ম্যাসলোর চাহিদার ক্রমপর্যায় তত্ত্ব | Maslow’s Hierarchy of Needs Theory in Bengali

উত্তরঃ-

ম্যাসলোর চাহিদার ক্রমপর্যায় তত্ত্ব
ম্যাসলোর প্রস্তাবিত চাহিদার ক্রমবিকাশ

মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক আব্রাহাম ম্যাসলোর মতে, মানুষ শুধু সমাজ বা পরিবেশের জন্য কাজ করে না, নিজের চাহিদার জন্যও কাজ করে। এই চাহিদা পূরণ একটি নির্দিষ্ট ক্রমে ঘটে। যতক্ষণ পর্যন্ত একটি স্তর এর চাহিদা পূরণ না হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত সেই ব্যক্তি সেই স্তরে চাহিদা পূরণের চেষ্টা করে। চাহিদা পূরণ হলে পরবর্তী উচ্চস্তরের চাহিদা পূরণের চেষ্টা করে।

ম্যাসলো তার প্রেষণা তত্ত্বে ব্যক্তির 7 প্রকার চাহিদাকে পিরামিডের আকারে প্রকাশ করেছেন –

1. শারীরবৃত্তীয় চাহিদা বা অস্তিত্ব রক্ষার চাহিদা : এই চাহিদাগুলি মানুষের বেঁচে থাকার জন্য একান্ত প্রয়োজন৷ যেমন- খাদ্য, আলো, বাতাস, জল, ঘুম ইত্যাদি। যে ব্যক্তি এই চাহিদা পূরণ হয়না তার অন্য চাহিদা সৃষ্টি হয় না। এই কারণে বিদ্যালয়ে মিড ডে মিল এর সঙ্গে অন্যান্য ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে৷ কারণ ক্ষুধার্থ পেটে বিদ্যা অর্জন অসম্ভব। 

** বিশেষ দ্রষ্টব্য : যদি প্রথম চাহিদাটি পূরণ হয় তবেই পরবর্তী চাহিদার আবির্ভাব ঘটবে বা দেখা যাবে।

2. নিরাপত্তার চাহিদা : শারীর বৃত্তীয় চাহিদা পূরণের পর এই চাহিদার সৃষ্টি হয়। যেমন- সুরক্ষা, ভয় বা উদ্বেগ থেকে মুক্তি, সংহতি ইত্যাদি চাহিদা।- যদি কোনো শিক্ষার্থীর বিদ্যালয় বা কোন শিক্ষকের ক্লাসের যেতে ভয় পায় তাহলে বুঝতে হবে তার নিরাপত্তার চাহিদা বিঘ্নিত হচ্ছে।

3. অন্তর্ভুক্তির চাহিদা : পূর্বের চাহিদা পূরণের মাধ্যমে এই চাহিদার সৃষ্টি। মানুষ স্বাভাবিক ভাবেই সমাজবদ্ধ জীব তাই সে দলবদ্ধ ভাবে থাকতে চায়, ভালোবাসা পেতে চায় বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বন্ধুত্ব করতে, এক সাথে সময় কাটাতে চায়, এটাই স্বাভাবিক। অন্যথায় বুঝতে হবে তার পূর্বের চাহিদা পূরণের কোন সমস্যা হচ্ছে।

4. আত্ম-শ্রদ্ধার চাহিদা : এই চাহিদার মাধ্যমে ব্যক্তি নিজের প্রতি সচেতন হয়। সে চায় অন্যরা তাকে গুরুত্ব দিক, শ্রদ্ধা করুক। সেজন্য সে নিজের যোগ্যতা অনুসারে এমন ধরনের আচরণ করে যাতে অন্যরা তাকে সম্ভ্রম বা সম্মান করে।- বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিজের পছন্দ অনুযায়ী কাজ করতে দিলে এই ধরনের চাহিদা পূরণের সম্ভাবনা তৈরি হয়।

5. জ্ঞানমূলক চাহিদা : এই স্তরের চাহিদার মাধ্যমে মানুষের জানার, কৌতুহলের, সমস্যা সমাধানের, নতুন কিছু করার চাহিদার পরিতৃপ্তি ঘটে।

6. নান্দনিক চাহিদা : এটি হলো সৌন্দর্যবোধের ও সৌন্দর্য ভোগের চাহিদা। এই ধরনের চাহিদা ব্যক্তিকে সত্য ও সুন্দরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে শেখায়।

7. আত্মপ্রকাশের চাহিদা : ম্যাসলোর মতে এটি মানুষের সর্বোচ্চ স্তরের চাহিদা। প্রতিটি মানুষের কিছু সক্ষমতা ও দুর্বলতা রয়েছে। এগুলো বুঝে মানুষ যখন নিজেকে প্রকাশ করতে চায় তখন বুঝতে হবে তার মধ্যে আত্মপ্রকাশের চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে। অর্থাৎ কোন মানুষ যা হতে চায় তা হবার চাহিদা অর্থাৎ পরিপূর্ণ হবার চাহিদাকে বলে আত্মপ্রকাশের চাহিদা। – এই ধরনের চাহিদার ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে পারদর্শিতার প্রেষণা তৈরি হয়।

বিশেষ দ্রষ্টব্য:- এখানে প্রত্যেকটি চাহিদার আগে মনে রাখতে হবে আগের চাহিদা পূরণ হলেই পরবর্তী চাহিদা দেখা দেবে। উদাহরন হিসাবে আমরা বলতে পারি মানুষের পেটের ক্ষিধা যদি না মেটে তাহলে কিন্তু মানুষের যে নিরাপত্তা চাহিদা এটা কিন্তু জাগ্রত হবে না। যে ব্যাক্তি খাদ্য যোগাড় করতে পারছে না সে খাদ্য যোগাড় করার জন্য যা কিছু করতে পারেন।কোথায় তিনি বিপদে পড়বেন কোথায় তিনি বিপদে পড়বেন না বা সমাজে তাকে কেউ শ্রধা করছে কি করছে না, নিজেকে সুন্দর লাগছে কি লাগছে না, এই বিষয় গুলো কিন্তু তখন তার মাথায় থাকবে না বা আসবে না। সেই ব্যক্তির জন্য সেই সময় খাদ্যের অভাব দূর করাই সব থেকে মূল বিষয়বস্তু হয়ে দাঁড়ায়। সেই ব্যক্তি যখন খাদ্যের চাহিদার সমস্যাটা কোনভাবে মিটিয়ে ফেলবেন তারপরেই কিন্তু তার মনে হবে যে তার সিকিউরিটি বা নিরাপত্তা দরকার। সেই জন্য তিনি বাড়ি বানাতে পারেন, তিনি এমন পরিবেশে থাকবেন যেখানে তিনি নিরাপদ থাকবেন, এরকম অনেক উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। ঠিক বাকি চাহিদাগুলোর ক্ষেত্রেও আমরা দেখব যে আগের চাহিদাগুলো পূরণ হলেই আমাদের পরবর্তী চাহিদাটা অটোমেটিক্যালি আমাদের মধ্যে কিন্তু দেখা দেবে।

Read Also

ম্পিয়ারম্যানের দ্বি-উপাদান তত্ত্বটি আলােচনা করাে

মানসিক ক্ষমতা বা বুদ্ধি কাকে বলে | শিখনে বুদ্ধির ভূমিকা আলোচনা করো

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment