ছুটি গল্পে মামাবাড়িতে গিয়ে ফটিকের যে দুরবস্থা হয়েছিল তা নিজের ভাষায় লেখো

ছুটি গল্পে মামাবাড়িতে গিয়ে ফটিকের যে দুরবস্থা হয়েছিল তা নিজের ভাষায় লেখো। MARK 5 | Class 11 Bengali | ছুটি

উত্তর : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ছুটি’ গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র ফটিক। গ্রামের দুরন্ত কিশোর ফটিক বালকদের সর্দার। প্রকৃতির কোলে লালিত ফটিক যেন মুক্ত আকাশের বন্য পাখি; সর্বত্র তার অবাধ বিচরণ। তার দুষ্টুমি, উচ্ছৃঙ্খল-অবাধ্যতায় মা-ও যথেষ্ট বিরক্ত ছিলেন; চিন্তিত ছিলেন ছোটো ছেলে মাখনকে নিয়ে, পাছে ফটিকের জন্য তার কোনো ক্ষতি হয়ে যায়। এরূপ অবস্থায় হঠাৎই ফটিকের মামা বিশ্বম্ভরবাবুর আগমন ঘটে। তিনি ফটিককে কলকাতায় নিয়ে গিয়ে পড়াশোনা করানোর প্রস্তাব দেন। এ প্রস্তাবে ফটিক ও তার মা দুজনেই রাজি হয়ে যান। 

মামার বাড়িতে এসে ফটিকের সব আনন্দ ধুলোয় মিশে যায় মামীর নিস্পৃহ ব্যবহারে। এই অনাবশ্যক উৎপাতটিকে মামী মেনে নিতে পারেননি। মামীর স্নেহবর্জিত শাসন এবং নিষ্ঠুর আচরণে ফটিক সংকুচিত হয়ে পড়ে। কলকাতার স্কুলেও সে অমনোযোগী নির্বোধ ছাত্র হিসেবে গণ্য হল। গ্রামে বালকদের সর্দার ফটিক কলকাতায় আড়ষ্ট হয়ে থাকল। বনের মুক্ত পাখি বন্দি হল খাঁচায়। শহরের যান্ত্রিক জীবন সে মেনে নিতে পারল না । অল্পদিনের মধ্যেই গ্রামে নিজের বিচরণভূমি, মায়ের স্নেহ তাকে ব্যাকুল করে তুলল। মামা আশ্বাস দিলেন পুজোর ছুটিতে বাড়ি নিয়ে যাবেন। অধীর আগ্রহে তার তৃষিত বুকে দিন গুনতে থাকে ফটিক। কিন্তু পুজোর ছুটি আর আসে না ৷ 

একদিন স্কুলে একটি বই হারিয়ে ফেলায় মাস্টারমশাইয়ের তিরস্কার আর মামীর ভর্ৎসনা ও অপমান সহ্য করতে না-পেরে শ্রাবণের ঝড়-জলের রাতে সে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ে। পরদিন সকালে পুলিশ যখন উদ্ধার করে ফটিককে তার মামার বাড়িতে দিয়ে যায় তখন তার গায়ে প্রচণ্ড জ্বর। জ্বরে প্রলাপ বকতে থাকে ফটিক। মনের অসুস্থতাই তার শারীরিক অসুস্থতার মধ্য দিয়ে প্রকট হয়ে দেখা দেয়। জ্বরের বিকারে নৌকোর খালাসিদের মতো সুর করে বলে “এক বাঁও মেলে না, দো বাঁও মেলে না”। অবস্থা খারাপ থেকে খারাপতর দেখে মামা আশঙ্কিত হয়ে তার মাকে খবর দেয় ও ডাক্তার ডাকে। ডাক্তার আসে, কিন্তু কোনো সুখের খবর দিতে পারেন না। ঝড়ের বেগে ফটিকের মা আসে, কান্নায় ভেঙে পড়ে। ফটিক মায়ের কাছে ‘ছুটি’ চায়, পৃথিবীর বন্ধন থেকে মুক্তি চায়। শহুরে যন্ত্রসভ্যতা থেকে প্রকৃতির কোলে ফিরতে চায়। 

এভাবেই ফটিক অতল সমুদ্রে তার জীবন জাহাজ ভাসিয়ে দেয়, কিছুতেই সমুদ্রের তল খুঁজে পায় না। স্কুলের লাঞ্ছনা, মামীর বঞ্চনা, স্নেহবর্জিত নির্মম পরিবেশ ও বদ্ধ জীবনের সববন্ধন মুক্ত করে চিরতরে ‘ছুটি’ নেয় ফটিক।

Read Also

‘ উৎসাহে তাহার রাত্রে নিদ্রা হয় না ।—উদ্দিষ্টের উৎসাহের ‘পিছনে লেখক যে ট্র্যাজিক আভাস দিয়েছেন তা বর্ণনা করো ।

‘ তেরো-চৌদ্দ বৎসরের ছেলের মতো পৃথিবীতে এমন বালাই আর নাই ।—মন্তব্যটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।

‘ উৎসাহে তাহার রাত্রে নিদ্রা হয় না ।—উদ্দিষ্টের উৎসাহের ‘পিছনে লেখক যে ট্র্যাজিক আভাস দিয়েছেন তা বর্ণনা করো ।

“ তিনি ঈষৎ ক্ষুণ্ণ হইলেন । – কে, কার প্রতি ক্ষুণ্ণ হয়েছিলেন ? তাঁর ক্ষুণ্ণ হওয়ার কারণ কী?

‘বিধবা এ প্রস্তাবে সহজেই সম্মত হইলেন ।—বিধবার কাছে কে, কী প্রস্তাব করেছিলেন? তিনি তাতে সম্মত হয়েছিলেন কেন?

‘কিন্তু অন্যান্য পার্থিব গৌরবের ন্যায় ইহার আনুষঙ্গিক যে বিপদের সম্ভাবনাও আছে, তাহা তাহার কিম্বা আর-কাহারও মনে উদয় হয় নাই । — রচনার নামোল্লেখ-সহ উদ্ধৃতাংশের প্রসঙ্গ নির্দেশ করো। উক্তিটি ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে দাও ।

এই অকাল-তত্ত্বজ্ঞানী, মানব সকলপ্রকার ক্রীড়ার অসারতা সম্বন্ধে নীরবে চিন্তা করিতে লাগিল । — বক্তা কোন্ প্রসঙ্গে এই উক্তি করেছেন? উক্তিটির অর্থ লেখো

পূর্বাপেক্ষা আর-একটা ভালো খেলা মাথায় উদয় হইয়াছে — পূর্বের খেলাটি কী ছিল? এখনকার খেলাটিই-বা কী এবং তার পরিণতি কী হয়েছিল ?

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment