প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের নিগুঢ় আত্মিক সম্পর্কের গভীর তাৎপর্য ব্যাপ্ত হয়ে আছে গল্পটির সর্বাঙ্গে।–আলোচ্য উক্তির পরিপ্রেক্ষিতে ‘ছুটি’ গল্পের প্রাকৃতিক রূপ আলোচনা করো

প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের নিগুঢ় আত্মিক সম্পর্কের গভীর তাৎপর্য ব্যাপ্ত হয়ে আছে গল্পটির সর্বাঙ্গে।–আলোচ্য উক্তির পরিপ্রেক্ষিতে ‘ছুটি’ গল্পের প্রাকৃতিক রূপ আলোচনা করো। MARK 5 | Class 11 Bengali | ছুটি

উত্তর : জমিদারি কর্মসূত্রে রবীন্দ্রনাথ পূর্ববঙ্গের বিস্তীর্ণ পল্লিপ্রকৃতির সান্নিধ্যে বহুদিন জীবন অতিবাহিত করেছিলেন। সাজাদপুরে থাকাকালীন নিভৃতে বোটে ভাসতে ভাসতে তাঁর চোখে দেখা এক টুকরো দৃশ্যে কল্পনার রং মিশিয়ে তিনি তৈরি করেছেন ‘ছুটি’ গল্পটি। প্রকৃতি ও মানুষ যেন এখানে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত—একে অপরের পরিপূরক। বোটের জানালা দিয়ে নদীর ধারে তিনি যে দুরন্ত, অবাধ্য, উচ্ছৃঙ্খল বালকটিকে দেখেছিলেন, সেই বালকটিই হয়েছে তাঁর গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র ফটিক। ওই দুরন্ত বালকটির মধ্যে রবীন্দ্রনাথ মুক্ত প্রকৃতিতে উচ্ছল প্রাণের মুক্তির যে তাগিদ দেখেছিলেন সেটাই তাঁর কাহিনির মূল বিষয়বস্তু।

গল্পের কাহিনিতে দেখা যায়, প্রকৃতির কোলে আজন্ম লালিত বালক ফটিককে প্রকৃতির কোল থেকে জোর করে ছিনিয়ে নিয়ে যায় শহরবাসী মামা। প্রাকৃতিক বন্ধন ছিন্ন হওয়ায় যন্ত্রণায় ও কষ্টে ফটিকের ‘আত্মিক মৃত্যু’ ঘটে এবং কিছুদিন পরে এর অবশ্যম্ভাবী পরিণতি হিসেবে ‘দৈহিক মৃত্যু’ ঘটে। মুক্ত প্রকৃতি যেন ফটিকের জীবনের সঙ্গে একাত্ম হয়েছিল এই গল্পে খোলা আকাশ, নির্মল বাতাস, শান্ত নদীতীরে সঙ্গীসাথিদের নিয়ে কলরব সহকারে খেলা, নৌকার আনাগোনা ফটিককে ভীষণভাবে আকর্ষণ করত। দুরন্ত ফটিক গ্রাম্য প্রাকৃতিক পরিবেশে সর্বদা যেন মুক্তির স্বাদ আস্বাদন করত । প্রকৃতির শ্যামস্নিগ্ধ স্নেহময়তা থেকে তাকে বিচ্ছিন্ন করে নাগরিক জীবনের একঘেয়ে নির্দয় নির্মম পরিবেশে নিয়ে গেলে সে যেন হাঁপিয়ে ওঠে। ছুটি নিয়ে চলে যেতে চায় প্রকৃতির সান্নিধ্যে। ফটিকের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে রবীন্দ্রনাথ যেন বোঝাতে চেয়েছেন, প্রকৃতির যে অমৃতলোক থেকে ফটিকের আগমন মৃত্যুর পরে সেই অনন্ত প্রকৃতির কোলে পুনরায় প্রত্যাবর্তন। শহরের যান্ত্রিকতা, নিষ্ঠুরতা তাকে বেঁধে রাখতে পারেনি। তাই সে ছুটি চেয়েছে অনন্তকালের জন্য। গল্পে প্রকৃতি ও মানুষের এই আত্মিক বন্ধন গল্পটিকে অন্য মাত্রা দিয়েছে।

Read Also

‘ উৎসাহে তাহার রাত্রে নিদ্রা হয় না ।—উদ্দিষ্টের উৎসাহের ‘পিছনে লেখক যে ট্র্যাজিক আভাস দিয়েছেন তা বর্ণনা করো ।

‘ তেরো-চৌদ্দ বৎসরের ছেলের মতো পৃথিবীতে এমন বালাই আর নাই ।—মন্তব্যটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।

‘ উৎসাহে তাহার রাত্রে নিদ্রা হয় না ।—উদ্দিষ্টের উৎসাহের ‘পিছনে লেখক যে ট্র্যাজিক আভাস দিয়েছেন তা বর্ণনা করো ।

“ তিনি ঈষৎ ক্ষুণ্ণ হইলেন । – কে, কার প্রতি ক্ষুণ্ণ হয়েছিলেন ? তাঁর ক্ষুণ্ণ হওয়ার কারণ কী?

‘বিধবা এ প্রস্তাবে সহজেই সম্মত হইলেন ।—বিধবার কাছে কে, কী প্রস্তাব করেছিলেন? তিনি তাতে সম্মত হয়েছিলেন কেন?

‘কিন্তু অন্যান্য পার্থিব গৌরবের ন্যায় ইহার আনুষঙ্গিক যে বিপদের সম্ভাবনাও আছে, তাহা তাহার কিম্বা আর-কাহারও মনে উদয় হয় নাই । — রচনার নামোল্লেখ-সহ উদ্ধৃতাংশের প্রসঙ্গ নির্দেশ করো। উক্তিটি ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে দাও ।

এই অকাল-তত্ত্বজ্ঞানী, মানব সকলপ্রকার ক্রীড়ার অসারতা সম্বন্ধে নীরবে চিন্তা করিতে লাগিল । — বক্তা কোন্ প্রসঙ্গে এই উক্তি করেছেন? উক্তিটির অর্থ লেখো

পূর্বাপেক্ষা আর-একটা ভালো খেলা মাথায় উদয় হইয়াছে — পূর্বের খেলাটি কী ছিল? এখনকার খেলাটিই-বা কী এবং তার পরিণতি কী হয়েছিল ?

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment