তুলনামুলক শিক্ষায় সমসাময়িক পদ্ধতি উল্লেখ করো

তুলনামুলক শিক্ষায় সমসাময়িক পদ্ধতি উল্লেখ করো

উত্তর :

তুলনামুলক শিক্ষায় সমসাময়িক পদ্ধতি

তুলনামূলক শিক্ষার জনক মাইকেল স্যাডলার সর্বপ্রথম তুলনামূলক শিক্ষা সম্বন্ধে আলােকপাত করে এর সংজ্ঞা প্রদান করেন। তুলনামূলক শিক্ষার অর্থ হচ্ছে বিভিন্ন দেশ, সমাজের শিক্ষাব্যবস্থার তুলনামূলক পর্যালােচনা।

তুলনামূলক শিক্ষার উৎস :

অতীত কাল থেকে বিদেশি শিক্ষার সঙ্গে পরিচিত হওয়ার আগ্রহ মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি হিসাবে প্রমাণিত। আদিকালে ভ্রমণবিলাসীগণের শিক্ষা সম্পর্কে পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে নানা দেশের শিক্ষাব্যবস্থা সম্পর্কে জানা যায়। তাদের সকল অভিজ্ঞতা প্রকাশ করা হতাে ভ্রমণকাহিনির মাধ্যমে। প্রাচীন কালে গ্রিক পণ্ডিত জেনােফোন পারস্যে যান শুধুমাত্র শিক্ষা ও আইন সম্পর্কে জ্ঞানলাভ করার

জন্য। তাঁর লেখনীর মাধ্যমে গ্রিক ও পারস্যের শিক্ষা সম্পর্কে নানা তথ্য মানুষ জানতে পারে। মধ্যযুগে আরব বণিক সুলাইমানের ভ্রমণকাহিনির মাধ্যমে চিনের শিক্ষার ইতিবৃত্ত প্রকাশ পায়। মার্কোপােলাে, খ্রিস্টান মিশনারি ও পাের্তুগিজ ধর্ম প্রচারকগণ চিন ও জাপান ভ্রমণ করেন এবং চিন ও জাপানের শিক্ষাব্যবস্থা সম্বন্ধে প্রমাণ রেখে যান। পরিব্রাজক আই সিং এবং হিউয়েন সাং ভারতের শিক্ষাব্যবস্থা সম্বন্ধে নানা তথ্য লিপিবদ্ধ করেন। এভাবে যুগে যুগে পণ্ডিত ও পরিব্রাজকগণের বর্ণনায় বিভিন্ন দেশের শিক্ষাব্যবস্থা সম্বন্ধে জানা যায়। পরবর্তীতে বিশেষজ্ঞগণ এসব লেখনীর মাধ্যমে প্রাপ্ত। তথ্যের আলােকে বিভিন্ন দেশের শিক্ষাব্যবস্থা সম্বন্ধে তুলনামূলক বিশ্লেষণ করেন। এসব ঐতিহাসিক তথ্য থেকে প্রতীয়মান হয় যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় যে তুলনামূলক চিত্র জানা যায় তা প্রকৃতভাবে তুলনামূলক শিক্ষার উপজীব্য বিষয়বস্তু। হিসেবে পরিগণিত।

উনিশ শতকের শুরুতেই শিক্ষাবিদগণ বিভিন্ন দেশের শিক্ষার বিষয় নিয়ে গভীরভাবে অনুশীলন করতে উদ্যোগী হন। তখন বিভিন্ন দেশের শিক্ষার তুলনা করার জন্য শিক্ষা সম্পর্কীয় প্রবন্ধ গ্রন্থ, গবেষণা রিপাের্ট প্রকাশ করা হয়। এই সূত্র ধরে বিভিন্ন দেশের শিক্ষাসমস্যা, জনসম্পদ ও অর্থনৈতিক সম্পদের সঙ্গে সংগতি রেখে শিক্ষার চাহিদা, শিক্ষার সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যের গবেষণা করা হয়। এভাবে দেশের শিক্ষাবিদগণের কাছে অন্যান্য বিষয় অপেক্ষা তুলনামূলক শিক্ষা পৃথকভাবে গ্রহণযােগ্য হয়ে ওঠে। ফলে তুলনামূলক শিক্ষাকে তুলনামূলক আলােচনার মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে বিভিন্ন দেশের শিক্ষার সমস্যা এবং সমাধানও তুলনামূলক শিক্ষার আওতায় আনা হয়। তুলনামূলক বিভিন্ন বিষয় যেমন—নৃতত্ত্ব, সাহিত্য, ধর্ম, আইন, শারীরতত্ত্ব, রাষ্ট্রনীতি প্রভৃতি বিষয়ের মতাে প্রায় একইভাবে তুলনামূলক শিক্ষার সূচনা হয়।

অন্যদিকে তুলনামূলক শিক্ষার প্রাথমিক পর্যায়ে শুধুমাত্র অন্য দেশের প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থা, নিয়মনীতি অধ্যয়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল এবং তখন শুধু ঐতিহাসিক পদ্ধতি অনুসরণ করা হতাে। কিন্তু পরবর্তীতে শিক্ষাবিদ চার্লস মন্টেস্কুই বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি প্রয়ােগ করে গবেষণার মাধ্যমে এই বিষয়টিকে আরও আধুনিক রূপদান করেন।

তুলনামূলক শিক্ষার কার্যকারিতা :

শিক্ষাবিদগণ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে গবেষণা করে তুলনামূলক শিক্ষার বিষয়টিকে মর্যাদার দ্বারা সুপ্রতিষ্ঠিত করেছেন। বহু যুগ ধরে বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন গ্রন্থ, প্রবন্ধ, রিপাের্ট ও গবেষণা করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে বিভিন্ন দেশের শিক্ষার উন্নয়নের কারণে এগুলাের প্রয়ােজন ছিল। তুলনামূলক শিক্ষা অধ্যয়নে একদিকে যেমন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শিক্ষাব্যবস্থা সম্বন্ধে জানা যায়, তেমনি অন্যদিকে শিক্ষা সংস্কারের জন্যও বিষয়টির সর্বাধিক কার্যকরী গুরুত্ব রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন দেশের মধ্যে ঐক্য ও সমঝােতা সৃষ্টির জন্যও এই বিষয়টি অধ্যয়ন করা প্রয়ােজন। তুলনামূলক শিক্ষা ক্রমেই আধুনিক রূপ লাভ করেছে। আধুনিক তুলনামূলক শিক্ষার জনক স্যাডলার বিভিন্ন দেশের শিক্ষা সম্বন্ধে অধ্যয়ন এবং ধনাত্মক দিকগুলাে নিজ নিজ দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় প্রয়ােগ করার ক্ষেত্রে ইতিবাচক মতপ্রকাশ করেন। বিদেশি শিক্ষার অভিজ্ঞতার আলােকে নিজ দেশের শিক্ষাব্যবস্থা গভীরভাবে উপলব্ধি করা যায়। এমনকী দোষ-গুণ, সাদৃশ্য-বৈসাদৃশ্য বিচার-বিশ্লেষণ করাও সহজ হয়। পরবর্তীতে উদঘাটিত সমস্যার সমাধানে কোন দেশ, কী পন্থা অবলম্বন করে তা এই বিষয়টি অনুশীলনের মাধ্যমেই জানা যায়।

বর্তমান যুগে শিক্ষা সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিকতার বৈশিষ্ট্যের ছাপ সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে। একারণে শিক্ষাবিদগণ বৃহত্তর পরিবেশের কথা চিন্তা করে শিক্ষার উন্নয়নে সচেষ্ট হন। বৈদেশিক শিক্ষার সঙ্গে সংগতি রেখে তারা নিজ দেশের শিক্ষার সমস্যা সমাধান, পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করেন। আবার নিজ দেশে শিক্ষাগ্রহণ শেষে শিক্ষার্থীরা অন্য দেশে গিয়ে যেন প্রয়ােগ করতে পারে বা মর্যাদা পায় শিক্ষা সংস্কারের ক্ষেত্রে সেদিকেও লক্ষ রাখা হয়। অর্থাৎ এবিষয়ে অধ্যয়নের প্রেক্ষিতে একদিকে যেমন শিক্ষার উন্নয়ন করা যায়, অন্যদিকে তেমনি শিক্ষার চাহিদা নিবৃত্ত করার ধারণা সম্প্রসারিত করার সুযােগও সৃষ্টি হয়।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment