দূর্নীতি বলতে কী বােঝ? দূর্নীতির প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি কী কী?

ভারতে সাম্প্রদায়িকতার মৌলিক কারণ সমূহ বর্ণনা কর Class 12 | Sociology (সাম্প্রতিক কালের সামাজিক বিচার্য বিষয়) | 8 Marks

উত্তর:

দুর্নীতির ধারণা (Concept of Corruption) : দুর্নীতি একটি সামাজিক ব্যাধি। এই ব্যাধি বিশ্বব্যাপী বর্তমান। মানবসমাজে সব সময়ই এবং সর্বত্রই কোনাে-না-কোনাে রকমের এবং কোনাে-না-কোনােভাবে দুর্নীতিমূলক ক্রিয়াকর্ম পরিলক্ষিত হয়। তবে দুর্নীতির বিষয় ও প্রকৃতি এবং গভীরতা ও ব্যাপ্তি বদলেছে। দেশ-কালভেদে দুর্নীতিমূলক ক্রিয়াকর্ম আকারে-প্রকারে পরিবর্তিত হয়েছে।

আভিধানিক বিচারে দুর্নীতি হল ন্যায়-নীতি এবং সততা-বিরােধী। দুর্নীতি হল উৎকোচ বা অন্যান্য অনৈতিক ও বেআইনি উপায়-পদ্ধতির প্রলােভনে অন্যায় আচরণ। অনাবিল-অকলঙ্ক ও বিশুদ্ধতার বিপরীত আচরণ হল দুর্নীতিমূলক। সাধারণভাবে বলা হয় যে, ঘুস দেওয়া-নেওয়ার ক্রিয়াকর্ম হল দুর্নীতি।

বক্তিগত লাভের জন্য ক্ষমতার অপব্যবহার : সকল রকম বিধিবদ্ধ নিয়মকানুনের তােয়াক্কা না করে ব্যক্তিগত লাভ বা সুযােগ-সুবিধার জন্য রাজনীতিক ক্ষমতা বা সরকারি পদের অপব্যবহারই হল দুর্নীতি। অর্থাৎ দুর্নীতির ক্ষেত্রে ক্ষমতার অপব্যবহারের ঘটনা ঘটে। ব্যক্তিগত লাভের জন্যই ক্ষমতার অপব্যবহার করা হয়। এই লাভ আর্থিকভাবে হতে পারে, আবার অন্য কোনভাবেও হতে পারে।

অসরকারি সুবিধার জন্য সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার : সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে অসরকারি সুযােগ-সুবিধা লাভ করার ঘটনা সমাজে ঘটে। এ ঘটনা দুর্নীতিমূলক। বিধিবদ্ধ নিয়মকানুন বা বিদ্যমান আইনকে লঙঘন করে বেসরকারি, ব্যক্তিগত বা গােষ্ঠীগত লাভ বা সুযােগ-সুবিধার জন্য সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার হল দুর্নীতি। অর্থাৎ দুর্নীতিমূলক ক্রিয়াকর্মের ক্ষেত্রে বেআইনীভাবে বেসরকারি বা ব্যক্তিগত স্বার্থে সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহারের ঘটনা ঘটে।

অন্যান্য সুবিধার জন্য কর্তব্যে অবহেলা : দুনীতিমূলক আচরণের ক্ষেত্রে একজন ব্যক্তি অন্যায়ভাবে সুযােগ-সুবিধা পাওয়ার জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে তার কর্তব্যকর্মকে অবহেলা করে। এ ক্ষেত্রে ব্যক্তি অন্যায্য সুযােগ বা সুবিধা অর্জনের অভিপ্রায়ে স্বেচ্ছায় তার নির্দিষ্ট দায়িত্ব সম্পাদন থেকে বিরত থাকে।

সাধারণভাবে বলা হয়ে থাকে যে দুর্নীতির ক্ষেত্রে কোনাে কিছু করার মত কোনাে কিছু না করারও বিষয়। বা ঘটনা থাকে। তবে সরকারি আধিকারিক বা কর্মচারীরাই হল এক্ষেত্রে ক্রিয়াকারী। সাধারণত নগদ । টাকাকড়ি বা বস্তুগত লাভের জন্য এ ধরনের কাজ করা হয়। এই লাভ প্রত্যক্ষ বা পরােক্ষ হতে পারে। এই লাভ ব্যক্তিগত, পারিবারিক বা গােষ্ঠীগত হতে পারে।।

দুনীতির প্রধান বৈশিষ্ট্যসমূহ : দুর্নীতির কতকগুলি বৈশিষ্ট্য সাধারণভাবে প্রতিপন্ন হয়। 

1. দুর্নীতি হল নিয়মবহির্ভূত, আইনবিরুদ্ধ এবং অনৈতিক ক্রিয়াকর্ম। এই ক্রিয়াকর্ম জনজীবনের সঙ্গে সম্পর্কিত। 

2.দুর্নীতির সঙ্গে ক্ষমতার অপব্যবহার সম্পর্কযুক্ত। এই ক্ষমতা হল সরকারি পদ সম্পর্কিত বা। জনজীবন সম্পর্কিত। 

3.দুর্নীতির সঙ্গে ঘুস দেওয়া-নেওয়ার কাজকর্ম বা অভ্যাস সম্পর্কিত। অন্যায় কাজ করার জন্য যেমন ঘুস দেওয়া-নেওয়া হয়; তেমনি যথাবিহিত কর্ম যথাসময়ে সম্পাদনের জন্যও ঘুস দেওয়া-নেওয়া হয়।

4.দুর্নীতির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হল ইচ্ছাকৃতভাবে বিশ্বাসঘাতকতা সহকারে যথাবিহিত দায়িত্ব পরিত্যাগ। এই কাজ অবৈধ ও অনৈতিক।

5.নির্ধারিত যথাবিহিত দায়িত্ব সম্পাদনে ইচ্ছাকৃত অবহেলা দুর্নীতিমূলক। এই অবহেলা প্রত্যক্ষ বা পরােক্ষ হতে পারে। এই অবহেলা উদ্দেশ্যমূলক। এই উদ্দেশ্য হল কোনাে অর্থনীতিক লাভ বা পরিবারের সদস্যদের জন্য সুযােগ-সুবিধা ও সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য লাভ।

দুর্নীতিমূলক ক্রিয়াকর্মের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি তার নির্ধারিত কর্তব্যকর্ম ইচ্ছাকৃতভাবে অবহেলা করে। এর উদ্দেশ্য হল অন্যায্য সুযােগ-সুবিধা লাভ করা। আর্থিক লাভ, কোনাে পদ লাভ, কারুর সম্পত্তি অধিকার অথবা অন্য কোনাে সুযােগ-সুবিধার জন্য যখন কোনাে ব্যক্তি তার কর্তব্য সম্পাদনকে স্বেচ্ছায় উপেক্ষা করে তখন তা দুর্নীতি হিসাবে পরিগণিত হয়। ক্ষমতাবান ব্যক্তিরাই দুর্নীতির সামিল হতে পারে।

অনেক সময় রাজনীতিক ক্ষেত্রে দুর্নীতিগ্রস্ত মানুষজন নিজেদের কায়েমি স্বার্থসাধনের জন্য প্রয়ােজনীয় আইনপ্রণয়ন করে। শিল্প-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে অনেক সময় ব্যক্তিবর্গ আইনলঙঘন করতে দ্বিধাবােধ করে না। তারা নিজেদের আইনের উর্ধ্বে বলে বিবেচনা করে। রাজনীতিক নেতাদের মধ্যে এ রকম মানসিক অবস্থান। অল্পবিস্তর বর্তমান। ভােট বৈতরণী সাফল্যের সঙ্গে পার হওয়ার পর সাংসদ ও বিধায়কদের মধ্যেও কেউ কেউ ঘুস ও উপরি উপার্জনের বা লেনদেনের সামিল হয়ে পড়েন। 

সমাজ ও সমাজথ ব্যক্তিবর্গের কাছে একজন দুষ্কৃতী বা দণ্ডাই অপরাধীর থেকে একজন দুর্নীতিপরায়ণ ব্যক্তি অধিকতর ক্ষতিকর। দুর্নীতিপরায়ণ ব্যক্তিবর্গ সাধারণত উচ্চ মর্যাদাযুক্ত ও ক্ষমতাসম্পন্ন পদে আসীন থাকেন। রাজনীতিক নেতাদের মধ্যে কিছু কিছু অতিমাত্রায় দুর্নীতিগ্রস্ত।

দুর্নীতিগ্রস্ত মানুষজন ব্যক্তিগত লাভালাভের বিচার-বিবেচনায় সরকার এবং সরকারি বিধি-ব্যবস্থাকে নির্দ্বিধায় উপেক্ষা করে। অনেক ক্ষেত্রে নির্ধারিত নির্মাণকাজ না হওয়া সত্ত্বেও কাজ সম্পূর্ণ সম্পাদিত প্রমাণপত্র দিয়ে নির্মাণকর্মের ব্যয়জনিত অর্থ দিয়ে দেওয়া হয়। আবার ক্ষেত্রবিশেষে ত্রুটিপূর্ণ নির্মাণের জন্য সন্তোষজনক প্রমাণপত্র দিয়ে টাকা দিয়ে দেওয়া হয় এবং অনতিবিলম্বে সংশ্লিষ্ট নির্মাণকর্ম ভেঙ্গে পড়ে।

ভারত হল অতিদুনীতিগ্রস্ত দেশগুলির মধ্যে অন্যতম। সাম্প্রতিককালে ভারতে দুর্নীতিমুলক কাজকর্ম লাগামছাড়া হয়ে পড়েছে। মাত্রাতিরিক্ত দুর্নীতির কারণে ভারতীয় রাজনীতির অবক্ষয় ঘটেছে। ভারতে দুর্নীতির মূল অতি গভীরে প্রােথিত। অনিয়ন্ত্রিতভাবে এবং অপ্রতিহত গতিতে দুর্নীতি ভারতের জন-জীবনকে গ্রাস করে ফেলেছে। ভারতের রাজনীতিক নেতাদের মধ্যে অনেকেই দুর্নীতির বিরুদ্ধে জেহাদ ঘােষণা করেছেন। কিন্তু কালক্রমে তাদের মধ্যে একটি অংশ দুর্নীতির কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন এবং আর একটি অংশ কার্যত পরাজয় স্বীকার করে নিয়েছেন। দুর্নীতির বিরুদ্ধে সংগ্রামের ব্যাপারে রাজনীতিক নেতাদের লম্বাচওড়া কথা পর্বতের মুষিক প্রসবের সামিল হয়ে দাঁড়িয়েছে।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment