শিক্ষার লক্ষ্য থাকা প্রয়ােজন কেন

শিক্ষার লক্ষ্য থাকা প্রয়ােজন কেন
অথবা, শিক্ষার লক্ষ্য বলতে কী বােঝ | শিক্ষার লক্ষ্যের প্রয়ােজনীয়তা সংক্ষেপে লেখাে। 2 + 6   Class 11 | শিক্ষার ধারণা ও লক্ষ্য (Education) 8 Marks

উত্তর:

শিক্ষার লক্ষ্য : লক্ষ্য হল পূর্বদৃষ্ট কাঙ্ক্ষিত উদ্দেশ্য যা কোনাে ক্রিয়াকে প্রভাবিত ও নিয়ন্ত্রণ করে অথবা তার আচরণগুলিকে উদ্দীপিত করে। শিক্ষার ক্ষেত্রে যেসকল পূর্বদৃষ্ট কাঙ্ক্ষিত উদ্দেশ্য শিক্ষার কাজকে প্রভাবিত ও নিয়ন্ত্রণ করে, তাকেই শিক্ষার লক্ষ্য বলা হয়। শিক্ষা একটি পূর্বপরিকল্পিত সচেতন প্রক্রিয়া, শিক্ষার ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য থাকে। লক্ষ্যহীন শিক্ষা —বিষয়টি ভাবাই যায় না।

শিক্ষার লক্ষ্যকে শিক্ষাবিদরা দুটি বিভাগে বিভক্ত করেন। (iii) চরম বা পরমলক্ষ্য এবং (ii) আপাতলক্ষ্য। প্রাচীনযুগ থেকে শুরু করে আধুনিক যুগ পর্যন্ত শিক্ষার লক্ষ্য বিশ্লেষণ করলে এই দুটি বিভাগের সন্ধান পাওয়া যায়। প্রাচীন যুগের শিক্ষাব্যবস্থায় পরাবিদ্যার পাঠক্রমের মাধ্যমে শিক্ষার চরম লক্ষ্য এবং অপরাবিদ্যার পাঠক্রমের মাধ্যমে শিক্ষার আপাতলক্ষ্যপূরণের চেষ্টা করা হত।

আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষার চরম লক্ষ্য হল ব্যক্তির সামঞ্জস্যপূর্ণ সুষম বিকাশ, অন্যদিকে শিক্ষার আপাতলক্ষ্যগুলি হল ব্যক্তির শারীরিক বিকাশ, মানসিক বিকাশ, সামাজিক বিকাশ, প্রাক্ষোভিক বিকাশ ইত্যাদি। 

শিক্ষার লক্ষ্যের প্রয়ােজনীয়তা : আমরা জানি শিক্ষা হল একটি ধারাবাহিক, গতিশীল, উদ্দেশ্যমুখী, সচেতন সামাজিক প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়াকে সচেতনভাবে, সুপরিকল্পিত ও বাস্তবসম্মত উপায়ে পরিচালনার জন্য নির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করা খুবই জরুরি। এখানে শিক্ষার লক্ষ্যের প্রয়ােজনীয়গুলি সংক্ষেপে আলােচনা করা হল :

[1] শিক্ষাপরিকল্পনার বাস্তবায়ন : পূর্বনির্ধারিত লক্ষ্যই শিক্ষা-সংক্রান্ত বিভিন্ন কর্মপ্রচেষ্টাকে অর্থবহ করে তােলে। লক্ষ্য নির্ধারণ করা না-হলে শিক্ষাপরিকল্পনার বাস্তবায়ন ব্যাহত হয়।

[2] কর্মসম্পাদনের প্রেষণা বৃদ্ধিতে সহায়তা : শিক্ষার লক্ষ্য শিক্ষামূলক কর্মসম্পাদনের প্রেষণা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

[3] প্রশাসনিক কার্যে সহায়তা : সঠিক শিক্ষা নির্বাচন, উপযুক্ত পাঠক্রম প্রণয়ন, প্রয়ােজনীয় শিখন-শিক্ষণ উপকরণ সংগ্রহ, সহপাঠক্রমিক কার্যাবলির পরিকল্পনা ইত্যাদি শিক্ষা প্রশাসনিক কাজগুলি পূর্বনির্ধারিত লক্ষ্যের ভিত্তিতেই পরিচালিত হয়। লক্ষ্য স্থির করা না-হলে এগুলি পদে পদে ব্যাহত হয়। 

[4] মূল্যায়নে সহায়তা : শিক্ষার্থীর সামগ্রিক বিকাশের ধারাকে সঠিকভাবে পরিমাপ করতে গেলে, শিক্ষা প্রক্রিয়া, শিক্ষণ প্রক্রিয়া, শিখন-শিক্ষণ উপকরণ প্রভৃতির মূল্যায়নের জন্যও শিক্ষার লক্ষ্য অপরিহার্য।

[5] শিক্ষামূলক প্রচেষ্টার তাৎপর্য উপলদ্ধি : শিক্ষাবিদদের মতে, সকল বুদ্ধিদীপ্ত কাজই লক্ষ্যাভিমুখী হয়। তাই শিক্ষার মতাে বুদ্ধিদীপ্ত একটি কাজের ক্ষেত্রে যদি আগে থেকে লক্ষ্য নির্ধারণ করা না-হয়, তাহলে শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী শিক্ষাকালীন আচরণের কোনাে তাৎপর্য খুঁজে পায় না। তাই শিক্ষার লক্ষ্য নির্ধারণ বিশেষভাবে প্রয়ােজনীয়। 

[6] সময় ও শ্রমের সাশ্রয় : শিক্ষার লক্ষ্য শিক্ষার্থীদের বৌদ্ধিক সক্রিয়তা বৃদ্ধিতে বিশেষভাবে সহায়ক হয়। লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য শিক্ষার্থীরা নিজেদের আচরণের পরিবর্তন ঘটায়। সাফল্যলাভের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করে। নির্দিষ্ট লক্ষ্যই শিক্ষার্থীর সময় ও শ্রমের সাশ্রয় ঘটায়। লক্ষ্য নির্ধারণ করা না-হলে, অনেকক্ষেত্রে সময় ও শ্রম উভয়ের অপচয় ঘটে।

[7] ধারাবাহিকতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে সহায়তা : শিক্ষা একটি সচেতন ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। শিক্ষা প্রক্রিয়ার ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য শিক্ষার লক্ষ্য অপরিহার্য। 

[8] রাষ্ট্রের উন্নয়নে সহায়তা : প্রত্যেকটি রাষ্ট্রের উন্নয়নের জন্য শিক্ষার সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য থাকা বাঞ্ছনীয়। শিক্ষার জাতীয় লক্ষ্য না-থাকলে দেশের উন্নয়ন পদে পদে ব্যাহত হয়।

উপরােক্ত আলােচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, কর্মসম্পাদনের স্পৃহা বাড়ানাের জন্য, কর্মপ্রচেষ্টাকে তাৎপর্যপূর্ণ। করার জন্য, শিক্ষার অগ্রগতি সম্পর্কে সচেতন হওয়ার জন্য, বুদ্ধিদীপ্তভাবে কর্মসম্পাদনের জন্য, কর্মসম্পাদনের উপযুক্ত উপায় নির্ধারণের জন্য, সর্বোপরি শিক্ষার কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য শিক্ষার লক্ষ্য বিশেষভাবে প্রয়ােজনীয়।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment