বেকার সমস্যার সমাধানে গৃহীত সরকারীনীতি ও কর্মসূচীগুলি বিশ্লেষণ কর

বেকার সমস্যার সমাধানে গৃহীত সরকারীনীতি ও কর্মসূচীগুলি বিশ্লেষণ কর Class 12 | Sociology (সাম্প্রতিক কালের সামাজিক বিচার্য বিষয়) | 8 Marks

উত্তর:

বেকারসমস্যার সমাধানের সরকারি নীতি ও পদক্ষেপ || স্বাধীন ভারতে পঞবার্ষিকী পরিকল্পনা সূচনা হয় ১৯৫১ সালে। গােড়ার দিকে সরকার এবং পরিকল্পনা কমিশন বেকারসমস্যার সমাধানে সরাসরি কোনাে উদ্যোগ-আয়ােজন গ্রহণ করেনি। 

পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার প্রথম যুগে পরিকল্পনা কমিশন ও সরকার মনে করেছিল যে, কর্মসংস্থান সৃষ্টির উদ্দেশে প্রত্যক্ষ কোনাে পদক্ষেপ গৃহীত হলে ভােগব্যয় বৃদ্ধি পাবে এবং আর্থনীতিক উদ্বৃত্ত হাস পাবে। তারফলে উন্নয়নের গতি শ্লথ হয়ে পড়বে। এই কারণে বেকারসমস্যার সমাধানে সরাসরি কোনাে উদ্যোগ আয়ােজন গ্রহণ করা হয়নি।

সরকার ও পরিকল্পনা কমিশন কুটিরশিল্প ও কৃষিভিত্তিক শিল্পের বিকাশসাধন এবং পরিকাঠামােগত প্রকল্পসমূহের উপর বিশেষ জোর দেয়। নতুন এবং আগেকার কর্মহীনদের কর্মসংস্থানের উদ্দেশে এই পথ অবলম্বন করা হয়। দু’দশকের অধিককাল ধরে কর্মসংস্থানের এই পরােক্ষ নীতি অব্যাহত থাকে। কিন্তু এই নীতি ব্যর্থ হয়। বেকারত্বের তীব্রতা ক্রমাগত বৃদ্ধি পেতে থাকে। ১৯৬৯ সালে কর্মহীন মানুষের সংখ্য বৃদ্ধি। পেয়ে ২২ মিলিয়নে পৌছায়।

চতুর্থ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা কালে সরাসরি কর্মসংস্থান সৃষ্টি সম্পর্কিত নীতি গ্রহণ করা হয়। গৃহীত কর্মসূচীগুলির মধ্যে উল্লেখযােগ্য হল: শ্রম-নিবিড় সরকারি কর্মসূচী; শিল্পে শ্রম-নিবিড় প্রকৌশল, গ্রামােন্নয়নের ব্যাপক কর্মসূচী; এবং অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে এম-নিবিড় শিল্পজাত দ্রব্যসামগ্রীর বাজার সৃষ্টি। | পঞম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনাকালে দারিদ্র ও বেকারসমস্যার সমাধানের লক্ষ্যে গুরুত্ব আরােপ করা হয়। মজুরিভিত্তিক কর্মসংস্থান এবং স্বনিযুক্তিমূলক প্রকল্পসমূহের উপর। চতুর্থ পরিকল্পনার মত পম পরিকল্পনাতেও শ্রম-নিবিড় কর্মসূচীর উপর গুরুত্ব আরােপ করা হয়। বলা হয় যে বেকারসমস্যার সমাধানের ক্ষেত্রে শুধু মজুরির বিনিময়ে কাজের সুযােগ যথেষ্ট নয়। এক্ষেত্রে স্বনিযুক্তির সুযােগ সৃষ্টি ও বৃদ্ধি করতে হবে। কাজের সুযােগ সৃষ্টির উদ্দেশে উন্নয়নমূলক কতকগুলি কর্মসূচী গৃহীত হয় : প্রান্তিক চাষি ও কৃষিশ্রমিক উন্নয়ন 7321 (Marginal Farmers And Agricultural Labour Development Agency); DIT DIFT Tastal সংস্থা (Small Farmers Development Agency); খরাপ্রবণ এলাকা কর্মসূচী (Drought Prone Area Programme) প্রভৃতি। পরিকল্পনা কমিশনের দৃঢ় ধারণা ছিল যে, পঞম পরিকল্পনার অন্তর্ভুক্ত উন্নয়নমূলক প্রকল্পসমূহের সুবাদে পর্যাপ্ত পরিমাণ কর্মসংস্থানের সুযােগ-সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাবে।

ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার প্রাক্কালে কমিশন স্বীকার করে নিতে বাধ্য হয় যে, পরিকল্পিত অর্থনীতি গ্রহণ করা সত্ত্বেও কর্মসংস্থানের সুযােগ বড় একটা বাড়েনি। এই উপলব্ধির পরিপ্রেক্ষিতে ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনাকালে দুটি বিষয়ের উপর জোর দেওয়া হয়: (ক) সংখ্যাগরিষ্ঠ শ্রমিকের অর্ধ বেকারত্ব দূরীকরণ এবং (খ) দীর্ঘমেয়াদী কর্মহীনতার হ্রাসকরণ। এই দুটি নীতিকে বাস্তবে রূপায়িত করার উদ্দেশে আবশ্যক হল আর্থনীতিক প্রগতিকে নিয়ােগমুখী করণ। এই কারণে দীর্ঘমেয়াদী ব্যবস্থাদির সঙ্গে সঙ্গে স্বল্পমেয়াদী ব্যবস্থাদির উপরও গুরুত্ব আরােপ করা হয়।

সরকারি নীতির মাধ্যমে বেসরকারি ক্ষেত্রসমূহে চাহিদা ও নিয়ােগ বৃদ্ধির পরিকল্পনা করা হয়। স্ব-নিযুক্তির সহায়ক কতকগুলি প্রকল্প গৃহীত হয়। কৃষি-বহির্ভূত ক্ষেত্রসমূহে; পাশাপাশি কৃষি, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প এবং সহায়ক কাজকর্মে সংশ্লিষ্ট প্রকল্পসমূহ গৃহীত হয়। গৃহীত প্রকল্পসমূহের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযােগ্য হল: সুসংহত গ্রামীণ উন্নয়ন কর্মসূচী (IRDP-Integrated Rural Development Programme); জাতীয় গ্রামীণ কর্ম সংস্থান কর্মসূচী (NREP– National Rural Employment Programme); গ্রামাঞ্চলের যুবকদের স্বনিয়ােজিত কর্মসংস্থানের জন্য প্রশিক্ষণ (TRYSEM– Training of Rural Youth for Self Employment); মৎস্যচাষি উন্নয়ন সংঘ; অপারেশন ফ্লাড II, ডেয়ারি এবং অন্যান্য ডেয়ারী উন্নয়ন কর্মসূচী প্রভৃতি।

অর্থনীতির উন্নয়নের চুইয়ে পড়া প্রভাব’ (Percolation Effect) ভারতে তেমন ফলপ্রসূ হয়নি। তেমনভাবে কর্মসংস্থানের সুযােগ সৃষ্টি বা বৃদ্ধি করা যায়নি। এই কারণে পঞ্চম ও ষষ্ঠ পঞবার্ষিকী পরিকল্পনায়

নির্দিষ্ট এলাকাভিত্তিক বা সম্প্রদায়ভিত্তিক কর্মসংস্থানের কর্মসূচীর উপর গুরুত্ব আরােপ করা হয়। বেকারসমস্যার সমাধানে সমষ্টি উন্নয়নমূলক কর্মসূচী বিশেষ কার্যকর হয়নি।

 সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনাকালে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির লক্ষ্যে কৃষিক্ষেত্রের উন্নতির উপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়। সঙ্গে সঙ্গে গ্রামাঞ্চলে মূলধন সৃজন এবং গ্রামীণ উন্নয়নের উদ্দেশে নির্মাণকাজের মাধ্যমে। বিশেষ কিছু কর্মসূচী গৃহীত হয়। সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় ক্ষেত্রভিত্তিক প্রকল্পসমূহের সঙ্গে সঙ্গে দীনদরিদ্রদের স্ব-নিযুক্তির জন্য বেশ কিছু কর্মসূচী গৃহীত হয়। দারিদ্র প্রশমনের উদ্দেশে ব্যাপকভাবে উদ্যোগআয়ােজন গৃহীত হয়। কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য স্ব-নিযুক্তির উপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়। কারণ শিল্পক্ষেত্রের। উন্নতিসাধনের মাধ্যমে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির সুযােগ-সম্ভাবনা কম। 

অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনাকালে উন্নয়নের সঙ্গে উৎপাদন মিশ্রণের পরিবর্তনসাধনের সিদ্ধান্ত গৃহীত। হয় এবং বেকারসমস্যার মােকাবিলার ব্যাপারে উদ্যোগ-আয়ােজন গৃহীত হয়। প্রযুক্তি-প্রকৌশলের প্রভূত উন্নতিসাধনের মাধ্যমে বিশ্বমান ও দক্ষতাকে ছুঁয়ে ফেলার পরিকল্পনা করা হয়নি। কারণ সে পথে কর্মসংস্থান। সৃষ্টি ও বৃদ্ধির সুযােগ-সম্ভাবনা কম। অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় বলা হয় যে, বিশেষ ধরনের কর্মসূচীর। নির্ভরতা ক্রমান্বয়ে কমিয়ে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির হার বাড়াতে হবে। অন্যথায় কর্মসংস্থানমুখী পরিকল্পনার উন্নয়নমূলক ব্যবস্থাসমূহের ব্যর্থতা প্রকট হয়ে পড়বে। এই কারণে দীন-দরিদ্র ও সহায়-সম্বলহীন ব্যক্তিবগের। মধ্যে বেকারত্ব এবং অর্ধ বেকারত্বের হার হ্রাসের জন্য স্বল্পমেয়াদী ব্যবস্থাদি গৃহীত হয়।

কৃষিকর্মের সঙ্গে নিবিড়ভাবে সম্পর্কিত কিছু কিছু আর্থনীতিক উদ্যোগ কর্মসংস্থানের নিরিখে বিশেষভাবে সম্ভাবনাপূর্ণ। এক্ষেত্রে বিশেষভাবে উল্লেখযােগ্য হল পশুপালন, শাকসবজি ও ফলমূল চাষ, মৎস্যচাষ প্রভৃতি। কর্মসংস্থানের আনুষঙ্গিক ও সদর্থক ক্ষেত্র হিসাবে বনসৃজন, পতিত বা নিম্নমানের জমির উদ্ধার ও উন্নতিসাধনের কথাও উল্লেখ করা আবশ্যক। গ্রামাঞ্চলে কিছু অ-কৃষিমূলক কাজে সাম্প্রতিককালে কর্মসংস্থানের হার বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ক্ষেত্রে উল্লেখযােগ্য হল: শিল্প দ্রব্যসামগ্রী উৎপাদন, নির্মাণকর্ম, ব্যবসা-বাণিজ্য, পরিষেবামূলক ক্রিয়াকর্ম প্রভৃতি।

দশম পঞবার্ষিকী পরিকল্পনায় সাধারণভাবে আশা প্রকাশ করা হয়েছে, যে GDP বাড়বে বার্ষিক আট শতাংশ হারে। এই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা গেলেই বেকারসমস্যার সমাধানে অসুবিধা হবে না। | একাদশ যােজনায় (2007-2012) অতিরিক্ত কর্মসংস্থান সৃষ্টির কথা বলা হয়েছে। সেই লক্ষ্য পূরণের জন্য জোর দেওয়া হয়েছে উৎপাদন ও পরিষেবামূলক ক্ষেত্রসমূহের উপর। এ ক্ষেত্রে শ্রম-নিবিড় উৎপাদন ক্ষেত্রসমূহের উপর গুরুত্ব আরােপ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রসমূহের উদাহরণ হিসাবে উল্লেখযােগ্য হল: খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, চর্মজ দ্রব্যসামগ্রী, বস্ত্র ও পরিষেবামূলক ক্ষেত্র প্রভৃতি। উপরিউক্ত পরিকল্পনার লক্ষ্য হল বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন লক্ষ্যমাত্রায় কর্মসংস্থান সৃষ্টি।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment