প্রিয় ছাত্রছাত্রীরা, এখানে আমরা আমার জীবনের লক্ষ্য | উচ্চমাধ্যমিক বাংলা প্রবন্ধ রচনা নিয়ে আলোচনা করলাম। খুব সুন্দর করে গুছিয়ে এই প্রবন্ধ রচনাটি লেখা হয়েছে। আশা করি তোমাদের সবারই ভালো লাগবে। ধন্যবাদ
[ দ্রষ্টব্য : প্রশ্নপত্রে লেখা থাকবে “তোমার জীবনের লক্ষ্য” কিন্তু এই রচনাটি খাতায় লেখার সময় তোমাদের লিখতে হবে “আমার জীবনের লক্ষ্য”।]
আমার জীবনের লক্ষ্য
প্রাক্কথন : ছোটোবেলায় মায়ের পাশে বসে দাদাকে সুর করে কবিতা পড়তে দেখতাম— “আমরা কেউ মাস্টার হতে চেয়েছিলাম, কেউ ডাক্তার, কেউ উকিল।/অমলকান্তি সেসব কিছু হতে চায়নি।/সে রোদ্দুর হতে চেয়েছিল।”। একবার কৌতূহলী হয়ে মাকে জিজ্ঞাসা করি—“মা রোদ্দুর হওয়া কী? আমি বড়ো হয়ে রোদ্দুর হব”। মা প্রথমে ভুরু কুঁচকালেও, পরে হেসে বলেছিল—“ধুর পাগল, কেউ রোদ্দুর হয় নাকি? তুই তো বড়ো হয়ে ডাক্তার হবি”।
আমার জীবনের লক্ষ্য : হাইস্কুলে ওঠার পর বুঝি রোদ্দুর হওয়া সম্ভব নয়। তাহলে আমি বড়ো হয়ে কী হব? রচনার বইয়ে দেখলাম লেখা আছে— মহাসমুদ্রের নাবিকেরা যেমন ধ্রুবতারাকে লক্ষ্য রেখে গন্তব্যের দিকে এগিয়ে চলে তেমনই আমাদের জীবনেও লক্ষ্য থাকা প্রয়োজন। মন আর মস্তিষ্কের অনেক বোঝাপড়া করার পর আমি সিদ্ধান্ত নিই—আমি মাঝি হতে চাই। প্রেমের ফল্গুধারার বুকে নৌকা নিয়ে পাড়ি দিতে চাই অচিনপুরে। আগন্তুককে পৌঁছে দিতে চাই তাদের কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে।
লক্ষ্য নির্বাচনের ইতিকথা : অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় জন্মদিনে পাওয়ার নানা উপহারের মধ্যে রঙিন কাগজে মোড়া একটা বইও পেয়েছিলাম—“পদ্মানদীর মাঝি”। প্রতি রোববার কোচিং থেকে ফেরার পর বইটা পড়তে পড়তে নিজেকে পদ্মানদীর মাঝির সঙ্গে সম্পৃক্ত করে ফেলতাম। আমি নিজেই যেন হয়ে উঠতাম কুবের মাঝি। বইয়ের পাতায় ছাপা অক্ষরগুলো যেন কপিলার কণ্ঠস্বর আমার কানের কাছে বার বার বেজে উঠত—“আমারে নিবা মাঝি লগে” ?
লক্ষ্য নির্বাচনের কারণ : আমার মতো শেষ বেঞ্চের ছাত্রের কাছে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার ক্ষমতা নেই। ওইসব দাসত্বপূর্ণ ছকে বাঁধা জীবনের প্রতি রুচিও নেই। তা ছাড়া অন্য কোনো অসৎ পথ অবলম্বন করে অর্থ-সম্পদের ইমারত গড়ে তুলতেও চাই না। আমি চাই—
• সৎ ভাবে মাথা উঁচু করে “তরী ভরা পণ্য নিয়ে পাড়ি দিতে দূর সিন্ধুপারে”।
• যাত্রীদেরকে তার সঠিক গন্তব্যে পৌঁছে দিতে।
• ভাটিয়ালির সুর ধরে নদীর বুকে ভেসে বেড়াতে।
• দূর দেশ থেকে ঘরের ছেলেকে ঘরে ফিরিয়ে আনতে কিংবা জীবিকার তাগিদে ভিনদেশের উদ্দেশ্যে পাড়ি দেওয়া কোনো এক সন্তানকে পৌঁছে দিতে চাই তার কর্মক্ষেত্রের অভিমুখে।
• আমিও চাই মা অন্নপূর্ণার কাছে প্রার্থনা করতে, “আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে”। গন্তব্যে পৌঁছোনোর পর যাত্রীরা যখন হাসিমুখে ভাড়া মেটাবে, তাদের সেই তৃপ্তিটুকুকে অপলক দৃষ্টিতে উপভোগ করতে চাই ।
লক্ষ্য পূরণের বাধা : আমার এই লক্ষ্য পূরণের পথে প্রতিবন্ধকতা অনেক। অধিকাংশ মানুষই আমার মনের কথা শুনে হাসে, ব্যঙ্গ করে বিদ্রূপ করে। যদিও এতে আমি এতটুকুও কুণ্ঠিত হই না। বরং সমস্ত বিদ্রুপই যেন আমার কাছে অনুপ্রেরণার ফুল হয়ে আমার কাছে ঝরে পড়ে। তখন “নদীপ্রবাহ ভাসমান পথিকের উদাসের হৃদয়” নিজের সমস্ত প্রতিবন্ধকতাকে জয় করবার জন্য যেন আরও উদগ্রীব হয়ে ওঠে।
শেষকথা :
“মা যদি হও রাজি
মৌলিক লাইব্রেরী
বড় হয়ে আমি হব
খেয়া ঘাটের মাঝি।”
মহাসমুদ্র পাড়ি দেওয়া নাবিকেরা ধ্রুবতারায় লক্ষ্য নির্দিষ্ট করে গন্তব্যের পথে এগিয়ে চলে। আমিও চলেছি। তা বলে, আমার যেসব বন্ধুরা ডাক্তার, উকিল কিংবা ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন দেখে তাদের সঙ্গে আমার কোনো বিরোধ নেই। বরং আমি তো তাদের আমার নৌকোয় চাপিয়েই কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে চাই। হতে চাই সবার স্বপ্নপূরণের ফেরিওয়ালা— “ধরো হাল শক্ত হাতে, ভয় কী নদীর কাছে”?
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।