দৃষ্টান্তসহ অন্বয়ী পদ্ধতির ব্যাখ্যা করাে। Class 12 | Philosophy (মিলের পরিক্ষণমূলক পদ্ধতি) 8 Marks
উত্তর:-
অপসারণের প্রথম সুত্রের ওপর প্রতিষ্ঠিত অন্বয়ী পদ্ধতি
অন্বয়ী পদ্ধতিটি অপসারণের প্রথম সূত্রের ওপর প্রতিষ্ঠিত। কারণ, অন্বয়ী পদ্ধতি অনুসারে আমরা দেখি যে, পূর্ববর্তী ঘটনার একটা নির্দিষ্ট অংশ ছাড়া আর অন্যান্য সমস্ত অংশকে বাদ দিলেও কার্যটি ঘটার ক্ষেত্রে কোনাে অসুবিধা হয় না। সেক্ষেত্রে আমরা তাই বলতে পারি যে, অপসারিত ঘটনাগুলির কোনােটিই কার্যের কারণ নয়। এই পদ্ধতিটিকে একটি মৌলিক পদ্ধতিরূপে গণ্য করা হয়। কারণ, এই পদ্ধতিটির ওপর আবার অন্বয় ব্যতিরেকী পদ্ধতিটি নির্ভরশীল। মিল-এর সংজ্ঞা তর্কবিজ্ঞানী মিল (Mill) অন্বয়ী পদ্ধতির সূত্রটিকে যেভাবে উপস্থাপিত করেছেন, তা হল ‘আলােচ্য কোনাে অনুসন্ধানমূলক ঘটনার দুই বা ততােধিক দৃষ্টান্তে যদি অন্য একটি ব্যাপার সর্বদাই উপস্থিত থাকে, তাহলে বুঝতে হবে যে, ওই ব্যাপারটি বিচার্যঘটনার কারণ বা কার্য বলে বিবেচিত। অর্থাৎ, যদি দুটি ঘটনাকে বিভিন্ন দৃষ্টান্তে একইসঙ্গে বারবার থাকতে দেখা যায়, তাহলে ওই উপস্থিতির মিল দেখে বলতে পারা যায় যে, ওই দুটি ঘটনা কার্যকারণ সম্বন্ধে আবদ্ধ। মিলের মতে, অন্বয়ী পদ্ধতিটি প্রথম অপসারণের ওপর প্রতিষ্ঠিত। এই পদ্ধতিটি যে অপসারণের সূত্রের ওপর প্রতিষ্ঠিত, তা হল পূর্ববর্তী কোনাে ঘটনাকে যদি অপসারণ করা হয়, এবং তার জন্য কার্যটি ঘটনার ক্ষেত্রে যদি কোনো অসুবিধা না হয়, তাহলে সেই পূর্ববর্তী ঘটনাটি কারণের অন্তভুক্ত নয়। অর্থাৎ, আলােচ্য ঘটনার সঙ্গে যদি সবসময়ই কোনাে একটি ব্যাপার উপস্থিত থাকে, তাহলে আলােচ্য ঘটনাটির সঙ্গে ওই ব্যাপারটির একটি কার্যকারণ সম্পর্ক আছে বলা যায়।
মিলের সংজ্ঞার সাপেক্ষে কার্যকারণের ব্যাখ্যা:
ধরা যাক, আমরা কোনাে একটি ঘটনার কারণ বা কার্যকে আবিষ্কার করতে চাই। ঘটনাটি যদি একটি কার্য হয়, তাহলে তার কারণটিকে আমরা আবিষ্কার করতে চাই। আর ঘটনাটি যদি কারণ হয়, তাহলে তার কার্যটিকে আমরা জানতে চাই। এক্ষেত্রে আমরা অন্বয়ী পদ্ধতি প্রয়ােগ করে কারণ নামক ঘটনার কার্যটিকে, অথবা কার্য নামক ঘটনার কারণটিকে আবিষ্কার করতে চাই। সেজন্য আমরা দুই বা ততােধিক দৃষ্টান্ত সংগ্রহ করি, অর্থাৎ পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে আমরা এমন কতকগুলি দৃষ্টান্ত গ্রহণ করি, যেখানে প্রত্যেকটি দৃষ্টান্তেই এই ব্যাপারটি সাধারণভাবে উপস্থিত থাকলেও অন্য এমন বিষয় বা ব্যাপার সেখানে থাকতে পারে — যা সমস্ত দৃষ্টান্তে সাধারণ ভাবে উপস্থিত নয়। এজন্যই সাধারণ পূর্ববর্তী ঘটনাকে অনুবর্তী ঘটনার সঙ্গে কার্যকারণ সম্পর্কে আবদ্ধ বলে মনে করা হয়।
সাংকেতিক উদাহরণ:
পূর্ববর্তী ঘটনা (কারণ) | অনুবর্তী ঘটনা (কার্য) |
ABCD | abcd |
ABDE | abde |
AFMP | afmp |
∴ A হল a-এর কারণ, অথবা a হল A-এর কার্য।
ব্যাখ্যা: এক্ষেত্রে A হল একটি কারণ ঘটনা, এবং a হল একটি কার্য ঘটনা। a নামক কার্য ঘটনার কারণ নির্ণয় করার জন্য আমরা একাধিক দৃষ্টান্ত পর্যবেক্ষণের সাহায্যে সংগ্রহ করলাম। এই সমস্ত দৃষ্টান্তগুলিতে অগ্রবর্তী বা পূর্ববতী ঘটনা হিসেবে A, B, C, D, E, F, M, P প্রভৃতি উপস্থিত। কিন্তু এগুলির কোনাে কোনােটি এক-একটি দৃষ্টান্তে অনুপস্থিত। একমাত্র একটি ঘটনাই তথা A সকল দৃষ্টান্তেই উপস্থিত। অর্থাৎ, A নামক ঘটনাটি ছাড়া আর বাদবাকি ঘটনাগুলি তথা B, C, D, E, F, M, P প্রভৃতি ঘটনাগুলি না থাকলেও, অনুবর্তী ঘটনা হিসেবে a উপস্থিত। সুতরাং এ থেকে সিদ্ধান্ত করা যেতে পারে যে, A নামক ঘটনাটি a-এর কারণ বা a নামক ঘটনাটি A এর কার্য।
বাস্তব উদাহরণ:
পূর্ববর্তী ঘটনা (কারণ) | অনুবতী ঘটনা (কাৰ্য) |
মশার কামড় + পচাজল + দুর্গন্ধ | ম্যালেরিয়া জ্বর + সর্দি + ঝিমুনি |
মশার কামড় + পরিষ্কার জল + স্যাতসেতে আবহাওয়া | ম্যালেরিয়া জ্বর + মাথাধরা + অনুৎসাহ |
মশার কামড় + গরম আবহাওয়া + কীটনাশক স্প্রে | ম্যালেরিয়া জ্বর + কাশি + সর্দি |
∴ মশার কামড়ই হল ম্যালেরিয়া জ্বরের কারণ।
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।