সাম্য ও স্বাধীনতার মধ্যে সম্পর্ক আলোচনা করো ।
উত্তরঃ-
সাম্য ও স্বাধীনতার মধ্যে সম্পর্ক :
সাম্যঃ সাধারণভাবে সাম্য বলতে বোঝায় সকলে সমান। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে সাম্য কথাটির অর্থ হল, প্রত্যেক ব্যক্তি তার বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ পাবে। এই সুযোগের ক্ষেত্রে কোনো বৈষম্য থাকবে না। কোনো শ্রেণী রাষ্ট্রের কাছ থেকে বিশেষ সুবিধা পাবে না। এই সুযোগের সমতাই হল সাম্য।
স্বাধীনতাঃ ব্যক্তির বিকাশের জন্য স্বাধীনতা অপরিহার্য। আক্ষরিক অর্থে স্বাধীনতা বলতে বোঝায়, নিজের অধিনে চলা। অর্থাৎ নিজের খুশি মতো কাজ করা। নিজের পছন্দ মতো কাজ করার ক্ষমতাকে সাধারণভাবে স্বাধীনতা বলা হয়। তবে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্বাধীনতার অর্থ ভিন্ন। ব্যক্তির বিকাশের জন্য বাধা নিষেধের অপসারণ ও উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টির নাম হল স্বাধীনতা।
সাম্য ও স্বাধীনতার সম্পর্ক:
সাম্য ও স্বাধীনতা হল বিপ্লবের দীক্ষা-মন্ত্র। ফরাসী বিপ্লবের মন্ত্র ছিল, সাম্য, মৈত্রী ও স্বাধীনতা। বিভিন্ন দেশের সংবিধানে সাম্য ও স্বাধীনতার নীতি ঘোষিত হয়েছে। তবে এই দুটির মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মধ্যে মতভেদ আছে। টকভিল, স্পেনসার প্রমুখ রাষ্ট্রবিজ্ঞানীগণ মনে
সংবিধানে সাম্য ও স্বাধীনতার নীতি ঘোষিত হয়েছে। তবে এই দুটির মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মধ্যে মতভেদ আছে। টকভিল, স্পেনসার প্রমুখ রাষ্ট্রবিজ্ঞানীগণ মনে করেন, সাম্য ও স্বাধীনতা পরস্পর বিরোধী। অন্যদিকে রুশো, ল্যাস্কি প্রমুখ চিন্তাবিদগণ বলেছেন, উভয়ে পরস্পরের পরিপূরক।
সম্পর্ক পরস্পর বিরোধী:
বুর্জোয়াদের মতে, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ব্যক্তির স্বাধীনতার উপর রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ করার অধিকার নেই। তারা সামা বলতে রাজনৈতিক সাম্যের কথা বলেছেন। অর্থাৎ রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গীতে সকলে সমান। কিন্তু স্বাধীনতার ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক স্বাধীনতার কথা বলেছেন। এই স্বাধীনতার ক্ষেত্রে সাম্য নীতি প্রয়োগ করা উচিত নয়। সেদিক থেকে স্বাধীনতার সাথে সাম্যের সম্পর্ক নেই।
সম্পর্ক পরস্পর পরিপুরকঃ
মার্কসবাদীরা মনে করেন, স্বাধীনতা ও সাম্যের মধ্যে নিবিড় সম্পর্ক আছে। সাম্য ছাড়া স্বাধীনতা ভোগ করা যায় না। আবার স্বাধীনতার আদর্শকে বাস্তবে রূপ দিতে হলে সাম্যের সম্পর্ক আছে। সাম্য ছাড়া স্বাধীনতা ভোগ করা যায় না।
আবার স্বাধীনতার আদর্শকে বাস্তবে রূপ দিতে হলে সাম্যের প্রয়োজন। যেমন- আইনের মাধ্যমে সাম্যের অধিকার যদি স্বীকৃত হয়, তাহলে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবাই স্বাধীনতা ভোগ করতে পারবে।
মুল্যায়নঃ
সাম্য ও স্বাধীনতা পরস্পরের সহযোগী হলেও মার্কসবাদীরা মনে করেন, -অর্থনৈতিক সাম্য হল স্বাধীনতার শর্ত। অর্থাৎ সমাজে অর্থনৈতিক বৈষম্য থাকলে সে সমাজে সাধারণ মানুষ স্বাধীনতা ভোগ করতে পারে না। পুঁজিবাদী সমাজে অর্থনৈতিক বৈষম্য থাকায় সেখানে সাধারণ মানুষ স্বাধীনতা মনে করেন, -অর্থনৈতিক সাম্য হল স্বাধীনতার শর্ত। অর্থাৎ সমাজে অর্থনৈতিক বৈষম্য থাকলে সে সমাজে সাধারণ মানুষ স্বাধীনতা ভোগ করতে পারে না। পুঁজিবাদী সমাজে অর্থনৈতিক বৈষম্য থাকায় সেখানে সাধারণ মানুষ স্বাধীনতা ভোগ করতে পারে না। একমাত্র সমাজতান্ত্রিক সমাজে অর্থনৈতিক সাম্য থাকায় সেখানে প্রকৃত স্বাধীনতা ভোগ করা সম্ভব।
Read Also
ভারতের সংবিধান প্রস্তাবনার গুরুত্ব বা তাৎপর্য আলোচনা করো
ভারতের রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও পদমর্যাদা আলোচনা করো
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।