শিক্ষায় শিক্ষাপ্রযুক্তির অবদান সংক্ষেপে আলােচনা করাে
অথবা, শিক্ষাপ্রযুক্তিবিদ্যার যে-কোনাে চারটি সুবিধা সংক্ষেপে আলােচনা করাে। Class 12 | Education (শিক্ষায় প্রযুক্তির ভূমিকা) | 4 Marks
উত্তর:-
শিক্ষায় শিক্ষাপ্রযুক্তির অবদান
সামগ্রিকভাবে শিক্ষাপ্রক্রিয়ার উৎকর্ষসাধনে শিক্ষাপ্রযুক্তির গুরুত্বপূর্ণ অবদান বিশ্বের সর্বত্রই স্বীকৃত। শুধু তাই নয়, বর্তমানে শিক্ষাপ্রযুক্তি ক্রমশ শিক্ষাব্যবস্থায় অপরিহার্য হয়ে উঠছে। এখানে শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষাপ্রযুক্তির অবদান সম্পর্কে সংক্ষেপে আলােচনা করা হল—
[1] শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এবং শিক্ষাপ্রযুক্তি: ব্যক্তি ও সমাজের চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নির্ধারণে শিক্ষাপ্রযুক্তি বিশেষ ভূমিকা পালন করে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, বর্তমানে সর্বত্র কম্পিউটার ব্যবহৃত হচ্ছে। সেই কারণেই প্রাথমিক স্তর থেকেই কম্পিউটার সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন শিক্ষার অন্যতম উদ্দেশ্য হিসেবে বিবেচিত হয়।
[2] পাঠক্রম পরিকল্পনা এবং শিক্ষাপ্রযুক্তি: শিক্ষার লক্ষ্য অর্জনের জন্য উপযুক্ত পাঠক্রম পরিকল্পনায় শিক্ষাপ্রযুক্তি সাহায্য করে। বর্তমান পাঠক্রম পরিকল্পনায় যে বিভিন্ন মডেলের কথা বলা হয় (যেমন—টাবার মডেল, লাউটন মডেল ইত্যাদি) তা শিক্ষাপ্রযুক্তির অবদান।
[3] শিক্ষা-শিখন প্রক্রিয়া এবং শিক্ষাপ্রযুক্তি: শিক্ষা-শিক্ষণ প্রক্রিয়ার উৎকর্ষসাধনে শিক্ষাপ্রযুক্তির বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা দেখা যায়। নীচে এগুলি উল্লেখ করা হল—
i. ব্যক্তিভিত্তিক শিক্ষণ: ব্যক্তিভিত্তিক শিক্ষণে শিক্ষাপ্রযুক্তি আবিষ্কৃত বিভিন্ন কৌশল, যেমন— প্রােগ্রামভিত্তিক শিখন, শিখন যত্ন, নেটওয়ার্কের মাধ্যমে জ্ঞানার্জন ইত্যাদি বিশেষভাবে সাহায্য করে।
ii. শিক্ষাপ্রযুক্তি শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী উভয়েরই সহায়ক: একদিকে যেমন প্রযুক্তিভিত্তিক শিক্ষা, যথা—স্লাইড, ওভার হেড প্রােজেক্টর, ক্লোজড সার্কিট টিভি ইত্যাদির সাহায্যে উন্নতমানের পাঠদান করা যায়, তেমনই শিক্ষার্থীরাও পাঠদানের বিষয়টিকে অনুধাবন করতে এবং দীর্ঘ সময়ের জন্য মনে রাখতে সক্ষম হয়।
iii. শিক্ষণ মডেল: বর্তমানে শিক্ষা মনস্তত্ত্ববিদগণ শিক্ষণের একাধিক মডেল উদ্ভাবন করেছেন, যেমন—এনকোয়ারি মডেল, কনসেপ্ট অ্যাটেনমেন্ট মডেল ইত্যাদি। এই ধরনের মডেলের সাহায্যে পাঠদান আরও বিজ্ঞানসম্মত এবং কার্যকরী বলে প্রমাণিত হয়েছে।
iv. শিক্ষণ দক্ষতার বিকাশ: শিক্ষা মনস্তত্ত্ববিদগণ শিক্ষাদানে কতকগুলি
দক্ষতা নির্দিষ্ট করেছেন, যেমন—ব্যাখ্যাদান, প্রশ্নকরণ, উদাহরণ দান, ব্ল্যাকবাের্ডের ব্যবহার ইত্যাদি। এই দক্ষতাগুলি বিকাশে যে অনুশিক্ষণ কৌশলের সাহায্য নেওয়া হয়, তা শিক্ষাপ্রযুক্তির অবদান।
[4] মূল্যায়ন: মূল্যায়ন শিক্ষাপ্রক্রিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তর। এই মূল্যায়নের ক্ষেত্রে শিক্ষাপ্রযুক্তি বিশেষভাবে সাহায্য করে। যেমন—বহুবিধ প্রশ্নের (MCQ) নম্বর দান, মার্কশিট প্রস্তুত, নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটের’ (website) মাধ্যমে ফল প্রকাশ ইত্যাদি।
[5] শিক্ষা প্রশাসন এবং শিক্ষাপ্রযুক্তি: বর্তমানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন প্রশাসনিক কর্মসূচি (যেমন—নির্দিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বিস্তার, ভরতির আবেদনপত্র, ভরতির যােগ্যতা, অর্জনকারীদের তালিকা ইত্যাদি) নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়।
[6] পাঠাগার এবং শিক্ষাপ্রযুক্তি: বর্তমানে প্রায় প্রতিটি কলেজের পাঠাগার শিক্ষাপ্রযুক্তির সাহায্য গ্রহণ করে।
উপরােক্ত আলােচনার প্রেক্ষিতে বলা যেতে পারে যে, শিক্ষাক্ষেত্রে শিক্ষাপ্রযুক্তির ভূমিকা কেবলমাত্র গুরুত্বপূর্ণ নয়, ক্রমশ অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। এই কারণেই একাদশ শিক্ষা পরিকল্পনায় বিদ্যালয়ে ইনফরমেশন কমিউনিকেশন টেকনােলজি’র (ICT) ওপর বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।