ছুটি গল্পে ফটিকের চরিত্র আলোচনা করো

উত্তর : ‘ছুটি’ গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র ফটিক। সমগ্র গল্পজুড়ে তার অবস্থান। গল্পটির সূচনা ও সমাপ্তি ফটিককে নিয়েই। গল্পে তার যে চরিত্রবৈশিষ্ট্য ফুটে উঠেছে তা নিম্নে আলোচিত হল—

বালকদের সর্দার : বালকদের সর্দার ফটিকের বয়স তেরো-চোদ্দো বছর। সমবয়সীদের সাথে প্রতিনিয়ত নদীর ধারে নিত্যনতুন দুষ্টুমি ও উদ্ভাবনী খেলায় সে সর্দারত্ব লাভ করেছে। তার সর্দারি মেনে অন্যান্য বালকেরা তাকে অনুসরণ করে, তার কথায় গুরুত্ব দেয়। পড়াশোনায় তার মনোযোগ ছিল না। প্রকৃতির উন্মুক্ত পরিবেশে সে খেলে বেড়াতে ভালোবাসে। লেখক ফটিক চরিত্রের উচ্ছ্বলতা, চঞ্চলতা, দুরন্তপনা ও উদ্ভাবনী শক্তির সর্দার হিসেবে ‘ছুটি’ গল্পে তাকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেছেন।

আত্মসম্মানবোধ ও উদারতা : দুরন্ত হলেও ফটিকের মধ্যে আত্মসম্মানবোধ ছিল প্রবল। মায়ের সামনে ছোটোভাই মাখন যখন মিথ্যা বলে যে দাদা তাকে মেরেছে তখন সে সহ্য করতে না-পেরে সবেগে মাখনের গালে চড় দেয়। আবার মামার বাড়ি যাওয়ার আনন্দে সরল মনে সেই মাখনকে তার ছিপ, ঘুড়ি, লাটাই-এর উত্তরাধিকারী করে দিয়ে যায়। ফটিক চরিত্রের মধ্যে এমন এক উদারতা ছিল যা তাকে উন্মুক্ত প্রকৃতির উপযুক্ত প্রতিনিধি করে তোলে।

প্রাণচঞ্চলতা : ফটিকের দুরন্ত স্বভাবের মধ্যে এমন এক প্রাণচঞ্চলতা ছিল যা মুক্ত প্রকৃতির সঙ্গে মামানসই। গ্রাম্য জীবনের উচ্ছ্বলতা, দুরন্তপনা, নদীর ধার—এসবের সঙ্গে ফটিকের আত্মীয়তা। সমবয়সী বালকদের সাথে উৎফুল্ল মনে সে খেলে বেড়াত। এ-নৌকা ও-নৌকা করে বেড়ানো তার স্বভাব ছিল। * 

নাগরিক জীবনের সীমাবদ্ধতা : মুক্ত পাখিকে খাঁচায় বন্দি করলে যেমন হয় গ্রাম থেকে শহরে এসে ফটিকেরও সেই অবস্থা হয়েছিল। চঞ্চল ফটিক কলকাতার নাগরিক জীবনের যান্ত্রিকতায় বদ্ধ হয়ে গিয়েছিল। মামীর নিষ্ঠুর আচরণ, মামাতো ভাইদের নির্মম ব্যবহার ও মাস্টারমশাইদের অত্যাচার তাকে বীতশ্রদ্ধ করে তুলেছিল। তাই শহর ছেড়ে পুনরায় গ্রামে যেতে চেয়েছে ফটিক। 

জীবন থেকে ছুটি : পুজোর ছুটিতে বাড়ি যাওয়ার জন্য ফটিক অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে। কিন্তু কার্তিক মাস আর আসে না, তার আগেই জীবন থেকে ছুটি হয়ে যায় ফটিকের। পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নেয় ফটিক। এ গল্প যেন ফটিকের কৈশোর জীবনের মনস্তত্ত্বের গল্প। বিশ্বসংসারে ফটিককে কেউ বুঝতে চায়নি। প্রকৃতির সন্তান তাই যেন শেষ মুহূর্তে প্রকৃতির কোলে চিরনিদ্রায় নিদ্রিত হয়ে যায়। তার মৃত্যু গল্পে আলাদা এক ব্যঞ্জনা তৈরি করে।

Read Also

‘ উৎসাহে তাহার রাত্রে নিদ্রা হয় না ।—উদ্দিষ্টের উৎসাহের ‘পিছনে লেখক যে ট্র্যাজিক আভাস দিয়েছেন তা বর্ণনা করো ।

‘ তেরো-চৌদ্দ বৎসরের ছেলের মতো পৃথিবীতে এমন বালাই আর নাই ।—মন্তব্যটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।

‘ উৎসাহে তাহার রাত্রে নিদ্রা হয় না ।—উদ্দিষ্টের উৎসাহের ‘পিছনে লেখক যে ট্র্যাজিক আভাস দিয়েছেন তা বর্ণনা করো ।

“ তিনি ঈষৎ ক্ষুণ্ণ হইলেন । – কে, কার প্রতি ক্ষুণ্ণ হয়েছিলেন ? তাঁর ক্ষুণ্ণ হওয়ার কারণ কী?

‘বিধবা এ প্রস্তাবে সহজেই সম্মত হইলেন ।—বিধবার কাছে কে, কী প্রস্তাব করেছিলেন? তিনি তাতে সম্মত হয়েছিলেন কেন?

‘কিন্তু অন্যান্য পার্থিব গৌরবের ন্যায় ইহার আনুষঙ্গিক যে বিপদের সম্ভাবনাও আছে, তাহা তাহার কিম্বা আর-কাহারও মনে উদয় হয় নাই । — রচনার নামোল্লেখ-সহ উদ্ধৃতাংশের প্রসঙ্গ নির্দেশ করো। উক্তিটি ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে দাও ।

এই অকাল-তত্ত্বজ্ঞানী, মানব সকলপ্রকার ক্রীড়ার অসারতা সম্বন্ধে নীরবে চিন্তা করিতে লাগিল । — বক্তা কোন্ প্রসঙ্গে এই উক্তি করেছেন? উক্তিটির অর্থ লেখো

পূর্বাপেক্ষা আর-একটা ভালো খেলা মাথায় উদয় হইয়াছে — পূর্বের খেলাটি কী ছিল? এখনকার খেলাটিই-বা কী এবং তার পরিণতি কী হয়েছিল ?

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment