দেশ ভ্রমণের উপযোগিতা
ভূমিকা:
“বিশ্বভুবন আমারে ডেকেছে ভাই,
চার দেওয়ালের গণ্ডি ছেড়ে তাইতাে ছুটে যাই।”
ঘর আর পথ—এ নিয়েই মানুষের জীবন। তাই ঘরে থাকতে থাকতে মানুষের মন হাঁফিয়ে উঠলে সে পথে নামতে চায়। মন চলে যায় দূরে, সুদূরতায় হারিয়ে যেতে যেতেও মন জেনে নেয় পৃথিবীর নানা গােপন কথা, অচেনা-অজানা রহস্য। দীর্ঘজীবনের প্রান্তভূমিতে দাঁড়িয়ে রবীন্দ্রনাথও হয়তাে তাই বলেছিলেন —
“বিপুলা এ পৃথিবীর কতটুকু জানি
দেশে দেশে কত না নগর রাজধানী।”
আসলে পৃথিবীটা অনেক অনেক বড়াে। অথচ এই পৃথিবীতে দীর্ঘদিন বাস করেও আমরা একবারের জন্যও পথে নামলাম না, দেখলাম না চোখ মেলে কত-না শহর-নগর-রাজধানী, কত-না মরুপ্রান্তর-বরফচূড়া-শ্যামল বনান্তর। অথচ এমনটা-ততা হওয়ার কথা ছিল না। পৃথিবীর প্রথম মানুষও কিন্তু ছিল পথিক মানুষ, যাযাবর মানুষ তখন নতুন নতুন বাসভূমির সন্ধানে অরণ্য পর্বতে ঘুরে ঘুরে বেড়াত। অর্থাৎ জন্মসূত্রেই এই পৃথিবীর মানুষ সুদূরের পিয়াসী। ভ্রমণের অভিজ্ঞতা আমাদের অনুভূতিতে পূর্ণতার স্বাদ এনে দেয়।
দেশভ্রমণ ও শিক্ষা : ইতিহাস, ভূগােল, বিজ্ঞানের বিষয়গুলি আমরা বইয়ে পড়ি। তখন আমাদের জ্ঞান থাকে পুথির মধ্যে সীমাবদ্ধ। পুথিপােড় জগতের মানুষের জীবনের অসম্পূর্ণতাকে সম্পূর্ণ করে তােলে দেশভ্রমণ। অভিজ্ঞতার আলােকে আমাদের জগৎ তখন চিত্ররূপময় হয়ে ওঠে। প্রত্নতাত্ত্বিক ধ্বংসাবশেষ, সভ্যতা, সংস্কৃতি, বৈচিত্র্যময় ভৌগােলিক প্রকৃতি, ভ্রমণের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতায় যেন মৃন্ময়ী হয়ে ওঠে। অতীত যেন কথা বলে। যখন সাঁচি স্তুপ, সারণাথের স্তম্ভ, ইলােরা-অজন্তার গুহাচিত্র দেখা যায় তখন সেগুলি সম্পর্কে প্রত্যক্ষ দেখার অভিজ্ঞতা মনের মণিকোঠায় অক্ষয় হয়ে থাকে।
ভ্রমণে মুক্তি : গণ্ডিবদ্ধ জীবন আমাদের মনের বিস্তারকে খণ্ডিত করে। জীর্ণ লােকাচার প্রতিদিন আমাদের বেঁধে ফেলে। সেই জীর্ণ লােকাচার, কুপমণ্ডুকতা থেকে ভ্রমণ মনকে মুক্তি দেয়। মানুষের মানসিক-সামাজিকসাংস্কৃতিক বিকাশকে ভ্রমণ ত্বরান্বিত করে। মানুষকে করে তােলে মুক্তমনা।
ভ্রমণ—সেকালে একালে : প্রাচীনকাল থেকেই অনিশ্চয়তাকে সঙ্গে নিয়ে মানুষ একদিন পথচলা শুরু করেছিল। ফা-হিয়েন, ইবন বতুতা, হিউয়েন সাঙ থেকে শুরু করে কলম্বাস, ভাস্কো-ডা-গামা এভাবেই ভারতবর্ষে এসেছেন। ভারতবর্ষের সংবাদ পৌঁছে দিয়েছেন সুদূর প্রাচ্য থেকে পাশ্চাত্যের দেশগুলিতে। সেকালের পথচলার সমস্যা, পদে পদে বিপদ আর আতঙ্ক আজ আর নেই। অবশ্য তাতে পথচলার অ্যাডভেঞ্চার অনেকটাই কমে এসেছে।
শিক্ষা অর্জনে ভ্রমণ : ভ্রমণের মাধ্যমেই শিক্ষা পূর্ণতা পায়—এ কথা একালের শিক্ষাবিদেরা সকলেই মনে করেন। একালে তাই বিশেষজ্ঞদের এই মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে বিদ্যালয় বা কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়েই শিক্ষামূলক ভ্রমণের ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে। তাই শিক্ষার অঙ্গ হিসেবে দেশভ্রমণ যুগে যুগে স্বীকৃত। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে সরকারও অনুদান দিয়ে থাকে।
উপসংহার : ভ্রমণে প্রাণের সঙ্গে প্রাণের মিলন ঘটে। নতুন জীবনদৃষ্টি আর জীবনীশক্তি দেয় ভ্রমণ। ভ্রমণকে কেন্দ্র করে নানা দেশে আজ গড়ে উঠেছে পর্যটন শিল্প। এতে বৈদেশিক মুদ্রাও দেশের ঘরে আসে। এই সূত্রে বহু মানুষ বেঁচে থাকার মতাে কাজও খুঁজে পায়। তাই একালে দেশভ্রমণ হয়ে উঠেছে জীবিকা অর্জনের হাতিয়ার।
আরো পড়ুন
জীবনচরিত পাঠের প্রয়োজনীয়তা – বাংলা প্রবন্ধ রচনা
একটি গ্রামের আত্মকথা – বাংলা প্রবন্ধ রচনা
একটি শহরের আত্মকথা – বাংলা প্রবন্ধ রচনা
একটি নদীর আত্মকাহিনি – বাংলা প্রবন্ধ রচনা
একটি বটগাছের আত্মকথা – বাংলা প্রবন্ধ রচনা
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।
খুব সুন্দর হয়েছে ।
ধন্যবাদ
Khub sundor hoeche
রচনানা টি খুব সহজ ভাষায় দেওয়া আছে
ধন্যবাদ👍
Good, but it can be more attractive if you use the sentences correctly and express the benefits.
দারুন
Great and very helpful for us
খুব সুন্দর রচনা🎉🎉🎉🎉
দারুন ❤️
Butiful