প্রিয় ছাত্রছাত্রীরা, এখানে আমরা ভারত এক মিলনমেলা – উচ্চমাধ্যমিক বাংলা প্রবন্ধ রচনা নিয়ে আলোচনা করলাম। খুব সুন্দর করে গুছিয়ে এই প্রবন্ধ রচনাটি লেখা হয়েছে। আশা করি তোমাদের সবারই ভালো লাগবে। ধন্যবাদ
ভারত এক মিলনমেলা
মহাকবির কথামতো ‘মহামানবের সাগরতীর’ এই ভারতবর্ষ, ‘দিবে আর নিবে মিলাবে মিলিবে’ এই দেশের আদর্শ। শক, হুন, পাঠান, মোগল কত জাতিই এই দেশ আক্রমণ করেছে কিন্তু ধীরে ধীরে তারা ভারতাত্মার অঙ্গীভূত হয়ে গেছে। এ দেশের জীবনধারা ও সংস্কৃতি কখনোই স্বার্থপরের মতো প্রাচীর তুলে রাখেনি। পরিবর্তে দুহাত বাড়িয়ে আপন করে নিয়েছে বহিরাগত সকলকে। যার ফলে সংগীত, স্থাপত্য থেকে প্রতিদিনের জীবন সমৃদ্ধ হয়ে উঠেছে। ভারতীয় মার্গ সংগীত থেকে তাজমহল, স্থাপত্য থেকে খাদ্যাভ্যাস—ভারতবাসী সমৃদ্ধ হয়েছে গ্রহণের অনন্যতায়। পরবর্তীতে এ দেশ ইংরেজ অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে কিন্তু শিক্ষা-সংস্কৃতিতে, বিজ্ঞানভাবনায় ইউরোপীয় সভ্যতার অবদানকে গ্রহণ করতে বিন্দুমাত্র কুণ্ঠিত হয়নি। আবার ভারতীয় সভ্যতা তার দার্শনিকতা, অধ্যাত্মসাধনা দিয়ে পৃথিবীকে সত্য ও শান্তির পথ দেখিয়েছে। পৃথিবী ভারতের কাছে নিজেকে সমর্পণ করেছে আত্মশুদ্ধি ও আত্মশক্তির সন্ধানে। কোনো জাতি বা ধর্মের বিভাজনকে এই দেশ কখনও গ্রহণ করেনি। মুসলিমের আজান আর হিন্দুর শঙ্খধ্বনি একসঙ্গে শোনা যায় এদেশের কোণে কোণে। বুদ্ধ, নানক, জিশু, মহম্মদ সকলকে শ্রদ্ধার চোখে দেখে এই দেশ। ভারত তাই সম্প্রীতির ক্ষেত্র, মানবতার চারণভূমি।
ভারতীয় সংস্কৃতি মিলনের মহিমায় উজ্জ্বল। সেই কবে বৈয়ব কবি চণ্ডীদাস শুনিয়ে গিয়েছিলেন “সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই।” চৈতন্য, কবীর, নানক প্রমুখ যাঁরা ভক্তি আন্দোলনের প্রচার করেছিলেন তাঁরা আসলে ধর্ম নয় মানবতার সেবক ছিলেন। মানুষে মানুষে মিলনের কথাই তাঁরা বলে গেছেন তাঁদের ধর্মসাধনায়। যতবার সংঘাত হয়েছে মানুষই আবার তৈরি করে দিয়েছে সম্প্রীতির সাঁকো। রবীন্দ্রনাথের গানকে এ দেশ যেমন জাতীয় সংগীত হিসেবে গ্রহণ করেছে, তেমনই জাতীয়তার চূড়ান্ত প্রকাশ খুঁজে পেয়েছে ইকবালের ‘সারে জাঁহা সে আচ্ছা’-তে। এমনকি দেশভাগ হলেও হৃদয়ভাগ হয়নি। আজও এখানে ঈদের উৎসবে কিংবা দুর্গাপুজোর আনন্দে একসঙ্গে মেতে ওঠে হিন্দু-মুসলমান। এটাই আমাদের সংস্কৃতি। আর এই পথ ধরেই গোটা পৃথিবীর শ্রদ্ধা ও সমীহ আদায় করে নিয়েছে ভারত। এ দেশের উদারতা ও মহত্বের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে কত উদ্ধত জাতি তারাও হয়ে গেছে ভারতাত্মার অংশীদার। আর তার মধ্যে দিয়েই সমৃদ্ধ ও গৌরবান্বিত হয়েছে এদেশের ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং জীবনধারা।
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।