জাতীয় শিক্ষা প্রসঙ্গে স্বামী বিবেকানন্দের পরিকল্পনা | শিক্ষার পাঠক্রম ও নারীশিক্ষা সম্পর্কে বিবেকানন্দের মত
অথবা, জাতীয় শিক্ষা প্রসঙ্গে স্বামী বিবেকানন্দের পরিকল্পনা কী ছিল? শিক্ষার পাঠক্রম ও নারীশিক্ষা প্রসঙ্গে বিবেকানন্দের অভিমত ব্যক্ত করাে। 3 + 3 + 2
উত্তর :
জাতীয় শিক্ষা প্রসঙ্গে স্বামী বিবেকানন্দের পরিকল্পনা :
জাতীয় শিক্ষা প্রসঙ্গে বিবেকানন্দ বলেছিলেন— শিক্ষার্থীকে শুধুমাত্র অধ্যয়ন ও আত্মােন্নতির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না। তাকে সমাজসেবার মহান উদ্দেশ্যে নিয়ােজিত করতে হবে। তিনি জাতীয় শিক্ষার সর্বদিকে বিপ্লব সৃষ্টি করেছিলেন। তিনি ছিলেন জাতীয় আদর্শের পথপ্রদর্শক। তিনি ভারতীয়দের জন্য নিম্নলিখিত পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করেন—
[1] আধ্যাত্মিক চেতনার বিকাশ : মানবজীবনের মূল লক্ষ্য হবে পরমসত্যকে উপলব্ধি করা। শিক্ষার দ্বারা পরমসত্য উপলব্ধি করা সম্ভব। ফলে প্রতিটি ব্যক্তির আধ্যাত্মিক চেতনা (Spiritual Ideas)-র বিকাশ ঘটবে।
[2] আত্মচেতনার বিকাশ : প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে আত্মচেতনার মধ্য দিয়ে শিক্ষা অর্জন করতে হবে। ফলে তার অন্তর্নিহিত জ্ঞানের প্রকাশ ঘটবে। যা মানুষকে শুদ্ধ ও পবিত্র করে তুলবে ও আত্মনির্ভরশীল করে তুলবে।
[3] নৈতিক চেতনার বিকাশ : প্রত্যেক শিক্ষার্থীর মধ্যে নৈতিক চেতনার বিকাশ ঘটাতে হবে। ফলে তার মধ্যে জন্ম নেবে পরার্থপরতা বােধ, সেবাপরায়ণতা।
[4] গণশিক্ষার ওপর গুরুত্ব প্রদান : সবার মধ্যে শিক্ষা বিস্তার না-করলে—এ দেশের উন্নয়ন কোনােভাবে সম্ভব নয়—তা তিনি উপলব্ধি করেছিলেন। তাই সমাজ তথা দেশের প্রয়ােজনে গণশিক্ষার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।
[5] দেশাত্ববােধের বিকাশ : স্বদেশপ্রেম ও জাতীয়তাবােধ তাঁর সমস্ত শিক্ষাচিন্তার ছিল প্রেরণা। “দেশবাসী আমাদের প্রধান উপাস্য দেবতা, তাদের পূজা আমাদের সর্বপ্রথম কাজ” —এটাই ছিল বিবেকানন্দের মত।
[6] স্বনির্ভরতা অর্জন : তিনি বৃত্তিমুখী শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দিয়েছিলেন। ব্যক্তির মধ্যে শিক্ষার বিকাশ হলে সে স্বাবলম্বী হয়ে উঠতে সক্ষম হবে।
[7] দেশীয় ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সংরক্ষণ : প্রতিটি শিক্ষার্থীকে দেশের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির ওপর শ্রদ্ধাশীল হতে হবে এবং তাকে প্রসার ঘটাতে সচেষ্ট হতে হবে। উপরের বিষয়গুলির পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, জাতীয় শিক্ষা সম্পর্কে বিবেকানন্দের পরিকল্পনা ছিল সময়ােপযােগী ও বাস্তবসম্মত।
শিক্ষার পাঠক্রম সম্পর্কে বিবেকানন্দের মত :
বিবেকানন্দ ভারতীয় শিক্ষার উন্নতিকল্পে যে পাঠক্রম নির্ধারণ করেছেন, সে সম্পর্কে উল্লেখ করা যায় –
[1] শিক্ষার্থীর আত্মচেতনা ও নৈতিক বিকাশের জন্য ধর্মশিক্ষা।
[2] মাতৃভাষা অধ্যয়ন, ভারতীয় মহাকাব্য, উপনিষদ থেকে ঘটনাবলি পাঠ।
[3] বিদেশের সাথে সম্পর্ক স্থাপনের জন্য ইংরেজি ভাষা শিক্ষা।
[4] ভারতীয় সংস্কৃতি সম্পর্কে জানার জন্য সংস্কৃত ভাষা অধ্যয়ন।
[5] মহাপুরুষের বাণী পাঠ, সংগীতচর্চা, চিত্রাঙ্কন ইত্যাদি।
[6] সাধারণ জ্ঞান ও বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় পাঠদান।
[7] ভারতীয় ইতিহাস, ভূগােল বিষয়ে পাঠ।
শিক্ষার এই সাধারণ পাঠক্রম ছাড়াও তিনি সহপাঠক্রমিক কার্যাবলিরও উল্লেখ করেন– সাহিত্য, ধর্ম, বিজ্ঞান, আলােচনা, ভ্রমণ ইত্যাদি। এ ছাড়া তিনি শিক্ষার্থীকে স্বাবলম্বী করে তােলার জন্য বৃত্তিমুখী শিক্ষা ও কারিগরি শিক্ষার ওপর গুরুত্ব প্রদান করেন।
বাস্তবসম্মত পাঠক্রম সম্পর্কে বিবেকানন্দের দূরদৃষ্টি অত্যন্ত প্রশংসনীয়।
নারীশিক্ষা সম্পর্কে বিবেকানন্দের অভিমত :
নারীশিক্ষা ও নারী মুক্তিতে বিবেকানন্দ ছিলেন অন্যতম কান্ডারি। ভারতীয় নারীর দুঃখদুর্দশাতে তিনি ছিলেন ব্যথিত। তিনি বিশ্বাস করতেন—
[1] যে দেশে নারীর মর্যাদা নেই, নেই অধিকার, নেই শিক্ষা সেদেশ কোনােদিন উন্নতি করতে পারে না।
[2] তিনি প্রাচীন ভারতীয় নারীর আদর্শের কথা ভারতবাসীর কাছে নতুনভাবে সামনে তুলে ধরেন।
[3] তিনি দাবি রাখেন, পুরুষ যদি ব্রহ্মজ্ঞ হতে পারে, তাহলে নারীরা কেন ব্রহ্মজ্ঞ হতে পারবে না।
[4] তাঁর মতে ভারতীয় নারীরা শিক্ষিত হলে তবেই তাদের সন্তান-সন্ততি সহজে উন্নত হতে পারবে, তথা দেশের উন্নতি ঘটবে।
[5] নারীর আধ্যাত্মিক চেতনা বিকাশের জন্য মঠ গড়ে তুলতে হবে। আর মঠের সঙ্গে থাকবে বিশেষ বিদ্যালয়। আর পাঠক্রমে থাকবে ভারতীয় ধর্মশাস্ত্র, সাহিত্য, সংস্কৃতি, রন্ধনপ্রণালী, সাংসারিক ক্রিয়াকর্মের সম্পর্কে প্রয়ােজনীয় বিষয়। তাদের শিক্ষাদানে সহায়তা করবে ব্রহ্মচারিণীরা। এ প্রসঙ্গে বলা যায় বিবেকানন্দের নারী সম্পর্কে অভিমত সুদূরপ্রসারী। জাতি গঠনের জন্য সুশিক্ষিতা ও সুমাতা বিশেষ প্রয়ােজন।
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।