“চতুর্বর্ণ প্রথা” বলতে কী বােঝায়? চতুর্বর্ণ ব্যবস্থার সামাজিক গুরুত্ব আলােচনা কর। ৩+৫=৮ Class 12 | Sociology (ভারতীয় সমাজ) 8 Marks
উত্তর:
চতুর্বর্ণ প্রথা : শাস্ত্রীয় বিধান অনুযায়ী হিন্দু সমাজ চারটি বর্ণে বিভক্ত। এই চারটি বর্ণ হল ব্রাত্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শুদ্র। বর্ণব্যবস্থা হল বৃত্তিমূলক ও গুণবাচক। ব্রাত্মণের বৃত্তি ছিল যজন-যাজন ও অধ্যাপন। প্রজাসাধারণের রক্ষণাবেক্ষনের দায়িত্ব ছিল ক্ষত্রিয়ের উপর। বৈশ্যের পেশা ছিল ব্যবসা-বাণিজ্য, কৃষিকার্য, গাে-পালন প্রভৃতি। এই তিনবর্ণের সেবা করাই ছিল শুদ্রের জীবিকা।
বর্ণব্যবস্থার সামাজিক গুরুত্ব : বর্ণব্যবস্থার কতকগুলি সামাজিক গুরুত্ব বিশেষভাবে উল্লেখযােগ্য।
1.বর্ণধর্ম সমাজে অসাম্য সৃষ্টি করে না: মানবসমাজে বর্ণধর্মের ব্যবস্থা-বিন্যাস অসাম্য সৃষ্টির জন্য নয়। সমাজের প্রতিটি কাজ যাতে সুসম্পন্ন হয় সেই উদ্দেশ্যে প্রতিটি কাজের জন্য ক্রিয়াকারীর অস্তিত্ব বা সরবরাহ সুনিশ্চিত হওয়া দরকার। মানবসমাজে সকল কাজই গুরুত্বপূর্ণ এবং মর্যাদাসম্পন্ন।
2.বর্ণব্যবস্থা হল এক সমন্বয়পূর্ণ ব্যবস্থা : এই বর্ণব্যবস্থা হল অতিমাত্রায় একটি মূল্যবােধভিত্তিক ব্যবস্থা। এর কেন্দ্রীয় মূল্যবােধ হল বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য এবং সামাজিক সংহতি। পশ্চিমী পণ্ডিতেরা এই ব্যবস্থাকে সাধারণত ‘শ্রমবিভাগ হিসাবে প্রতিপন্ন করার পক্ষপাতী।
3.সামাজিক ন্যায় ও সামাজিক দায়িত্ব : বর্ণব্যবস্থার অন্যতম বিষয় হিসাবে সামাজিক ন্যায় ও সামাজিক দায়িত্বের কথা বলা হয়। ন্যায়, সাম্য, সমন্বয়, সহযােগিতা, স্বাধীনতা, মানবতা প্রভৃতি সামাজিক ন্যায়ের অন্তর্ভুক্ত।
4.বর্ণসমূহের পারস্পরিক নির্ভরশীলতা : চতুর্বর্ণের ব্যবস্থা অনুযায়ী সনাতন ভারতীয় সমাজ চার ভাগে বিভক্ত ছিল। চারটি বর্ণই ছিল পরস্পরের উপর নির্ভরশীল। সামাজিক জীবনধারার বিভিন্ন ক্ষেত্রে বর্ণসমূহের এই পারস্পরিক নির্ভরশীলতা পরিলক্ষিত হয়।
5.স্বধর্মই হল ঈশ্বরের সঙ্গে মানুষের একমাত্র সংযােগসূত্র’– বর্ণধর্ম এই বিষয়টিকে তুলে ধরে : বর্ণধর্মানুসারে কোনও ব্যক্তির জন্য যে কাজ নির্দিষ্ট হয়েছে, সেই ব্যক্তির কাছে সেই কাজই হল কর্মযােগ। এই কর্মযােগের মাধ্যমে ব্যক্তি ঈশ্বর সমীপে উপনীত হবে।
6.প্রত্যেক বর্ণ বা শ্রেণির জন্য নির্ধারিত কর্মের উপর গুরুত্ব আরােপ করে বর্ণব্যবস্থা : চতুর্বর্ণ ব্যবস্থায় প্রতিটি বর্ণ বা শ্রেণির জন্য নির্ধারিত কর্ম হল সেই বর্ণ বা শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত ব্যক্তিবর্গের বর্ণধর্ম।
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।