আমাদের দেশ
ভূমিকা : ‘চন্দ্রগুপ্ত’ নাটকে আলেকজান্ডার সেলুকসকে বলেছিলেন— ‘সত্য সেলুকস, কী বিচিত্র এই দেশ!’ ভারতের ভূপ্রকৃতি নানা বৈচিত্র্যে ভরা। উত্তরে ধ্যানগম্ভীর হিমালয় পর্বতমালা চেয়ে আছে, তিন দিকে অন্তত জলরাশি নিয়ে ‘সাগর লুটায় ভারতমাতার পায়ে।’ কবিগুরু বলেছেন —
“ধ্যানগম্ভীর এই যে ভূধর,
নদীজপমালা ধৃত প্রান্তর”
বৈচিত্র্য: ভারতের প্রকৃতি বিচিত্রের রঙ্গশাখা। এর কোথাও গ্রীষ্মের খরতাপ, কোথাও শীতের প্রকোপ, কোথাও গভীর শ্যামল অরণ্যানী, কোথাও বিস্তীর্ণ মরুভূমি, কোথাও গগনচুম্বী পর্বতশ্রেণি, কোথাও-বা নদীমাতৃক সমভূমি। সুজলা-সুফলা-শস্যশ্যামলা ভারত হল প্রকৃতির লীলা নিকেতন। বহু ভাষাভাষী, নানা ধর্মাচারী মানুষের দেশ হল এই ভারত। পৃথিবীর নানা জাতির স্রোতধারা এসে মিশেছে ভারতভূমিতে। রবীন্দ্রনাথ ভারতকে ‘মহামানবের সাগরতীর’ বলেছেন। এখানে প্রকৃতির মতােই বৈচিত্র্য মানবজাতির। যুগে যুগে দেশ-দেশান্তর থেকে বহু বর্ণ-ধর্ম-জাতির মানুষ এসেছে এই দেশে, তার এক দেহে হল লীন। তাদের সবাকার মিলনভূমি আমাদের ভারতভূমি—এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না।
ঐতিহ্য: বহু নদনদী ভারতভূমিকে করেছে উর্বরা l স্বল্প পরিশ্রমে এখানে ফসল ফলে। তাই এখানকার মানুষ প্রাচীনকাল থেকে খাদ্য উৎপাদনের চর্চায় মন না-দিয়ে জ্ঞান-বিজ্ঞান-দর্শনের চর্চা করে আসছে। ভারতের তপােবন থেকেই পৃথিবীর প্রথম সভ্যতার উন্মেষ হয়েছিল। মুনিঋষিরা শান্তির বাণী ছড়িয়ে দিয়েছিলেন দেশ-দেশান্তরে ভারতের ওই তপােতীর্থ থেকে।
বহির্বিশ্বে আমাদের কথা : প্রাচীন ভারত বহির্বিশ্বে জ্ঞান-বিস্তার ও বাণিজ্যে প্রভাব ফেলেছিল। বালি দ্বীপ থেকে গ্রিস সর্বত্র ভারতের বাণিজ্যতরি পৌঁছে ছিল l এ যুগেও বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশের সঙ্গে আমাদের সাংস্কৃতিক ও বাণিজ্য চুক্তি হয়েছে। বিশ্বের উন্নত দেশগুলিতে ভারতীয় মেধা ও প্রতিভা আজ সর্বাগ্রে স্বীকৃতি পেয়েছে।
স্বতন্ত্র সংস্কৃতি ও ঐক্য : প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক কারণে ভারতে ছােটো-বড়াে অনেকগুলি রাজ্য গড়ে উঠেছে। প্রত্যেক রাজ্যের স্বতন্ত্র সংস্কৃতি। আচার-আচরণে, আহারে-বিহারে, পােশাক-পরিচ্ছদে প্রত্যেকটি রাজ্যের মানুষ স্বতন্ত্র। গিরিপথ এবং সমুদ্রপথে বহু বিদেশি সাম্রাজ্যবাদী অভিযান চালিয়ে এসেছে ভারতভূমিতে, বহু বিদেশি পর্যটক এবং ধর্মপ্রচারকও এখানে এসেছেন। এই ভারতেই শক-হূন-দল-পাঠান-মােগল এক দেহে হল লীন।
নানা ভাষা, নানা মত : ভারতে নানা ভাষা, নানা মত, নানা পরিধান’ থাকা সত্ত্বেও ভারতবাসীর মধ্যে রয়েছে এক গভীর ঐক্যবােধ। রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে সুর মিলিয়ে বলা যায়, প্রভেদের মধ্যে ঐক্য স্থাপন করা ভারতবর্ষের একমাত্র প্রচেষ্টা। ভারতের যা কিছু ভিন্নতা, তা একান্ত বাহ্যিক। প্রকৃতপক্ষে ভারত হল এক ও অভিন্ন। ভারতীয় জীবনসাধনার মধ্যে কখনও অনৈক্য পরিলক্ষিত হয়নি। নানা ভাষা নানা মত, নানা পরিধান, বিবিধের মাঝে দেখ মিলন মহান।
দেশের টান বনাম দেশপ্রেম : বিশ্ববিদ্যায় ভারতের স্থান সবার উপরে। অতি প্রাচীন কাল থেকেই ভারত অধ্যাত্মবিদ্যায় প্রমসত্য উপলব্ধি করেছে। শূন্য’ আবিষ্কারের কৃতিত্ব এই ভারতের—অর্থাৎ ভারত মনন সম্পদে সুসমৃদ্ধ। ভারত বেদ-উপনিষদের প্রবক্তা, বহু মূল্যবান গ্রন্থের স্রষ্টা। এ দেশ সাধুসন্তের দেশ, মনীষীর দেশ, যাঁরা বলতে পেরেছেন—“শৃন্বন্তু বিশ্বে অমৃতস্য পুত্ৰা”–“বিশ্ববাসী শােনাে, তােমরা অমৃতের পুত্র। তাই, ভারতের মাটি খাঁটি সােনা। বিশ্বভুবনে এর তুলনা নেই—
“এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি,
সকল দেশের রানী সে যে আমার জন্মভূমি।”
আরো পড়ুন
ভারতের জাতীয় সংহতি – বাংলা প্রবন্ধ রচনা
বাংলার লোকসাহিত্য ও সমাজজীবন – বাংলা প্রবন্ধ রচনা
তোমার প্রিয় চলচ্চিত্র – বাংলা প্রবন্ধ রচনা
খেলাধুলা ও ছাত্রসমাজ – বাংলা প্রবন্ধ রচনা
নিরক্ষরতা দূরীকরণে ছাত্র সমাজের ভূমিকা – বাংলা প্রবন্ধ রচনা
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।