বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি বা বিশ্লেষণাত্মক পদ্ধতি সম্পর্কে টীকা লেখো
উত্তর :
কোনাে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা দেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থার সাথে ওতপ্রােতভাবে জড়িত। এই সুসম্পর্কের জন্যই তুলনামূলক শিক্ষার প্রয়ােজন। যেকোনাে তুলনামূলক আলােচনার ক্ষেত্রে বিশ্লেষণের প্রয়ােজন আছে। কারণ বিশ্লেষণের মাধ্যমে আমরা উপাদানগুলিকে পৃথক করতে পারি এবং প্রত্যেকের ভূমিকা, গুরুত্ব কীরূপ তা আলাদাভাবে জানতে পারব। এইজন্য এই পদ্ধতিকে বিশ্লেষণাত্মক পদ্ধতি বলে। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি সাধারণত গবেষণার কাজে ব্যবহার করা হয়। সামাজিক প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে তুলনা করতে এই পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়।
বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির ধাপ :
এই পদ্ধতিতে চারটি ধাপ অনুসরণ করা হয়।
1) শিক্ষা সংক্রান্ত তথ্য সংরক্ষণ : বিশ্লেষণাত্মক পদ্ধতির প্রথম ধাপের কাজ হলাে। শিক্ষা সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য বর্ণনামূলক ও পরিসংখ্যানমূলক পদ্ধতিতে সংগ্রহ করতে হবে। সেই তথ্যগুলিকে ভিন্ন ভাগে সজ্জিত করতে হবে।
2) সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও ঐতিহাসিক তথ্যের সংব্যাখ্যান : বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন রকমের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও ঐতিহাসিক প্রভাব শিক্ষাব্যবস্থার উপর কীরূপ প্রভাব বিস্তার করে তা বুঝতে হলে এই তথ্যগুলির সংব্যাখ্যান প্রয়ােজন আছে। এ থেকে শিক্ষার সাথে প্রভাবক সম্পর্কের কতটা গভীর তা জানা যাবে।
3) তুল্যমান নির্ণয় করা : বিভিন্ন শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যে মিল এবং পার্থক্যগুলি খুঁজে বের করার পর তাদেরকে পরস্পরের সঙ্গে তুলনা করার জন্য একটি নির্দিষ্ট তুল্যমান নির্ণয়। করতে হয়। বিশ্লেষণাত্মক পদ্ধতি এই তুল্যমান নির্ণয় করে থাকে। যেমন—রাজনৈতিক দর্শন, শিক্ষার লক্ষ্য এবং শিক্ষা নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ইত্যাদি একই তুল্যমানের তুলনা করা। যায়। এভাবে যার যার দেশের তুল্যমানের ভিত্তিতে তার শিক্ষাব্যবস্থার পরিস্থিতি বিচার করে তবে অন্য দেশের উক্ত বিষয়ের মানের তুলনা করা হয়। তাহলে সত্যিকারের মিল বা পার্থক্য পাওয়া যাবে।
উদাহরণ a. আমরা জানি, রাজনৈতিক দর্শনে ভারত ও চিনের মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য রয়েছে। তাই শিক্ষাব্যবস্থাতেও পার্থক্য থাকবে।
উদাহরণ b. : যদি ধরি U.S.A শিক্ষাখাতে জাতীয় বাজেটে 5000 কোটি ডলার ব্যয় করে এবং ভারত শিক্ষাখাতে 1000 কোটি টাকা ব্যায় করে, তবে এথেকে দুই দেশের মধ্যে তুলনা করা যায় না। এক্ষেত্রে মােট আয়ের শতাংশ প্রকাশ করতে হবে। অর্থাৎ U.S.A তার বার্ষিক বাজেটে 10% শিক্ষাখাতে ব্যয় করে এবং ভারত তার বার্ষিক বাজেটে 3% শিক্ষাখাতে ব্যয় করে, তবে শিক্ষাব্যবস্থার সাথে তুলনা করা যায়। কারণ দুই দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি একরকম নয়।
4) সংব্যাখ্যান ও সিদ্ধান্ত : উপরিউক্ত তিনটি ধাপের মধ্য দিয়ে সংগৃহীত তথ্যগুলির সংব্যাখ্যান করা হয় এবং তুলনার উপর ভিত্তি করে একটি নির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে উপনীত হতে হয়। শিক্ষাবিদ George Bereday এই পদ্ধতি ব্যবহার করতেন।
যদিও এই পদ্ধতির যথেষ্ট উপযােগিতা রয়েছে, তবুও এর কিছু অসুবিধা আছে।
বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির সীমাবদ্ধতা :
1) বিশ্লেষণাত্মক পদ্ধতিতে শিক্ষাব্যবস্থার সামগ্রিকতার উপর খুব বেশি মনােযােগ দেওয়া হয় না।
2) বিভিন্ন শিক্ষাব্যবস্থায় অমিল যেমন আছে তেমনি মিলও রয়েছে নিয়ন্ত্রকগুলির মধ্যে। তাই সেই মিলগুলি এখানে পাওয়া যাবে না। সেক্ষেত্রে সংশ্লেষণাত্মক পদ্ধতি অবলম্বন করতে হয়। তাই তুলনামূলক শিক্ষায় এই পদ্ধতির বিস্তার সর্বত্র নয়।
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।