উচ্চশিক্ষা কাকে বলে ? উচ্চশিক্ষার লক্ষ্য ও কাঠামাে সম্পর্কে কমিশনের বক্তব্য উল্লেখ করাে। উচ্চশিক্ষা সম্পর্কে কোঠারি কমিশনের সুপারিশগুলি কী?

উচ্চশিক্ষা কাকে বলে ? উচ্চশিক্ষার লক্ষ্য ও কাঠামাে সম্পর্কে কমিশনের বক্তব্য উল্লেখ করাে। উচ্চশিক্ষা সম্পর্কে কোঠারি কমিশনের সুপারিশগুলি কী? Class 12 | Education (কোঠারি কমিশন) | 8 Marks

উত্তর:-

উচ্চশিক্ষা 

উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার পর শিক্ষার্থীরা যে শিক্ষা গ্রহণ করে তাকে উচ্চশিক্ষা বলে। শিক্ষার্থীরা এই স্তরে নিজস্ব আগ্রহ ও সামর্থ্য অনুযায়ী শিক্ষাগ্রহণে অগ্রসর হয়। 

উচ্চশিক্ষার লক্ষ্য ও কাঠামাে সম্পর্কে কমিশনের বক্তব্য

শিক্ষার অন্যান্য স্তরের মতাে উচ্চশিক্ষার লক্ষ্য ও কাঠামাে কী হবে, সে সম্পর্কেও কোঠারি কমিশনের রিপাের্টে উল্লেখ করা হয়েছে।

কমিশন উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত লক্ষ্যগুলি স্থির করে— 

[1] উন্নত জ্ঞানের সন্ধান, দৃঢ় ও নির্ভীকভাবে সত্যের সন্ধানে নিয়ােজিত থাকা এবং প্রাচীনকালের জ্ঞান ও বিদ্যার্জন নতুন আবিষ্কারের আলােকে ব্যাখ্যা করা৷ 

[2] জীবনের সর্বক্ষেত্রে নির্ভুল নেতৃত্ব গ্রহণের শিক্ষা দেওয়া, প্রতিভাবানকে খুঁজে বের করা, শিক্ষার্থীদের দৈহিক ও মানসিক বিকাশের সঙ্গে নৈতিক ও বৌদ্ধিক দিক থেকে সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তুলতে সাহায্য করা। শিক্ষাকে সমাজের সর্বস্তরে ছড়িয়ে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বৈষম্য দূর করে সামাজিক ন্যায় ও ঐক্য স্থাপন করা। 

[3] জাতীয় চেতনায় উদ্বুদ্ধ করা৷ 

[4] উচ্চশিক্ষার ও গবেষণার মানােন্নয়ন। 

কাঠামাে 

উচ্চশিক্ষাস্তর হবে তিন ধরনের—

[1] প্রথম ডিগ্রি স্তর (স্নাতক স্তর), 

[2] দ্বিতীয় ডিগ্রি স্তর (স্নাতকোত্তর স্তর) এবং 

[3] গবেষণা স্তর। 

[1] প্রথম ডিগ্রি স্তর: এই স্তরের শিক্ষা হবে তিন বছরের। শিক্ষার্থীর বয়স হবে 18-21 বছর পর্যন্ত। 

[2] দ্বিতীয় ডিগ্রি স্তর: এই স্তরের শিক্ষা হবে দু বছরের। শিক্ষার্থীর বয়স হবে 21-23 বছর। কোনাে কোনাে বিশ্ববিদ্যালয় বিশেষ বিষয়ে 3 বছরের MA, MSc, MCom ডিগ্রি কোর্স চালু করতে পারে। এইসব কোর্সের অনার্স অথবা যে-কোনাে নামকরণ করা যেতে পারে। এ ছাড়াও কমিশন বলে, কোনাে কোনাে নির্বাচিত বিষয়ে বিশেষ শিক্ষাদানের জন্য 4 বছরের প্রথম ডিগ্রি কোর্স চালু করা যুক্তিযুক্ত। এই নতুন কোর্সের প্রথম বছরের পাঠক্রম তিন বছরের ডিগ্রি কোর্সের প্রথম বছরের পাঠক্রমের মতাে হবে। 

[3] গবেষণা স্তর: স্নাতকোত্তরের শেষে থাকবে গবেষণা স্তর। এক্ষেত্রে উচ্চশিক্ষা স্তরে কমিশনের ‘Major University’ সংক্রান্ত সুপারিশটি উল্লেখযােগ্য। এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে প্রথম শ্রেণির স্নাতকোত্তর পঠন ও গবেষণা হবে। এদের মান হবে বিশ্বের যে কোনাে উন্নতমানের বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে তুলনীয়। এ ছাড়া প্রতিটি মেজর ইউনিভারসিটিতে থাকবে কতকগুলি অ্যাডভান্সড সেন্টার। এই কেন্দ্রগুলি একে অপরকে বিভিন্ন দিকে শক্তিশালী করার চেষ্টা করবে এবং এরা বিভিন্ন ধরনের ‘ইন্টার-ডিসিপ্লিনারি’ (Inter disciplinary) গবেষণা করবে। সারা দেশে এই ধরনের 50টি কেন্দ্র গড়ে তােলা দরকার। এদের মধ্যে অন্তত একটি বিভিন্ন বিষয়ের শিক্ষা-সংক্রান্ত গবেষণার সঙ্গে যুক্ত হবে। এ ছাড়াও এগুলিতে কৃষি, কারিগরি ও ডাক্তারি শাখার গবেষণার ব্যবস্থা থাকবে। বিজ্ঞান ও গণিতের জন্য ‘অ্যাডভান্সড স্টাডি সেন্টার’ (Advanced Study Centre)-এর কথা বলা হয়েছে। 

উচ্চশিক্ষা সম্পর্কে কমিশনের সুপারিশ 

উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে কমিশন শিক্ষার সময়কাল, ভাষাশিক্ষা, পাঠক্রমের পুনর্নবীকরণ প্রভৃতি বিষয়ে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ করেছে। এগুলি সম্পর্কে নীচে আলােচনা করা হল

[1] সময়কাল: প্রথম ডিগ্রি স্তর তিন বছরের কম হবে না। দ্বিতীয় ডিগ্রি স্তরের স্থিতিকাল হবে দুই বা তিন বছর। 

[2] ভাষাশিক্ষা: উচ্চশিক্ষার বিভিন্ন স্তরে ভাষাশিক্ষা সম্পর্কে কমিশনের সুপারিশগুলি হল— 

i. উচ্চশিক্ষার স্তরের কোনাে ক্ষেত্রে ভাষাশিক্ষা বাধ্যতামূলক নয়। তবে আঞ্চলিক ভারতীয় ভাষা বা প্রাচীন ভাষা ঐচ্ছিক বিষয় হিসেবে উচ্চশিক্ষার স্তরে থাকবে। 

ii. বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে ধীরে ধীরে আঞ্চলিক ভাষায় পড়ানাের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রথম দিকে প্রথম ডিগ্রি স্তরে আঞ্চলিক ভাষায় পড়ানাের ব্যবস্থা করা যেতে পারে, তবে দ্বিতীয় ডিগ্রি স্তরে শিক্ষার মাধ্যম হবে ইংরেজি।

উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে প্রতিটি শিক্ষককে যথাসম্ভব দুটি ভাষা জানা দরকার (আঞ্চলিক ভাষা ও ইংরেজি), দ্বিতীয় ডিগ্রি স্তরের শিক্ষার্থীদর দুটি ভাষা জানা দরকার। 

iv. এই স্তরে ইংরেজি ভাষা ছাড়াও অন্যান্য বিদেশি ভাষা, বিশেষ করে রাশিয়ান ভাষা শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। 

[3] পাঠক্রমের পুনর্নবীকরণ: মাস্টার্স ডিগ্রি স্তরে পাঠক্রমের পুনর্নবীকরণ প্রয়ােজন। পাঠক্রম হওয়া উচিত ‘জেনেরাল বেস্ড’ (General based) অথবা একটি বা দুটি বিশেষ ক্ষেত্রে ‘ইন্টারভিউইং ট্রেনিং’ (Interviewing training)-এর ব্যবস্থা প্রয়ােজন। 

[4] বিষয় নির্বাচনে শিথিলতা: প্রথম ডিগ্রি স্তরে কলা, বিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞান কোর্সে বিষয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে শিথিলতা প্রয়ােজন। 

[5] বিজ্ঞানশিক্ষায় ব্যাবহারিক কাজের গুরুত্ব: বিজ্ঞান-শিক্ষার ক্ষেত্রে তাত্ত্বিক ও ব্যাবহারিক কাজের মধ্যে সমতা বিধান করা প্রয়ােজন। পদার্থবিদ্যা ও রসায়ন বিষয়ের ক্ষেত্রে পরীক্ষামূলক কাজের প্রতি দৃষ্টি আরােপ করতে হবে। জীবনবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে ‘মাইক্রো অরগানিজম’ অধ্যয়ন এবং সে ক্ষেত্রে ওষুধের ভূমিকার ওপর অধিক গুরুত্ব দেওয়া প্রয়ােজন। জ্যোর্তির্বিদ্যায় (astronomy) ও জ্যোতির্পদার্থবিদ্যায় (astrophysics) গুরুত্ব দেওয়া দরকার।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment