : 1964-66 খ্রিস্টাব্দের শিক্ষা কমিশনের শিক্ষানীতিতে শিক্ষায় সকলের জন্য সমান সুযােগ, সামাজিক ন্যায়বিচার, জাতীয় সংহতি, মূল্যবােধ, সাংবিধানিক দায়িত্ব ও কর্তব্য ইত্যাদির কথা বলা হয়েছিল। এইসব নীতি বা সুপারিশের ভিত্তিতেই 1986 খ্রিস্টাব্দের জাতীয় শিক্ষানীতিতে শিশু ও নারীশিক্ষা, সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা, প্রথাবর্জিত শিক্ষা, সামাজিক শিক্ষা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নতি বিষয়ক শিক্ষা ইত্যাদির প্রতি বিশেষ নজর দেওয়ার কথা বলা হয়। বর্তমানে জাতীয় শিক্ষানীতি 1986’ রূপায়ণের কাজ চলছে। এখনও পর্যন্ত সব নীতি বা সুপারিশকে কার্যকরী করা সম্ভব হয়নি।
[2] বিদ্যালয়-ছুটদের সমস্যাসমাধানে ব্যর্থতা: ভারতীয়দের মধ্যে শিক্ষার প্রসারের ক্ষেত্রে একটি বিরাট বাধা হল বিদ্যালয়-ছুট (dropout) ছাত্রছাত্রীর দল। এই সমস্যাটি কীভাবে সমাধান করা যাবে তার কোনাে ইঙ্গিত 1986-এর জাতীয় শিক্ষানীতির Challenge of Education-এ নেই। কোঠারি কমিশনের সুপারিশ মতােই জাতীয় শিক্ষানীতি 1986 প্রথাবর্জিত শিক্ষা, দূরশিক্ষা প্রভৃতির ওপর গুরুত্ব দিয়েছে। কিন্তু বিদ্যালয় ছুটের সংখ্যা ন্যূনতম পর্যায়ে নিয়ে আসা যায়নি৷
[3] ভাষা প্রসঙ্গে স্পষ্ট নীতির অভাব: জাতীয় শিক্ষানীতি (1986)-তে যে ভাষানীতির কথা বলা হয়েছে, তাতে প্রকৃতপক্ষে 1968 সালের ভাষানীতিকে বাস্তবায়িত করার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এই নীতিতে ভাষা প্রসঙ্গে সুনির্দিষ্টভাবে তেমন কিছু আলােচনা করা হয়নি।
[4] বৃত্তিশিক্ষার আশানুরূপ প্রসারে ব্যর্থতা: 1986 খ্রিস্টাব্দের জাতীয় শিক্ষানীতিতে বলা হয়েছিল, 1995 খ্রিস্টাব্দের মধ্যে পঁচিশ শতাংশ ছাত্রছাত্রীদের বৃত্তিশিক্ষার ব্যবস্থা করা হবে। এই বিষয়টিকে কার্যকর করার জন্য ভারতের প্রায় প্রতিটি রাজ্যেই সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে বহু কারিগরি শিক্ষার প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে, তবে প্রত্যাশামতাে কাজ হয়নি৷
[5] দূরশিক্ষা এবং মুক্তশিক্ষার গুণগত মান সম্পর্কে অনিশ্চয়তা: 1986 খ্রিস্টাব্দের জাতীয় শিক্ষানীতিতে দূরশিক্ষা, মুক্তশিক্ষা প্রভৃতি বিষয়ে কতকগুলি গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ করা হয়েছিল। তারই ভিত্তিতে সারা দেশে অনেকগুলি মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠেছে। কেন্দ্রে IGNOU (Indira Gandhi National Open University), পশ্চিমবঙ্গে NSOU (Netaji Subhas Open University), রবীন্দ্র মুক্ত বিদ্যালয় এরই ফলশ্রুতি। তবে একমাত্র IGNOUছাড়া অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা ও গুণগত মান সম্পর্কে যথেষ্ট সন্দেহ আছে।
[6] অপ্রতুল মডেল স্কুল: 1986-র জাতীয় শিক্ষানীতিতে ‘মডেল স্কুল’ প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু ‘মডেল স্কুল’ সারা দেশের বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীর পরিবর্তে অল্পসংখ্যক শিক্ষার্থীকে উন্নতমানের শিক্ষাদান করলে শিক্ষাক্ষেত্রে নতুন জাতিভেদ সৃষ্টি হবে| তাই পশ্চিমবঙ্গে ‘মডেল স্কুল’ সেভাবে বিকাশ লাভ করেনি।
উপসংহারে উল্লেখ করা যায়, 1986-এর জাতীয় শিক্ষানীতিতে যেমন কিছু বিরূপ সমালােচনার ক্ষেত্র রয়েছে, তেমনই এর অনেক ভালাে দিকও রয়েছে। যেমন— শারীরশিক্ষা ও খেলাধুলার সঙ্গে যােগাসন শিক্ষার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলা হয়েছে। তাই এর ভালাে দিকগুলিকে যত ৯৯৯ সম্ভব বাস্তবায়িত করার জন্য সর্বস্তরের মানুষের সক্রিয় অংশগ্রহণ প্রয়ােজন।
1986 সালের জাতীয় শিক্ষানীতির মূল্যায়নের জন্য দুটি কমিটি গঠিত হয়—রামমূর্তি কমিটি (1990) এবং জনার্দন রেড্ডি কমিটি (1992)। এই দুটি কমিটির রিপাের্টের ভিত্তিতে জাতীয় শিক্ষানীতির (NPE-1986) কি পরিবর্তন করা হয়। এটিই হল শিক্ষানীতি 1992 বা ‘প্রােগ্রাম অব অ্যাকশন 1992 l
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।