অপসারণের সূত্রগুলিকে ব্যাখ্যা করাে। Class 12 | Philosophy (মিলের পরিক্ষণমূলক পদ্ধতি) 8 Marks
উত্তর:-
অপসারণের সূত্রাবলি
যুক্তিবিজ্ঞানে আমরা প্রথমদিকে তিনটি অপসারণের সূত্রের পরিচয় পাই। কিন্তু পরবর্তী পর্যায়ে তর্কবিদ যােসেফ (Joseph) এগুলির সঙ্গে আরও একটি অপসারণের সূত্র যােগ করেন। এর ফলে অপসারণের ক্ষেত্রে মােট চারটি সূত্র দেখা যায়। এই সমস্ত সূত্রগুলিকে পরপর উল্লেখ করা হল।
প্রথম সুত্র: পূর্ববর্তী কোনাে ঘটনাকে যদি অপসারণ করা হয় এবং তার জন্য কার্যটি ঘটার ক্ষেত্রে কোনাে অসুবিধা না হয়, তাহলে সেই পূর্ববর্তী ঘটনাটি কারণের অন্তর্ভুক্ত নয় (whatever antecedent can be left out without prejudice to the effect, can be no part of the cause) কারণের গুণগত লক্ষণ থেকে অপসারণের সূত্রটি পাওয়া যায়।
ব্যাখ্যা: কার্যকারণ নিয়মের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা জানি যে, প্রত্যেকটি কার্যই কোনাে না কোনাে কারণ দ্বারা উৎপন্ন। কারণটি যদি হাজির থাকে, তাহলে কার্যটিও হাজির হয়। আর কারণটি অনুপস্থিত থাকলে কার্যটিও অদৃশ্য হয়। অর্থাৎ, কারণটি উপস্থিত নেই, অথচ কার্যটি উপস্থিত — এমন কখনােই হতে পারে না। অতএব আমরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারি যে, পূর্ববর্তী ঘটনার কোনাে অংশকে যদি অপসারণ বা বর্জন করা সত্ত্বেও কার্যটি সংঘটিত হয়, তাহলে এরূপ কোনাে পূর্ববতী ঘটনাকে কারণ বা কারণের একটি অংশরূপে দাবি করা যায় না।
দ্বিতীয় সূত্র: কোনাে একটি পূর্ববর্তী ঘটনাকে অপসারণ করার ফলে যদি অনুবর্তী কোনাে ঘটনাও অপসারিত হয় তাহলে পূর্ববর্তী ঘটনাটি অনুবর্তী ঘটনাটির কারণ বা কারণের অংশরূপে বিবেচিত হবে (when an antecedent cannot be left out without the consequent disappearing such antecedent must be the cause, or part of the cause) এই সুত্রটিও কারণের গুণগত লক্ষণ থেকে নিঃসৃত।
ব্যাখ্যা: অপসারণের এই সুত্রটিও কার্যকারণ নিয়ম থেকে প্রাপ্ত। কার্যকারণ সূত্র অনুযায়ী দাবি করা হয় যে, কোনাে কার্যের সিদ্ধির জন্য কারণের উপস্থিতি একান্ত প্রয়ােজন। এক্ষেত্রে, যদি কার্যের পূর্ববর্তী ঘটনাসমূহের মধ্যে একটি ঘটনাকে অপসারণ করলে কার্য উৎপত্তিতে বাধা আসে, তাহলে সেই ঘটনার সঙ্গে কার্যটির একটি কার্যকারণ সম্পর্ক আছে। অথবা বলা যেতে পারে যে, পূর্ববর্তী কোনাে ঘটনাকে যদি বর্জন করা হয় এবং তার ফলে কার্যটিও যদি বর্জিত হয়, তাহলে কার্যটির সঙ্গে ওই পূর্ববর্তী ঘটনার কোনাে-না-কোনাে প্রকার কার্যকারণ সম্বন্ধ থাকবেই।
তৃতীয় সূত্র: কোনাে পূর্ববর্তী একটি ঘটনার বাড়া কমার সঙ্গে অনুবর্তী কোনাে একটি ঘটনারও বাড়াকমা ঘটে, তাহলে সিদ্ধান্ত করা যেতে পারে যে, ঘটনাদ্বয়ের মধ্যে একটি কার্যকারণ সম্পর্ক বিদ্যমান (an antecedent and a consequent increasing and decreasing together in numerical concomitance, are to be held as cause and effect)। সূত্রটি কারণের পরিমাণগত লক্ষণেই নিহিত।
ব্যাখ্যা: কার্যকারণের পরিমাণগত লক্ষণের মধ্যেই অপসারণের এই সূত্রটি নিহিত। আমরা জানি যে, পরিমাণের দিক থেকে কারণ হল কার্যের সমান। কার্য তাই আর কিছুই নয়, কারণের একটি রুপান্তরিত অবস্থামাত্র। সুতরাং কারণের মধ্যে যদি কোনােরকম পরিমাণগত পরিবর্তন দেখা যায়, তবে একইরকম পরিবর্তন দেখা যায়। কার্যের মধ্যেও এরই পরিপ্রেক্ষিতে দাবি করা যায় যে, একটি ঘটনার কোনাে পরিমাণগত পরিবর্তন যদি অপর কোনাে ঘটনার পরিমাণগত পরিবর্তনকে সূচিত করে, তবে উভয় ঘটনার মধ্যে একটি কার্যকারণ সম্বন্ধ আছে।
চতুর্থ সূত্র: অপসারণের এই তিনটি সূত্র ছাড়াও তর্কবিজ্ঞানী যােসেফ (Joseph) একটি অতিরিক্ত অপসারণ সূত্রের উল্লেখ করেছেন। এই সূত্রটি হল— কোনাে একটি ঘটনাকে যদি অপর ঘটনার কারণ বলে জানা থাকে, তাহলে সেই ঘটনাটিকে আর অন্য কোনাে ঘটনার বা কার্যের কারণরূপে উল্লেখ করা যাবে না (nothing is a cause of phenomenon which is known to be the cause of a different phenomenon)।
ব্যাখ্যা: অপসারণের এই সূত্রটিকে একটি অতিরিক্ত সূত্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। কার্যকারণ সম্পর্ক নির্ণয়ের ক্ষেত্রে প্রথম তিনটি অপসারণের সূত্রকে মৌলিকরূপে গণ্য করা হয়েছে। কারণ, এই তিনটি সূত্র ছাড়া মিলের পদ্ধতিগুলােকে কখনােই ব্যাখ্যা করা যায় না। মিলের পদ্ধতিগুলি তাই একান্তভাবেই এই তিনটি অপসারণ সূত্রের ওপর নির্ভরশীল। তর্কবিদ বেন (Bain) অপসারণের এই সূত্রটিকে অতিরিক্ত একটি সূত্র হিসেবে উল্লেখ করেছেন, যার ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে পরিশেষ পদ্ধতিটি।
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।