নিরপেক্ষ ন্যায়ের প্রথম দুটি নিয়ম লঙ্ঘনে কী কী দোষের উদ্ভব হয় তা উদাহরণসহ আলােচনা করাে

নিরপেক্ষ ন্যায়ের প্রথম দুটি নিয়ম লঙ্ঘনে কী কী দোষের উদ্ভব হয় তা উদাহরণসহ আলােচনা করাে Class 12 | Education (নিরপেক্ষ ন্যায়) | 8 Marks

উত্তর:-

নিরপেক্ষ ন্যায়ের প্রথম দুটি নিয়ম লঙ্ঘনজনিত দোষ

নিরপেক্ষ ন্যায়ের ক্ষেত্রে যে দশটি সাধারণ নিয়মের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, তাদের মধ্যে প্রথম পাঁচটি নিয়মকে লঙ্ঘন করলে বিভিন্ন দোষের উদ্ভব হয়। প্রথম ও দ্বিতীয় নিয়মকে লঙ্ঘন করলে কোন্ দোষের উদ্ভব হয়—সেগুলিকে পরপর উল্লেখ করে, উদাহরণসহ একে একে নীচে আলােচনা করা হল— 

প্রথম নিয়মের লঙ্ঘনজনিত দোষ

 নিরপেক্ষ ন্যায়ের প্রথম নিয়মটিতে বলা হয়েছে যে, প্রত্যেকটি ন্যায়ে কেবলমাত্র তিনটি বচনই থাকবে, তার কমও নয় আবার বেশিও নয়। এই নিয়মটিকে লঙ্ঘন করলে, দুটি দোষের উদ্ভব হয়। এই দুটি দোষের একটি

হল অমাধ্যম অনুমানজনিত দোষ (fallacy of immediate inference) এবং অপরটি হল ন্যায় শৃঙ্খলজনিত দেষি (fallacy of train of syllogism)। এই দুটি দোষকে উদাহরণসহ পৃথকভাবে আলোচনা করা হল। 

[1] আমাধ্যম অনুমানজনিত দোষ; ন্যায় অনুমানের ক্ষেত্রে তিনটি বচনের পরিবর্তে যদি তার কম অর্থাৎ, দুটি বচনের উল্লেখ করা হয়, তাহলে যে দোষের উদ্ভব হয়, তাকেই বলা হয় অমাধ্যম অনুমানজনিত দেষি। কারণ, এরূপ ক্ষেত্রে দুটি বচনের মধ্যে একটি হল যুক্তিবক্যি এবং অপরটি হল সিদ্ধান্ত | এরূপ অনুমানের ক্ষেত্রে হেতুপদের কোনাে ভূমিকাই থাকে না।

উদাহরণ

কোনাে কোনো গ্রন্থ হয় উত্তেজক (I) —–| যুক্তিবাক্য

.:. কোনাে কোনাে উত্তেজক বিষয় হয় গ্রন্থ (I) —–সিদ্ধান্ত

ব্যাখ্যা

এখানে একটিমাত্র যুক্তিবাক্য থেকে সিদ্ধান্তটি নিঃসৃত হয়েছে বলে। একে মাধ্যম অনুমানের মর্যাদা দেওয়া যায় না|অরন্যায় অনুমান হল একধরনের মাধ্যম অনুমান | সুতরাং এক্ষেত্রে অনুমানটি অমাধ্যমরূপে গণ্য হওয়ায় উপরিউক্ত দোষের উদ্ভব ঘটেছে  

[2] ন্যায় শৃঙ্খলজনিত দোষ: আবার কোনাে ন্যায় অনুমানের ক্ষেত্রে তিনটি বচনের পরিবর্তে যদি ততােধিক বচন দেখা যায়, তাহলে যে দোষের উদ্ভব হয়, সেই দোষকেই বলা হয় ন্যায় শৃঙ্খলজনিত দোষ।

উদাহরণ

পর্বতটি হয় অগ্নিযুক্ত (A) 

পর্বতটি হয় ধোঁয়াযুক্ত (A)

সকল ধোয়াযুক্ত ক্ষেত্র হয় অগ্নিযুক্ত ক্ষেত্র (A)

পর্বতটি হয় ধোয়াযুক্ত ক্ষেত্র (A)

 .:. পর্বতটি হয় অগ্নিযুক্ত ক্ষেত্র (A)

ব্যাখ্যা

এক্ষেত্রে দেখা যায় যে, ন্যায় অনুমানটি গঠিত হয়েছে পাঁচটি বচন । সহযােগে, তিনটি বচন সহযােগে নয়। সুতরাং এরূপ ন্যায়টিকে যথার্থ ন্যায়রূপে উল্লেখ না করে, ন্যায় শৃঙ্খল (train of syllogism) রূপেই | গণ্য করা হয়। কারণ এখানে প্রথম তিনটিবচনের সহযােগে একপ্রকার, এবং শেষের তিনটির সহযােগে আর একপ্রকার ন্যায় গঠিত হতে । পারে। এরূপন্যায়টি তাই একাধিক ন্যায়ের যৌথ রূপ বলে এখানে উক্ত | দোষের উদ্ভব হয়েছে। 

দ্বিতীয় নিয়মের লঙ্ঘনজনিত দোষ

ন্যায়ের দ্বিতীয় নিয়মে উল্লেখ করা হয়েছে যে, একটি ন্যায় অনুমানে তিনটি, কেবলমাত্র তিনটি পদই থাকবে। এরূপ নিয়মটিকে লঙ্ঘন করলে যে দোষের উদ্ভব হয়, তাকে বলা হয় চারিপদ বা চতুষ্পদঘটিত দোষ (fallacy of four terms)।

উদাহরণ

মানুষ হয় পাপ সৃষ্টিকারী (A) ——- প্রধান যুক্তিবাক্য

ঈশ্বর হন মানুষ সৃষ্টিকারী (A) ——- অপ্রধান যুক্তিবাক্য 

ঈশ্বর হন পাপ সৃষ্টিকারী (A) ——- সিদ্ধান্ত

ব্যাখ্যা

এরূপ ন্যায় অনুমানটিতে দেখা যায় যে, তিনটি পদের পরিবর্তে চারটি পদের অবস্থান আছে। এই চারটি পদ হল যথাক্রমে মানুষ, মানুষ সৃষ্টিকারী, ঈশ্বর এবং পাপ সৃষ্টিকারী। সুতরাং এরূপ ন্যায় অনুমানটি উক্ত দোষে দুষ্ট।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment