জাদুঘরের শ্রেণীবিভাগ বা প্রকারভেদ আলােচনা করাে। Class 12 History Suggestion 2022

প্রশ্নঃ জাদুঘরের শ্রেণীবিভাগ বা প্রকারভেদ আলােচনা করাে।

উত্তর:

ভুমিকা:- বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন ধরনের অসংধ্য জাদুঘর গড়ে উঠেছে। ICOM (International Council of Museums)-এর মতে বর্তমানে বিশ্বের ২০২টি দেশে ৫৫,০০০ এরও বেশি জাদুঘর আছে। 

জাদুঘরের শ্রেণীবিভাগ বা প্রকারভেদ:- প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে সংরক্ষিত বস্তুগুলির ভিত্তিতে জাদুঘরগুলিকে প্রধানত চারটি ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন:- (১) সাধারণ জাদুঘর, (২) কলা জাদুঘর, (৩) ঐতিহাসিক জাদুঘর এবং (৪) বিজ্ঞান বিষয়ক জাদুঘর। এই চার ধরনের জাদুঘরগুলি বেশ কয়েকটি উপবিভাগে বিভক্ত।

১) সাধারণ জাদুঘর: 

(i) বহুমুখী জাদুঘর:- জাদুঘরে একটি স্থানে নানা ধরনের সংগ্রহ যেমন-শিল্প স্বাপত্যকীর্তির নমুনা, চিত্র,পাণ্ডুলিপি, অস্ত্রশস্ত্র, বস্ত্র প্রভৃতি সংরক্ষণ করে রাখা হয়, তাকে বহুমুখী জাদুঘর বলে। উদাহরণ : ভারতীয় জাদুঘর (কলকাতা), শালারজং জাদুঘর (হায়দরাবাদ)। 

(ii) শিশু জাদুঘর:- যে সমস্ত শিশুদের বয়স ১২ বছরের মধ্যে তাদের জন্য তৈরি করা হয় শিশু জাদুঘর। এই ধরনের জাদুঘরের উদ্ভাবক হলেন জার্মান শিক্ষাবিদ ফ্রয়েবেল এবং ইতালীয় শিক্ষাবিদ মন্তেশ্বরী। শিশু জাদুঘরে শিশুদের উপযােগী বসে আঁকা, মডেল তৈরি, ক্যুইজ প্রতিযােগিতা, সৃজনশীল রচনা, লুকোচুরি খেলা প্রভৃতির ব্যবস্থা রাখা হয়। 

উদাহরণ : মাউন্ট রায়ান্ড চিলড্রেন মিউজিয়াম, এডিনবার মিউজিয়াম।

(iii) বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ জাদুঘর:- প্রধানত উচ্চশিক্ষার সহায়ক প্রতিষ্ঠানরুপে বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ মিউজিয়াম প্রতিষ্ঠিত হয়। এই ধরনের জাদুঘর প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্য হল দেশীয় শিক্ষামূলক তথ্যগুলি সংগ্রহ এবং অন্যান্য দেশের সঙ্গে এর যােগাযােগ ঘটানাে। মূলত গবেষক-শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা এই ধরনের জাদুঘর ব্যবহার করেন। নানা ধরনের শিল্পকীর্তি, প্রযুক্তিবিদ্যা, চিকিৎসাবিদ্যা, স্থাপত্য বিদ্যা, নৃবিদ্যা প্রভৃতির নিদর্শন এই জাদুঘরে সংরক্ষিত থাকে। উদাহরণ : প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় মিউজিয়াম-সুইজারল্যান্ডের ব্যাসেলের জাদুঘর (১৬৭১ খ্রিঃ)। প্রথম কলেজ জাদুঘর-আমেরিকার ইয়েল কলেজের আর্ট গ্যালারি (১৮৩২ খ্রি)। 

২) কলা জাদুঘর:

i) শিল্প সংরক্ষণ জাদুঘর:- শিল্প সংরক্ষণ জাদুঘরে বিভিন্ন ধরনের মৃৎশিল্প, আসবাবপত্র, ধাতব ফলকে খােদিত শিল্প, ভাস্কর্য, চিত্র, নকশা, শিল্প সংক্রান্ত পুস্তক, প্রাচীন মুদ্রা প্রভৃতি সংরক্ষণ করা হয়। এইসব শিল্পকলা প্রদর্শনের জন্য প্রদর্শনীগুলিকে দেয়ালে না ঝুলিয়ে কোনাে বিশেষ ঘরের ক্রমােচ্চ পাটাতনে সাজিয়ে রাখা হয়। উদাহরণ : ফিলাডেলফিয়া মিউজিয়াম অব আর্ট (আমেরিকা), আশুতােষ মিউজিয়াম অব ইন্ডিয়ান আর্ট (কলকাতা)

(ii) শিল্পদ্রব্য ও প্রতিকৃতি প্রদর্শনশালা:- যে যাদুঘরে শিল্পজাত জিনিসপত্র প্রদর্শনের জন্য সাজানাে থাকে, তাকে বলে শিল্প প্রদর্শনশালা। উদাহরণ: অকল্যান্ড শিল্প প্রদর্শনশালা (নিউজিল্যান্ড)। 

যে মিউজিয়ামে স্থাপত্য ও চিত্র প্রতিকৃতিগুলি সংগ্রহ করে রাখা হয়, তাকে বলে প্রতিকৃতি প্রদর্শনশালা। উদাহরণ : জাতীয় প্রতিকৃতি প্রদর্শনশালা (লন্ডন)।

(iii) আধুনিক কলা জাদুঘর:- সমসাময়িক শিল্প নমুনাগুলি যে জাদুঘরে পরীক্ষানিরীক্ষা করার জন্য সংরক্ষণ করে রাখা এবং যেগুলিকে প্রদর্শিত করা হয়, তাকে বলে আধুনিক কলা জাদুঘর। উদাহরন: হংকংয়ের কলা জাদুঘর (জাগান)। 

(iv) লােককলা ও কারুশিল্প জাদুঘর:- পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের লােকশিল্প ও কারুশিল্পজাত নমুনাগুলি যে জাদুঘরে সংরক্ষিত করা হয়, সেই জাদুঘরকে বলা হয় লােককলা ও কারুশিল্প জাদুঘর। মাটি, কাঠ, বাঁশ, চামড়া, শিং ও হাড় দিয়ে তৈরি নানা পুতুল, বাসনপত্র, বাদ্যযন্ত্র, অলংকার প্রভৃতি নিদর্শনগুলি এই জাদুঘরে সংরক্ষিত রাখা হয়। উদাহরণ: ন্যাশনাল ফোক অ্যান্ড ক্র্যাফট মিউজিয়াম (নিউদিল্লি)।

৩) বিজ্ঞান বিষয়ক জাদুঘর: 

(i) ভূতাত্বিক জাদুঘর:- খনিজ দ্রব্য, পাথরের টুকরাে, জীবাশ্ম প্রভৃতি ভূতাত্বিক নিদর্শনগুলিকে সংরক্ষণ করে রাখা হয় যে জাদুঘরে, তাকে বলে ভূতাত্বিক জাদুঘর। উদাহরণ : বােটানিক্যাল গার্ডেন (শিবপুর, পশ্চিমবঙ্গ)। 

(ii) প্রাণীবিদ্যা জাদুঘর:- যে সুবিশাল এলাকা জুডে জীবন্ত বন্য প্রাণীদের স্থায়ীভাবে প্রদর্শন করানাে হয়, তাকে বলে প্রাণীবিদ্যা জাদুঘর। উদাহরণ: দ্য জ্যুলজিকাল গার্ডেন (কলকাতা)। 

(iii) প্রাকৃতিক ইতিহাস জাদুঘর:- প্রাগৈতিহাসিক যুগের নানা প্রাণী এবং জীববিদ্যা, সমুদ্রবিদ্যা, নৃতত্ববিদ্যা প্রভৃতি বিষয়ের বিভিন্ন নিদর্শন যে সংগ্রহশালায় সাজিয়ে রাখা হয়, তাকে বলে প্রাকৃতিক ইতিহাস জাদুঘর। উদাহরণ: পিবডি মিউজিয়াম অব ন্যাচারাল হিস্ট্রি (আমেরিকা)। 

(iv) বিজ্ঞান জাদুঘর:- যে জাদুঘরে বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত বিবর্তন, বিজ্ঞানের অগ্রগতি, বিস্ময় প্রভৃতি বিষযের নিদর্শন সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করে এবং তা প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়, তাকে বলে বিজ্ঞান জাদুঘর। এই ধরনের জাদুঘরগুলি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই একটি গম্বুজের চতুর্দিকে বৃত্তাকার অট্টালিকায় গড়ে ওঠে। উদাহরণ: মিউজিয়াম অব সায়েন্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (শিকাগাে) 

৪) ঐতিহাসিক জাদুঘর:- 

i) প্রত্নতাত্বিক জাদুঘর:- যে জাদুঘরে প্রাগৈতিহাসিক ও ঐতিহাসিক যুগের বিভিন্ন প্রত্ননিদর্শনগুলিকে সংরক্ষণ করে রাখা হয়, তাকে বলে প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘর। উদাহরণ : ন্যাশনাল আর্কিওলজিক্যাল মিউজিয়াম (গ্রিস)।

(ii) ব্যক্তি বিষয়ক জাদুঘর:- বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কৃতবিদ্য ব্যক্তিদের ব্যবহৃত দ্রব্যসামগ্রী (চিঠিপত্র, দিনলিপি, ছবি, সমসাময়িক নথিপত্র) স্মৃতি হূিসেবে সংরক্ষণ করে রাখা হয় যে জাদুঘরে, তাকে বলে ব্যক্তি বিষয়ক জাদুঘর। উদাহরণ: জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি (কলকাতা)

(iii) স্মৃতি জাদুঘর:- মহান ও বিশিষ্ট সম্রাট-সম্রাজ্ঞী এবং তাদের সমসাময়িক ঘটনাবলীকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য যে জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করা হয়, তাকে বলে স্মৃতি জাদুঘর। উদাহরণ: ভিক্টোরিয়া মেমােরিয়াল হল (কলকাতা) 

(iv) ঐতিহাসিক গৃহ জাদুঘর:- কোন প্রাচীন ঐতিহাসিক গৃহকে কেন্দ্র করে যে জাদুঘর প্রতিষ্ঠিত হয়, তাকে বলা হয় ঐতিহাসিক গৃহ জাদুঘর। উদাহরণ: হাজারদুয়ারি (লালবাগ, মুর্শিদাবাদ)।

মূল্যায়ন:- বিভিন্ন শ্রেণীর জাদুঘরের বিভাগ থাকলেও বর্তমানে মানুষের ইন্টারনেট ব্যবস্থার যুগে ‘নেট জাদুঘর’ -এর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে। মানুষ তার প্রযােজনে যে কোন বস্তু বা প্রত্নসামগ্রী সম্পর্কে খোঁজখবর ইন্টারনেট থেকে জেনে নিচ্ছে। আবার বিনােদনের অন্যতম স্থানে পরিণত হওয়ার ফলে জাদুঘরগুলিতে দর্শকের ভিড় বাড়বে।

Read Also:

HS History Suggestion 2022 PDF Download
জাদুঘরের শ্রেণীবিভাগ বা প্রকারভেদ আলােচনা করাে।
অতীতকে স্মরণ করার ক্ষেত্রে কিংবদন্তি এবং স্মৃতিকথার ভূমিকা আলােচনা করাে।
ব্রিটিশ আমলে ভারতের ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থার সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।
ঔপনিবেশিক ভারতে অবশিল্পায়নের কারণ ও ফলাফল ব্যাখ্যা করো।
জাদুঘর কাকে বলে? অতীত পুনর্গঠনে জাদুঘরের ভূমিকা আলােচনা করাে।
ক্যান্টন বাণিজ্য কি? ক্যান্টন বাণিজ্যের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি লেখাে। এই বাণিজ্যের অবসানের কারণ আলােচনা করাে।
নৌ বিদ্রোহের কারণ ও তাৎপর্য আলােচনা করাে।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment