তুলনামূলক শিক্ষার উদ্দেশ্য এবং পরিধি বর্ণনা করাে
উত্তর :
তুলনামূলক শিক্ষার উদ্দেশ্য
তুলনামূলক শিক্ষা একটি ইন্টারডিসিপ্লিনারি কোর্স। এটি বিভিন্ন বিষয়-এর। ধারণা একত্রিত হয়ে গড়ে উঠেছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অন্য যে-সমস্ত বিষয় পড়ানাে হয়। তুলনামূলক শিক্ষা তেমনি একটা বিষয়, অন্য সমস্ত বিষয়ের মতাে এরও কিছু উদ্দেশ্য রয়েছে। Hans (1992)-এর মতে, তুলনামূলক শিক্ষার উদ্দেশ্য হলাে —
তুলনামূলক শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য হলাে শিক্ষার উপাদানগুলিকে ঐতিহাসিক দিক থেকে বিশ্লেষণ করা এবং তুলনামূলক আলােচনা করে সমস্যার সমাধান করা।
এছাড়া সাদৃশ্যমূলক দেশগুলির শিক্ষাব্যবস্থা সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের অবগত করানাে, তারা যাতে নিজের দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে বুঝতে পারে এবং একবিংশ শতকের বিশ্বায়নের নাগরিক হিসাবে অন্যদের সঙ্গে মানিয়ে চলার জন্য, নিজের ভবিষ্যতের জন্য যে পরিবর্তন করা প্রয়ােজন সেগুলি সম্পর্কে ধারণালাভ করতে পারে। তুলনামূলক শিক্ষার উদ্দেশ্য হচ্ছে পরিবর্তন এবং স্থানীয় অবস্থার চাহিদা অনুযায়ী জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থাকে সংস্কার করা।
1) একটি দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলাের প্রকৃতির পাশাপাশি শিক্ষামূলক অনুশীলন সম্পর্কে জানা এবং নিজের দেশের শিক্ষা অনুশীলকে উন্নত করতে সহায়তা করা।
2) বিভিন্ন শিক্ষাগত পরিবর্তনের জন্য যে উপাদান দায়ী বা প্রভাব ফেলতে সক্ষম তাদের বােঝার ক্ষেত্রে সহায়তা করা।
3) ছাত্র ও শিক্ষকদের বিভিন্ন দেশের শিক্ষাপদ্ধতি সম্পর্কে অবগত করা যার মাধ্যমে নিজেদের শিক্ষাব্যবস্থায়, পদ্ধতিতে পরিবর্তন ঘটানাে যায়।
4) শুধুমাত্র শিক্ষা উন্নয়নে নয়, সমাজের সাধারণ বা সামগ্রিক উন্নয়নে অবদান রাখা।
5) একাডেমিক বা শিক্ষাগত অনুশাসন বা শৃঙ্খলা কেমন হওয়া উচিত তাতে সহায়তা
6) একজনের (শিক্ষক/শিক্ষার্থী) শিক্ষাগত সমস্যা সমধানে সহায়তা করা।
7) অন্য দেশের শিক্ষাগত দর্শন, তত্ত্ব ও অনুশীলনগুলির প্রতি নজর রাখা যাতে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা যায়।
8) বিভিন্ন দেশের শিক্ষাব্যবস্থা সম্পর্কে নির্ভরযােগ্য তথ্য সংগ্রহ করার ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন বা আলাদা আলাদা বিভাগের ছাত্র ও শিক্ষক উভয়কেই সহায়তা করা।
9) বিভিন্ন দেশের মধ্যে পারস্পরিক আন্তর্জাতিক সম্পর্কের প্রচারে সহায়তা করা।
10) একটি দেশের শিক্ষাব্যবস্থা প্রণয়নে, উন্নয়নেও সংস্কারে অবদান রাখা।
তুলনামূলক শিক্ষার পরিধি :
তুলনামূলক শিক্ষার পরিধির পাঁচটি দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। এগুলাে হলাে—
1) বিষয় এবং বিষয়বস্তু (The subject matter and content) : এর মধ্য শিক্ষাব্যবস্থার অপরিহার্য উপাদানগুলি অন্তর্ভুক্ত। যেমন—শিক্ষাব্যবস্থার গঠন, লক্ষ্য, বিষয়বস্তু বা পাঠক্রম প্রশাসন, অর্থায়ন, শিক্ষক, শিক্ষা ইত্যাদি।
2) অধ্যয়নের ভৌগােলিক ইউনিট (Geographical units of study) : এর মধ্যে পড়ে আন্তর্জাতিক, আঞ্চলিক, মহাদেশীয় এবং বৈশ্বিক বা বিশ্ব ব্যবস্থার অধ্যয়ন এবং বিশ্লেষণ।
3) মতাদর্শগত সুযােগ (Ideological scope) : এখানে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক মতাদর্শের ভিত্তিতে বিভিন্ন দেহের শিক্ষাব্যবস্থার তুলনা করা হয়। যেমন—গণতান্ত্রিক সাম্যবাদ, সমাজতান্ত্রিক, পুঁজিবাদী ও মিশ্র অর্থনীতি।
4) থিম্যাটিক সুযােগ (Thematic scope) : এখানে বিভিন্ন দেশের শিক্ষাগত ধারণা, সামাজিক বিষয় বা সমস্যার উপর আলােকপাত করা হয় এবং এক বা একাধিক ভৌগােলিক এককের মধ্যে তুলনা করা হয়। যেমন বিনা মূল্যে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা, সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা, সবার জন্য শিক্ষা এবং সর্বজনীন উচ্চশিক্ষা ইত্যাদি।
5) ঐতিহাসিক বা স্থানিক সুযােগ (The historical or spatial scope) : কীভাবে, কোন পর্বের মধ্য দিয়ে এই বিষয়টি ঐতিহাসিকভাবে বিকশিত হয়েছে তার। বিবরণ দেওয়া হয়। অতীতে মানুষ ভ্রমণপিপাসুদের কাহিনির মাধ্যমে অন্য দেশের শিক্ষাব্যবস্থা সম্পর্কে জানতে পারতাে, যা আজ/আধুনিক যুগে সামাজিক বিজ্ঞানের। দৃষ্টিভঙ্গির প্রেক্ষিতে দেখা হয়।
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।