শিক্ষা-মনােবিজ্ঞান কাকে বলে? শিক্ষামনােবিজ্ঞানের বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করাে। শিক্ষা-মনােবিজ্ঞানের প্রধান দিকগুলি সংক্ষেপে আলােচনা করাে
উত্তর :
শিক্ষা-মনােবিজ্ঞান :
শিক্ষা-মনােবিজ্ঞান হল মনােবিদ্যার প্রয়ােগমূলক এমন একটি শাখা যা শিক্ষার্থীর বা শিশুর শিক্ষাকালীন আচরণ নিয়ে চর্চা করে এবং মনােবিজ্ঞানের বিভিন্ন তত্ত্ব ও নীতিগুলিকে শিক্ষাক্ষেত্রে প্রয়ােগ করে।
মনােবিদ স্কিনার-এর মতে শিক্ষা-মনােবিজ্ঞান, মনােবিজ্ঞানের সেই শাখা যা শিক্ষণ ও শিখন নিয়ে আলােচনা করে।
মনােবিদ জাড-এর মতে “শিক্ষা-মনােবিজ্ঞান হল সেই বিজ্ঞান যা বিকাশের বিভিন্ন স্তরের মধ্য দিয়ে অতিক্রান্ত শিশুদের মধ্যে যে পরিবর্তনগুলি সংগঠিত হয়, তা ব্যাখ্যা করে।
শিক্ষা-মনােবিজ্ঞানের বৈশিষ্ট্য :
শিক্ষা-মনােবিজ্ঞানের উল্লেখযােগ্য বৈশিষ্ট্যগুলি হল—
[1] শিক্ষা-মনােবিজ্ঞান, শিক্ষাবিজ্ঞান ও মনােবিজ্ঞান-এর মধ্যে সংযােগ রক্ষা করা।
[2] শিক্ষা-মনােবিজ্ঞান শিশুর শিক্ষাকালীন আচরণগুলিকে পর্যবেক্ষণ করে।
[3] শিক্ষা-মনােবিজ্ঞান, শিশুর বা ব্যক্তির শিখন পরিস্থিতি ও শিখন প্রক্রিয়ার সাথে সম্পর্কযুক্ত, যার দ্বারা সমগ্র শিখনকে । অনেক বেশি পরিমাণে সক্রিয় করে তােলে।
[4] শিক্ষা-মনােবিজ্ঞান হল প্রয়ােগমূলক মনােবিদ্যার গুরুত্বপূর্ণ শাখা। শিক্ষা-মনােবিজ্ঞানের প্রধান দিক : শিক্ষা-মনােবিজ্ঞানের প্রধান দিকগুলি হল—শিক্ষার্থী, শিখন প্রক্রিয়া, শিখন পরিস্থিতি, শিক্ষণমূলক পরিস্থিতি, শিখন সম্পাদনের মূল্যায়ন ইত্যাদি। নীচে। এগুলির সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলােচনা করা হল
[1] শিক্ষার্থী : শিক্ষার প্রধান উপাদান হল শিক্ষার্থী। শিক্ষা। হবে শিক্ষার্থীকে কেন্দ্র করে, শিক্ষার্থীর চাহিদা, প্রবণতা, আগ্রহ, সামর্থ্য ইত্যাদি অনুযায়ী। শিক্ষার্থীর সর্বাঙ্গীণ বিকাশ হল শিক্ষার লক্ষ্য। শিক্ষার্থীর বিকাশ প্রক্রিয়া ভিতর থেকে সংঘটিত হয়। শিক্ষা-মনােবিজ্ঞানের জ্ঞান শিক্ষার্থীর অন্তর্নিহিত সম্ভাবনাগলি উপলব্বিতে শিক্ষককে সাহায্য করে।
[2] শিখন প্রক্রিয়া : শিখন হল ক্ৰমবিকাশমান একটি প্রক্রিয়া। শিশু বা শিক্ষার্থী যত বড়াে হতে থাকে, পরিবেশের সাথে সংগতিবিধান করতে গিয়ে নানা অভিজ্ঞতা অর্জন করে। এইভাবে অভিজ্ঞতা অর্জনের সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার্থীর। যে শিখনের বিকাশ ঘটে তা ধীরে ধীরেই সম্পাদিত হয়। শিক্ষা-মনােবিজ্ঞানের জ্ঞান শিখন বিকাশ অনুধাবনে সহায়তা করে। শুধু তাই নয়, শিক্ষক-শিক্ষিকার মধ্যে শিক্ষার্থীর শিখন প্রক্রিয়া সম্পর্কিত প্রয়ােজনীয় জ্ঞান বা অভিজ্ঞতা থাকা অবশ্যই দরকার। এটির অভাব ঘটলে শিখনমূলক কার্যাবলি ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।
[3] শিখন পরিস্থিতি : শিক্ষা-মনােবিজ্ঞানের জ্ঞান শিশুর বা শিক্ষার্থীর শিখনমূলক পরিস্থিতির ব্যাবহারিকতা নির্ধারণ ও লক্ষ্য বিশ্লেষণে বিশেষভাবে সাহায্য করে। শিক্ষা-মনােবিজ্ঞান তাই শিক্ষার্থীদের শিখনমূলক আচরণ অনুশীলনকারী বিজ্ঞান হিসেবে সমাদৃত হয়।
[4] শিক্ষণমূলক পরিস্থিতি : শিক্ষণকে ছাত্রছাত্রীদের কাছে আকর্ষণীয় এবং গ্রহণযােগ্য করে তােলার ক্ষেত্রে শিক্ষা-মনােবিজ্ঞান-এর জ্ঞান বিশেষভাবে সহায়তা করে। শ্রেণিশিক্ষণের কাজে নিজেকে যুক্ত করার আগে প্রত্যেক শিক্ষক-শিক্ষিকার শিক্ষা-মনােবিজ্ঞানের জ্ঞান অর্জন বিশেষভাবে প্রয়ােজনীয়।
[5] শিখন সম্পাদনের মূল্যায়ন : শিক্ষার্থীরা জ্ঞানার্জনের ক্ষেত্রে বা শিখনের ফলে কতটা পারদর্শিতা অর্জন করেছে, তা সঠিকভাবে যাচাই করার জন্য মূল্যায়ন করা হয়। এক্ষেত্রে শিক্ষা-মনােবিজ্ঞানের জ্ঞান সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এ ছাড়া শিক্ষামূলক সমস্যার ওপর বিভিন্ন ধরনের গবেষণা সংগঠন করা এবং রাশিবিজ্ঞান পদ্ধতির দ্বারা বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে শিক্ষা-মনােবিজ্ঞানের জ্ঞানের দরকার হয়।
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।
শিক্ষা মনোবিজ্ঞানের বৈশিষ্ট্য