Class 12 Class 12 Sociology স্বয়ংসম্পূর্ণ গ্রাম বলতে কী বােঝায় ? স্বয়ংসম্পূর্ণ গ্রাম সমাজের বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ কর।

স্বয়ংসম্পূর্ণ গ্রাম বলতে কী বােঝায় ? স্বয়ংসম্পূর্ণ গ্রাম সমাজের বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ কর।

স্বয়ংসম্পূর্ণ গ্রাম বলতে কী বােঝায় ? স্বয়ংসম্পূর্ণ গ্রাম সমাজের বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ কর। ৩+৫ Class 12 | Sociology (ভারতীয় সমাজ) 8 Marks

উত্তর:

গ্রামীণ সমাজ ও অর্থনীতিকে স্বয়ংসম্পূর্ণ বলার অর্থ স্বনির্ভরতা প্রতিপন্ন করা। স্বয়ংসম্পূর্ণ গ্রামে বসবাসকারী ব্যক্তিবর্গের মধ্যে সমষ্টিগত মানসিকতার অস্তিত্ব বর্তমান থাকে। এ রকম গ্রামের অধিবাসীরা জীবন যাপনের জন্য প্রয়ােজনীয় যাবতীয় দ্রব্য-সামগ্রী গ্রামের মধ্যেই পেয়ে যায়। কারণ জীবনধারণের জন্য প্রয়ােজনীয় সবকিছুই গ্রামের মধ্যেই উৎপাদিত হয়।

সহজ কথায় দুর্বল বলদনির্ভর কৃষিব্যবস্থা আর সহজ-সরল যন্ত্রপাতিনির্ভর হস্ত শিল্পভিত্তিক সমাজের অবস্থিতি, যারা বাজারবিহীন সরল বিনিময় প্রথার মাধ্যমে বহির্বিশ্বের কোনপ্রকার সাহায্য ছাড়াই অবস্থান করার শক্তি সঞ্চয়ের মধ্য দিয়ে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে পারে। সেই সকল প্রাক্-বৃটিশ গ্রাম সমাজকে স্বয়ংসম্পূর্ণ গ্রাম সমাজ বলে উল্লেখ করা হয়।

স্বয়ং সম্পূর্ণ গ্রামসমাজ হল এমন এক বিশেষ ধরনের গ্রাম সম্প্রদায়, যাদের মধ্যে সমষ্টিগত মানসিকতা থাকে, এবং জীবনধারণের মৌলিক প্রয়ােজনগুলি মেটানাের জন্য তাদের গ্রামের বাইরের কোন প্রকার সাহায্যের উপর নির্ভরতার প্রয়ােজন উপলব্ধি হয় না।

যে সমস্ত সমাজবিজ্ঞানী সমকালীন গ্রামসমাজ ও অর্থনীতিকে স্বয়ংসম্পূর্ণ বলার পক্ষপাতী তাদের মধ্যে উল্লেখযােগ্য হলেন রজনী পাম দত্ত, ই. এম. এস নামবুদ্রিপাদ, এ. আর. দেশাই, রামকৃষ্ণু মুখােপাধ্যায় প্রমুখ। 

বৈশিষ্ট্য : সুদীর্ঘকালের ঐতিহ্যকে পাথেয় করে স্বয়ংসম্পূর্ণ গ্রাম সমাজের অভ্যন্তরে কতকগুলি বৈশিষ্ট্য গড়ে উঠেছিল। এই বৈশিষ্ট্যগুলি বিস্তারিতভাবে পর্যালােচনা করলে তৎকালীন স্বনির্ভর গ্রামসমা সম্পর্কে একটি পূর্ণাঙ্গ ধারণা লাভ করা যেতে পারে।

(এক) মার্কসীয় থিসিস অনুযায়ী সমকালীন ভারতের গ্রামীণ সমাজ ছিল স্থবির ও গতিহীন; সামাজিক সচলতা ছিল না। কারণ গ্রামগুলি ছিল সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। স্ব স্ব অবস্থানের মধ্যেই প্রতিটি গ্রাম ছিল সীমাবদ্ধ।

(দুই) সমকালীন ভারতে বৃত্তি ছিল বংশগত। জাতভেদ প্রথা অনুযায়ী গ্রামীণ সমাজে ব্যক্তিবর্গের বৃত্তি নির্ধারিত হত জন্মসূত্রে।

(তিন) প্রাক্-বৃটিশ ভারতের গ্রামীণ সমাজের বাজার ছিল অপরিবর্তনশীল।

(চার) সমকালীন গ্রামীণ সমাজে উৎপাদন ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত হত স্থানীয় চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে।

(পাঁচ) স্বনির্ভর গ্রামসমাজের একটি উল্লেখযােগ্য বৈশিষ্ট্য হল বাজারবিহীন পরিস্থিতিতে, মুদ্রাবিহীন অর্থনীতিতে সার্বিক বিনিময় প্রথার মাধ্যমে উৎপাদন এবং জোগানের ভারসাম্য রক্ষার প্রচেষ্টা।

(ছয়) মুদ্রা ও বাজারবিমুখ গ্রামীণ অর্থনীতিতে দ্রব্যের মূল্যমান নির্ধারণ ও বণ্টনের ক্ষেত্রে যজমানী প্রথার গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। যজমানী প্রথা ছিল তৎকালীন পরিস্থিতির অর্থনৈতিক অভিভাবকস্বরূপ।

(সাত) স্বনির্ভর গ্রাম সমাজে জমি বণ্টন, সংরক্ষণ রাজস্ব আদায়, আইন বিচার, শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা প্রভৃতি ক্ষেত্রে যাবতীয় দায়িত্ব গ্রাম পঞ্চায়েতের হাতে ন্যস্ত ছিল।

(আট) স্বনির্ভর গ্রাম সমাজের আর একটি উল্লেখযােগ্য বৈশিষ্ট্য হল জমির যৌথ গ্রামভিত্তিক মালিকানা। ফলে ব্যক্তিগত মালিকানার মাধ্যমে ব্যক্তি-স্বাতন্ত্র্যবাদের কোন সুযােগ এখানে ছিল না। অধিকাংশ মানুষ ছিল কৃষিজীবি। কৃষিব্যবস্থা ছিল গ্রামভিত্তিক ও যৌথ মালিকানার অধীন।

(নয়) স্বনির্ভর গ্রাম সমাজের আর একটি বৈশিষ্ট্য হল পারস্পারিক সুদৃঢ় বন্ধন এবং গ্রামের ঐতিহ্যের প্রতি বংশ পরম্পরাগত শ্রদ্ধা প্রদর্শন।

(দশ) পেশাভিত্তিক জাতিব্যবস্থা স্বয়ংসম্পূর্ণ গ্রামের আর একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক।

(এগার) গ্রামীণ কৃষি ও হস্তশিল্পগুলি ছিল প্রযুক্তিবিহীন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই উৎপাদন ছিল অত্যন্ত নিম্নমানের। পেশাগত বৈচিত্রহীনতা ও উৎপাদনের প্রযুক্তিহীনতা তৎকালীন গ্রামীণ সমাজের আর একটি অন্যতম বৈশিষ্ট ছিল।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment

error: Content is protected !!