কৈশোরকাল, বাল্যকাল ও বয়ঃসন্ধিকালের সমস্যা সমাধানে পিতা মাতা ও সমাজের ভূমিকা

কৈশোরকাল, বাল্যকাল ও বয়ঃসন্ধিকালের সমস্যা সমাধানে পিতা মাতা ও সমাজের ভূমিকা

উত্তর:

শৈশবকালের সমস্যাগুলির নিরিখে বলা যায়, দৈহিক ও সঞ্চালনমূলক বিকাশ যাতে সুষ্ঠুভাবে হয় তার জন্য শৈশব অবস্থা থেকে আয়ােজন করতে হবে। একটি শিশু জন্মাবার পর যখন সে শয্যায় শায়িত থাকে তখন বিভিন্ন ঝুলন্ত রঙিন খেলনা যদি তার সামনে ঝুলিয়ে রাখা হয় তাহলে ওই উজ্জ্বল বস্তুটির প্রতি আগ্রহের দরুন শিশু হাত, পা নড়াচড়া করতে উদ্যত হবে। পরবর্তীকালে যখন প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রবেশ করবে তখন।

বিভিন্ন প্রকারের দৈহিক খেলাধুলা, বুদ্ধির বিকাশের জন্য বিভিন্ন আকৃতি গঠন করার Puzzle ইত্যাদির ব্যবস্থা যদি বিদ্যালয়ে থাকে তবে শৈশবকালীন সমস্যাগুলি অতিক্রম করা যাবে।

বাল্যকালের সমস্যা সমাধানে পিতামাতা ও সমাজকে অগ্রণী। ভুমিকা গ্রহণ করতে হবে। বালক-বালিকার দৈহিক বিকাশের জন্য যেমন দৈহিক খেলাধুলামুলক প্রতিযােগিতা, ব্যায়াম, জিমন্যাস্টিকস ইত্যাদির আয়ােজন করা প্রয়ােজন ঠিক তেমনি মানসিক ক্ষমতার বিকাশ যাতে সুসম্পন্ন হয় তার জন্য পিতামাতা ও শিক্ষক-শিক্ষিকা উভয়কেই এগিয়ে আসতে হবে।

অনেক সময় কোনাে বালক-বালিকা বাড়িতে এমন অনেক কথা বলে যা সম্পূর্ণভাবে অর্থ প্রকাশ করে না তখন পিতামাতার কর্তব্য হল ওই ছেলে বা মেয়েটিকে অবহেলা না-করে গুরুত্ব সহকারে তার বক্তব্য শ্রবণ করা ও সহানুভূতির সঙ্গে তাকে সঠিক অর্থ উপলব্ধিতে সহায়তা করা। বিদ্যালয়ে এই বয়সের ছেলেমেয়েদের মানসিক বিকাশকে উৎসাহিত করার জন্য গল্প বলা, বিতর্ক, কুইজ ইত্যাদির ব্যবস্থা করা একান্তভাবে কাম্য। বিদ্যালয়ে Wall Magazine বিভিন্ন প্রকারের বাৎসরিক প্রতিযােগিতার আয়ােজন, শিক্ষামূলক ভ্রমণ ইত্যাদির মাধ্যমে এই বয়সের ছেলেমেয়েদের সমস্যা সমাধান করার ক্ষেত্রে সমাজের অগ্রসর হওয়া বাঞ্ছনীয়। এই বয়সে দলের মধ্যে যেহেতু প্রত্যেক সদস্যের প্রত্যেককেই সহযােগিতা করার প্রবণতা দেখা যায় তাই দলগঠনে পরিবার ও সমাজের প্রত্যেকেরই এদের উৎসাহিত করা প্রয়ােজন ও গুরুত্বপূর্ণ।

বয়ঃসন্ধিকালে যেহেতু কিশাের-কিশােরীদের মধ্যে এক অভূতপূর্ব পরিবর্তন আসে সেহেতু এইসময় এদের দৈহিক শক্তিও ততােধিক বৃদ্ধি পায়। এজন্য বিদ্যালয়ে বিভিন্ন দৈহিক কাজকর্ম-এর আয়ােজন করা খুবই যুক্তিযুক্ত। যেমন—বাগান তৈরি ও পরিচর্যা করা, বিদ্যালয় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দায়িত্ব সহকারে বজায় রাখা, বিভিন্ন প্রকার দৈহিক খেলাধুলা, বাৎসরিক ক্রীড়া প্রতিযােগিতা ইত্যাদির ব্যবস্থা করা। স্কাউটিং এই বয়সে খুবই যথােপযুক্ত ক্রিয়া।

সাঞ্ছালনমূলক বিকাশের ক্ষেত্রে নৃত্য শিক্ষণ খুবই উপযােগী এই বয়সের ছেলেমেয়েদের ক্ষেত্রে। কিশাের-কিশােরীদের Physical Education এবং Work Education-এ উৎসাহিত করতে হবে যাতে শারীরিক ও মানসিক শক্তি সঠিক দিকে পরিচালিত হতে পারে। মানসিক চাহিদা পূরণের ক্ষেত্রে উপযুক্ত পাঠাগার-এর ব্যবস্থা বিদ্যালয়ে করতে হবে এবং প্রচুর পরিমাণে সহায়ক পুস্তক পাঠের প্রতি আগ্রহের সঞ্চার করতে হবে। ছাত্রছাত্রীদের সৃষ্টিমূলক চিন্তাভাবনাকে উৎসাহিত করার জন্য এবং সৃজনমুলক চাহিদাকে তৃপ্ত করার জন্য হস্তশিল্প, অঙ্কন, নাটক, আবৃত্তি ইত্যাদি শিক্ষণের ব্যবস্থা বিদ্যালয়ে করতে হবে। বিদ্যালয়ে বিভিন্ন মনীষীদের সম্পর্কে আলােচনাসভা, স্বাধীনতা দিবস পালন ইত্যাদির মধ্য দিয়ে কিশাের-কিশােরীদের বিভিন্ন প্রকার চাহিদা তুপ্তির ব্যবস্থা করতে হবে যাতে তারা নিজেদের আত্মপ্রকাশ করতে পারে। এই আত্মপ্রকাশের মধ্য দিয়ে বিভিন্ন অন্তর্দ্বন্দ্বের সমাধান হয়। এইভাবেই কিশাের-কিশােরীরা পূর্ণ ব্যক্তিত্বসম্পন্ন সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে পারবে।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment