এই অকাল-তত্ত্বজ্ঞানী, মানব সকলপ্রকার ক্রীড়ার অসারতা সম্বন্ধে নীরবে চিন্তা করিতে লাগিল । — বক্তা কোন্ প্রসঙ্গে এই উক্তি করেছেন? উক্তিটির অর্থ লেখো

উত্তর : আধুনিক বাংলা ছোটোগল্পের জনক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ‘ছুটি’ গল্প থেকে উদ্ধৃত এই অংশে ফটিকের ভাই মাখন চক্রবর্তীর কথা বলা হয়েছে। বালকদের সর্দার ফটিকের মাথায় হঠাৎ উদ্ভাবনী চিন্তা আসে: নদীর ধারে পড়ে থাকা প্রকাণ্ড একটা শালকাঠের গুঁড়িকে তাদের খেলার সরঞ্জাম বানিয়ে গড়িয়ে নিয়ে যাবে। অন্যান্য বালকেরা অতি উৎসাহে গুঁড়ি ঠেলার জন্য যখন তৈরি, ঠিক তখনই ফটিকের ভাই মাখন গম্ভীরভাবে সেই গুঁড়ির ওপর গিয়ে বসে পড়ে। তার এই ঔদাসীন্য অন্যান্য বালকদের বিস্মিত ও বিমর্ষ করেছিল। কিন্তু মাখন ছিল নির্বিকার। তার সেই অটল মনোভাব প্রসঙ্গে লেখক এই তির্যক মন্তব্য করেছেন।পল্লিজীবনের মুক্ত পরিবেশে বালকেরা নিত্যনতুন খেলায় মেতে উঠে আনন্দ পায়। হঠাৎ নতুন একটি উদ্ভাবনী চিন্তা মাথায় আসে ফটিকের। তার প্রস্তাবমতো নদীর ধারে পড়ে থাকা একটা শালকাঠের গুঁড়িকে ঠেলে গড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। কাঠের মালিক যথাসময়ে এসে যখন সেই কাঠ দেখতে না-পেয়ে বিস্ময়, বিরক্তি ও অসুবিধা বোধ করবে বালকেরা তা দেখেই খুশি হবে। তাই তাদের মধ্যে প্রবল উচ্ছ্বাস। কিন্তু মাখনলাল ছিল ভিন্ন প্রকৃতির। এমন খেলার প্রতি তার তেমন আকর্ষণ ছিল না। শুধু তাই নয়, অপরের খেলাকে পণ্ড করার আশ্চর্য ক্ষমতা ছিল তার। তাই হঠাৎ কাঠের গুঁড়ির ওপর অকাল তত্ত্বজ্ঞানীর মতো বসে নিজেও খেলছে না, অপরকেও খেলতে দিচ্ছে না। মাখনলাল যেন অকালেই এই জগৎসংসারের আসল তত্ত্ব অনুভব করেছে। তাই খেলায় তার কোনো উৎসাহ নেই। তার মনে হয়েছে সবই অনিত্য। মাখনের মনোভাবের স্ফুরণ ঘটিয়েছেন লেখক আলোচ্য মন্তব্যে।

Read Also

পূর্বাপেক্ষা আর-একটা ভালো খেলা মাথায় উদয় হইয়াছে — পূর্বের খেলাটি কী ছিল? এখনকার খেলাটিই-বা কী এবং তার পরিণতি কী হয়েছিল ?

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment