প্রলয়ােল্লাস (কবিতা) – কাজী নজরুল ইসলাম | Madhyamik Bengali Suggestion 2022 | প্রশ্ন ও উত্তর । Class 10 Bengali Suggestion 2022 | MCQ, সংক্ষিপ্ত, অতি সংক্ষিপ্ত এবং রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর “ একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ টপিক মাধ্যমিক পরীক্ষা (Madhyamik / WB Madhyamik / MP Exam Class 10 Exam / West Bengal Board of Secondary Education – WBBSE Madhyamik Exam / Madhyamik Class 10th / Class X / Madhyamik Pariksha) পরীক্ষায় এখান থেকে কিছু প্রশ্ন অবশ্যই থাকবে । সে কথা মাথায় রেখে Wbshiksha.com এর পক্ষ থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের দের জন্য় মাধ্যমিক বাংলা – প্রলয়ােল্লাস (কবিতা) – কাজী নজরুল ইসলাম অতি আবশ্যক কিছু প্রশ্নোত্তর এবং সাজেশন
কবিতা
প্রলয়ােল্লাস
লাল কাজী নজরুল ইসলাম
কবিতায় বিদ্রোহী কবি নজরুল পরাধীন ভারতের বিশেষ সামাজিক পরিস্থিতিতে যুগান্তরের বার্তা শুনিয়েছেন। বিশ্বব্যাপী গণবিদ্রোহের অগ্নি এ কবিতায় প্রলয়কারী নটরাজের মূর্তিতে আবির্ভূত। প্রথম বিশ্বযুদ্ধোত্তর পরাধীন ভারতবাসীর স্বাধিকার লাভের তীব্র হৃদয়ােচ্ছ্বাস প্রকাশিত হয়েছে উৎকৃষ্ট উপমার সাহায্যে আলােচ্য কবিতায়। মুক্তিকামী কবি দেখেছেন প্রলয়ংকর, মহাকালরূপী দিগম্বর নটরাজ শিবের সমাগম সম্ভাবনা। তার প্রলয়নৃত্যে সিন্ধুপারের সিংহদ্বারে আগল ভাঙবে। তিনি আসছেন জীবনহারা অসুন্দরকে ছেদন করতে। ভাঙাগড়া তার পুতুলখেলা। এই প্রলয় আসলে অমঙ্গলের, জড়ত্বের বিনাশসাধন করবে। তাই এই প্রলয়ে উল্লাস বা আনন্দ লুকিয়ে আছে। কারণ প্রলয় হচ্ছে নতুন সৃজনের গর্ভবেদনা। এই প্রলয় মধুর হাসি হেসে চিরসুন্দর গড়তে আসছে। তাই কবি সবাইকে জয়ধ্বনি দিতে বলেছেন। নববধূর প্রদীপ জ্বালিয়ে মহাকালকে স্বাগত জানাতে বলেছেন।
প্রলয়ােল্লাস (কবিতা) – কাজী নজরুল ইসলাম | Madhyamik Bengali Suggestion 2022 | প্রশ্ন ও উত্তর । Class 10 Bengali Suggestion 2022
সঠিক উত্তরটি বেছে নিয়ে লেখাে – প্রশ্নের মান ১
১। নজরুল পরিচিত
ক) দুঃখের কবি রূপে
(খ) কিশাের কবিরূপে
(গ) বিশ্বকবি রূপে
(ঘ) বিদ্রোহের কবিরূপে
উত্তর – (ঘ) বিদ্রোহের কবিরূপে
২।‘তােরা সব জয়ধ্বনি কর’ — তােরা বলতে বোেঝানােহয়েছে—
(ক) ছাত্রদের
(খ) কুসংস্কার আচ্ছন্ন ভারতীয়দের
(গ) প্রবীণদের
(খ) কুসংস্কার আচ্ছন্ন ভারতীয়দের.
উত্তর – (ঘ) কাউকে নয়
৩।‘আসছেএবার অনাগত’—অনাগতহল
(ক) অতিথি
(খ) পথিক
(গ) লেখক
(ঘ) ভয়ংকর
উত্তর – (ঘ) ভয়ংকর
৪।কবিতায় কার বহ্নিজ্বালার কথা বলা হয়েছে
(ক) দ্বাদশ রবির।
(খ) শশির
(গ) দাবানলের
(ঘ) চুল্লির
উত্তর – (ক) দ্বাদশ রবির।
৫। ‘মাভৈঃ মাভৈঃ’।—‘মাভৈঃ’ কথার অর্থ হল –
(ক) নির্ভয়ে এগিয়ে যাওয়া
(খ) মাতৃমন্ত্রে দীক্ষিত হওয়া
(গ) নত হয়ে থাকা
(ঘ) ভয়ভয় করা
উত্তর – (ক) নির্ভয়ে এগিয়ে যাওয়া
৬। মহাকাল বলা হয়েছে –
(ক) মহাদেবকে
(খ) দেবী কালিকাকে
(গ) অনন্ত সময়কে
(ঘ) কোনটিই নয়
উত্তর – (ক) মহাদেবকে
৭। ‘নূতনের কেতন’—কথাটির অর্থ হল –
(ক) স্বাধীনতার বার্তাবাহী পতাকা
(খ) নূতন পতাকা
(গ) ব্রিটিশদের পতাকা
(ঘ) নূতন সংবাদ
উত্তর – (ক) স্বাধীনতার বার্তাবাহী পতাকা
৮। বিশ্বমানের আসন কোথায় পাতা আছে –
(ক) জগতের উপর
(খ) মহাবিশ্বের উপর।
(গ) মহাসমুদ্রের উপর
(ঘ) বাহুর উপর
উত্তর – (ঘ) বাহুর উপর
প্রলয়ােল্লাস (কবিতা) – কাজী নজরুল ইসলাম | Madhyamik Bengali Suggestion 2022 | প্রশ্ন ও উত্তর । Class 10 Bengali Suggestion 2022
অতি সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্ন প্রশ্নের মান ১
১। ‘তােরা সব জয়ধ্বনি কর’– কবি কাদের জয়ধ্বনি করতে বলেছেন ?
উত্তর – কবি কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর প্রলয়ােল্লাস কবিতায় পরাধীন দেশের স্বাধীনতাকামী মানুষদের জয়ধ্বনি করতে আহ্বান জানিয়েছেন। ।
২।‘কালবােশেখির ঝড়’ বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন ?
উত্তর – ‘কালবােশেখির ঝড়’ বলতে বৈশাখ মাসের বিকাল বেলায় আকাশ । কালাে করে যে ভীষণ ঝড়ের লীলা চলে তাকে বুঝিয়েছেন। এই । ‘কালবােশেখির ঝড়’ ধ্বংসের বার্তাবহী।।
২। বিশ্বমায়ের আসন কোথায় পাতা আছে ?
উত্তর – কবি নজরুল ইসলামের প্রলয়ােল্লাস’ কবিতা অনুযায়ী ধূমকেতুর মতো ধ্বংসাত্মক শক্তি সম্পন্ন প্রলয়ের বিশাল বাহুর উপর বিশ্বমায়ের আসন পাতা আছে।
৩।‘ওরে ওই হাসছে ভয়ংকর’– ভয়ংকর হাসছে কেন ?
উত্তর – পরাধীনতার অচলায়তনের অন্ধকারকে হনন করে নবদিগন্তে নবারুণের বার্তা বহন করে নিয়ে আসছে বলে ভয়ংকর হাসছে।
৪। কার রথঘর্ঘর শােনা যাচ্ছে ?
উত্তর – পরাধীনতার শৃঙ্খলমােচনে যে নবদুত তথা দেশনায়ক আসছেন তাঁর
রথঘর্ঘর অর্থাৎ বিজয়রথের চাকার ধ্বনি শােনা যায়।
৫। ‘দিগম্বরের জটায় হাসে’– দিগম্বর কে ?
উত্তর – দিগম্বর হলেন দেবাদিদেব মহাদেব যার দুই রূপ — রক্ষক ও সংহারক।
৬। ‘ওই আসে সুন্দর সুন্দর কেমন করে আসে ?
অন্ধত্ব গোঁড়ামিতে পরিপূর্ণ সমাজকে ধ্বংস করে নব সৃষ্টি ঘটাতে সুন্দর আসে ভয়ংকর বেশে।
প্রলয়ােল্লাস (কবিতা) – কাজী নজরুল ইসলাম | Madhyamik Bengali Suggestion 2022 | প্রশ্ন ও উত্তর । Class 10 Bengali Suggestion 2022
কমবেশি ৬০টি শব্দে উত্তর লেখাে প্রশ্নের মান ৩
১। ‘ওই নূতনের কেতন ওড়ে কালবােশেখির ঝড়’-কালবােশেখির ঝড়’ বলতে কী বোেঝানাে হয়েছে ? বাক্যটির অন্তর্নিহিত অর্থ লেখাে।
উত্তর – উস্তর সাম্যবাদী কবি নজরুল ইসলাম ‘অগ্নিবীণা’ কাব্যগ্রন্থের ‘প্রলয়ােল্লাস’ কবিতায় আলােচ্য অংশে ‘কালবােশেখির ঝড়’ বলতে বৈশাখের অপরাহ্নে আকাশ বাতাস পান্ডুর করে যে ভয়ংকর ঝড় ওঠে তাকেই বােঝানাে হয়েছে।
গ্রীষ্মের প্রচন্ড দাবদাহ থেকে প্রকৃতি ও সমস্ত জীবকূলকে কিছুটা স্বস্তি ও আরাম প্রদানের জন্য ধ্বংসাত্মক শক্তি বহন করে কালবৈশাখী ঝড়ের আগমন ঘটে। গ্রীষ্মের খরতাকে ধ্বংস করে তা শান্তির বার্তা বহন করে আনে। আসলে এই ধ্বংসের মধ্য দিয়ে নবসৃষ্টির বীজ রােপিত হয়। এই ধ্বংস নবচেতনার নবারুণ। প্রকৃতি নূতন রূপে সজ্জিত হয়, আর তাই কবি কালবৈশাখীর ঝড়কে ‘নূতনের কেতন’ বলেছেন।
২। বজ্ৰশিখার মশাল জ্বেলে আসছে ভয়ংকর।- ‘ বজ্রশিখার মশাল বলতে কী বোঝানো হয়েছে ? ভয়ংকরের এইভাবে আগমনের কারণ কী ?
উওর- বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘প্রলয়ােল্লাস’ কবিতায় উল্লিখিত ‘বজশিখা’ হল –বজের আগুন। বজ্ৰশিখার মশাল’ বলতে বজ্রের আগুনের মত সর্বনাশী ভয়ংকর মশালের আগুনের কথা বলা হয়েছে। কবি বজ্রের আগুন দিয়ে মশাল জ্বালিয়ে দীনতা, হীনতা ও জীর্ণতার গ্লানিকে পুড়িয়ে নিঃশেষ করে স্বাধীনতা আনতে চেয়েছেন।
শান্ত সমাহিত মরা নদীতে যেমন কচুরিপানা জন্মে ঠিক তেমনি ব্রিটিশ রাজত্বে পরাধীনতার শৃঙ্খলে ভারতবাসীও নির্জীব বস্তুতে পরিণত হয়েছে। তাই দেশবাসীর হৃদয়ের না পাওয়ার শৃঙ্খল মােচনের জন্য, স্বাধীনতার পথ প্রদর্শনের জন্য, প্রথাগত সামাজিকতাকে ভীতি প্রদর্শনের জন্য এইরূপ আগমনের কল্পনা করেছেন কবি।
৩। “এবার মহানিশার শেষে আসবে ঊষা অরুন হেসে”- মহানিশা কী ? এই মন্তব্যের মধ্যদিয়ে কবি কিসের ইঙ্গিত দিয়েছেন ?
উওর – মহানিশা’ বলতে কবি রাজনৈতিক, সামাজিক ও শােষণ পরাধীনতার জন্য বিশ্বব্যাপী যে অন্ধকার নেমে এসেছে তাকে বুঝিয়েছেন।
রাত্রির অন্ধকার যতই গভীর হােক, সূর্যোদয় অবশ্যম্ভাবী। মানবতাবাদী কবি মহাকাশের সংহারক রূপকে তাই আহ্বান করেছেন। তিনি পারবেন। মহানিশার সংহার করতে। কবি বিশ্বাস করেছেন, এই মহানিশার অবসান ঘটিয়ে নটরাজরূপী মুক্তিপথের অগ্রদূতরা ভারতবর্ষে এনে দেবে স্বাধীনতার সূর্য।
৪। “আসছে নবীন—জীবনহারা অসুন্দরে করতে ছেদন”– নবীন’ বলতে কাকে বােঝানাে হয়েছে ? কবি কেনই বা এমন মন্তব্য করেছেন ?
উওর – বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘প্রলয়ােল্লাস’ কবিতায় ‘নবীন’ বলতে ভারতবর্ষের তরুণপ্রাণ যুবসমাজকে বােঝানাে হয়েছে।
দুশাে বছরের দাসত্বে আমাদের অন্তরাত্মা শুকিয়ে গেছে। আমরা নতুন করে স্বপ্ন দেখতে ভুলে গেছি, আমরা হৃদয়ের সুকুমার প্রবৃত্তিগুলিকে বিসর্জন দিয়েছি। তাই কবি কামনা করেছেন যে, এই জীবনহারা সুন্দরহীন সত্তা ধ্বংস করে নূতন চেতনা, কামনা-বাসনা, আকাঙ্খা ও প্রাণশক্তির জাগরণে ‘নবীন’ রূপী। শুভঙ্করের আগমন ঘটুক। তারাই পুরাতনকে ছিন্ন করে সমাজকে নতুনভাবে। গড়ে তুলবে।
৫। “ধ্বংস দেখে ভয় কেন তাের”- ধ্বংসকে দেখে ভয় না পাওয়ার কারণ লেখাে। অথবা, “ভাঙ্গা গড়া খেলা যে তার কিসের তরে ডর?” ব্যাখ্যা করাে।
প্রলয় ভয়ঙ্কর, ধ্বংসকারী। সাধারণ মানুষ প্রলয়কে দেখে ভয় পায়। কিন্তু কবি ধ্বংসকে দেখে ভয় না পাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। কারণ কবি জানেন। প্রলয়ের অর্থ নতুন সৃজন বেদন। প্রলয় একদিকে যেমন পুরাতন জীর্ণকে ধ্বংস করে। নতুন সৃষ্টি করে। অর্থাৎ নতুন গঠনের পূর্বে হবে ধ্বংস। তাই কবি প্রলয় দেখে ভয় পেতে না করেছেন।
৬। “আসছে এবার অনাগত প্রলয় নেশার নৃত্যপাগল” – প্রলয় নেশার নৃত্য পাগল বলতে কী বােঝায়? তার আগমনকে অনাগত বলা হয়েছে কেন?
উওর – প্রলয় নেশার নৃত্য পাগল বলতে প্রলয় সৃষ্টিকারী দেবাদিদেব মহাদেবকে বােঝানাে হয়েছে। তিনি প্রলয় নেশায় মত্ত থাকেন। তাই তাকে প্রলয় নেশার নৃত্য পাগল বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
তার আগমনের কোনাে নির্দিষ্ট সময় নেই। তিনি ধ্বংসের প্রতীক রূপে আবির্ভূত হয়ে যাবতীয় পুরাতনকে ধ্বংস করে নতুন সৃষ্টি করেন। তাই তার আগমনকে অনাগত বলা হয়েছে।
প্রলয়ােল্লাস (কবিতা) – কাজী নজরুল ইসলাম | Madhyamik Bengali Suggestion 2022 | প্রশ্ন ও উত্তর । Class 10 Bengali Suggestion 2022
রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর প্রশ্নের মান ৫
১। ‘তােরা সব জয়ধ্বনি কর।’— কাদের উদ্দেশ্যে কবির এই আহ্বান ? কবিতার ভাববস্তু বিশ্লেষণ করে এই আহ্বানধ্বনির পুনরাবৃত্তির
উওর – যৌক্তিকতা প্রতিপন্ন করাে। স্তর পশ্চিমবঙ্গের মধ্যশিক্ষা পর্ষদ কর্তৃক পাঠ্যতালিকাভুক্ত, চিরতারুণ্যের। প্রতীক বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘অগ্নিবীণা’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ‘প্রলয়ােল্লাস’ কবিতায় সেই সব মানুষদের আহ্বান করেছেন যারা পরাধীনতার শৃঙ্খলে মৃতপ্রায়, প্রাণহীন জড়বস্তুতে পরিণত হয়েছে। আসলে ভীরুতা কাপুরুষতার জালে আচ্ছন্ন চেতনাহীন মানুষদের জাগ্রত করার সংকল্প হৃদয় নিয়ে। কবি তাদের জয়ধ্বনি করার অভয়মন্ত্র দান করেছেন। ব্রিটিশ সরকারের হাতে পরাধীন ভারতজননীর মুক্তি সংগ্রাম শুরু হয়েছে। কবি লক্ষ্য করেছেন ‘নূতনের। কেতন’ বহন করে নিয়ে এসেছে সত্য, শিব ও সুন্দরের পূজারি তরুণ বিপ্লবীদল অনেকটা কালবৈশাখী ঝড়ের মত পুরাতনকে বিদায় দিয়ে নতুন বছরের আগমনের মত। দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে পরিবর্তন দরকার তাই কবি প্রলয়ের দেবতা মহাদেবকে রুদ্রের মূর্তিতে এগিয়ে আসতে দেখেছেন –
“মৃত্যু গহন অন্ধকূপে
মহাকালের চন্ড রূপে”
ধূম্র-ধূপে
বজ্ৰশিখার মশাল জ্বেলে আসছে ভয়ংকর।
পরাধীনতার অন্ধকারময় জগতে অজ্ঞানতার অন্ধকারে কবি আহ্বান করেছেন। তিনি যেন মশাল নিয়ে প্রকৃত পথ দেখান। তাঁর অট্টহাস্যে চরাচর স্তব্ধ হয়ে। পড়েছে। নয়নে মধ্যাহ্নে রবির প্রখরতা— ভারতের মুক্তির আকাঙ্খা তাঁর হাতেই ন্যস্ত।।
মৃতপ্রায় দেশবাসীর হৃদয়ে প্রাণ সঞ্জারের জন্য তাঁর আগমন পূর্ব দিগন্তে নবারুণের মধ্য দিয়ে শিশু শশীকলার হাস্যের মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হয়েছে অভয়বাণী। তাই প্রলয়ের মধ্যেও কবি দেশবাসীকে ভয় না পেতে বলেছেন। পরিবর্তে ভেদাভেদ ভুলে, ভয়কে জয় করে আত্মশক্তিতে বলীয়ান হয়ে, উৎপীড়িত ভারতবাসীকে কবি চিরসুন্দর ও ভয়ংকরের জয়ধ্বনির দীক্ষা দিয়েছেন। বিদ্রোহী তরুণসমাজের উৎসাহ, উদ্দীপনা বৃদ্ধি করার জন্যই এদের জয়ধ্বনি করা একান্ত প্রয়ােজন বলে মনে করেন কবি।।
২। প্রলয়ােল্লাস’ কবিতায় প্রলয়ের যে চিত্র অঙ্কিত হয়েছে তার বর্ণনা দাও।
উওর – কবি কাজী নজরুল ইসলাম রচিত ‘অগ্নিবীণা’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ‘প্রলয়ােল্লাস’ কবিতায় আসন্ন প্রলয়ের একটি কাল্পনিক চিত্র অঙ্কিত হয়েছে। প্রলয় ভয়ংকর, প্রলয় ধ্বংসকারী। সে কালবৈশাখীর ঝড়ের মতাে সকল জীর্ণতাকে বিনাশ করে নতুনের আগমন সংকেত ধ্বনিত করে। কবি জয়ধ্বনির মধ্য দিয়েই তাকে সাদরে গ্রহণ করেছেন। সে প্রলয়ের নেশায়, তাণ্ডবে মত্ত, অত্যাচারী ঔপনিবেশিক শাসকের সাত সমুদ্রপারের সিংহদরজা সে কেবল এক বজ্রনির্ঘোষে ভেঙে ফেলে। অন্ধকার মৃত্যুকুল থেকে মহাকালকে সঙ্গী করে, দূপে-ধোঁয়ায় বজ্র-প্রজ্বলিত মশাল হস্তে ছুটে আসে সেই ভয়ংকর। তার হাসিতে বিভীষিকা ; তার ঘাের কৃষ্ণবর্ণ আলুথালু চুলের ঝাপটায় আকাশ দোলে, বহ্নিমান ধূমকেতু তার দাসত্ব করে। বিশ্বমাতৃকার সন্তান প্রলয়, তারা কৃপণ হস্তে অট্টহাস্য করে ক্রমাগত অগ্রসরমান। তার আঁখিতে করােটি সুর্যের। তেজ। তার পিঙ্গলবর্ণের জটা দিগন্তে লুটায়, সাত সমুদ্রের নােনা স্বাদ তার চোখের জলে আত্মপ্রকাশ করে। এখানে পুরাণ বর্ণিত শিব ও চণ্ডীর ধ্বংসাত্মক রুপের। আত্মপ্রয়ােগ ঘটিয়েছেন কবি। জরাগ্রস্ত-অথর্ব-মুমূর্ষ সংস্কার ও মতবাদকে বিনাশ করে শিল্পীর সৃষ্টিবিদিশারী এই এলয়। তাহন্ত অথবা শিব ও নবদিগন্তের দিশারী এই প্রলয়। তার ভয়ংকরতার শেষে রয়েছে নতুন দিনের আশ্বাস। শিল্পীর সৃষ্টিবেদনার মতাে, মাতার গর্ভযন্ত্রণার মতাে প্রলয় হল নবসৃজনের ইঙ্গিতবাহী। মৃত, গলিত কুশ্রী যা কিছু, সবকে বিনাশ করে নব ইতিহাসের নব মুক্তির এবং নবীন সমাজের রূপকার হল এই প্রলয়। সে চিরসুন্দর, মৃত্যুঞ্জয়ী, তাই তার আগমনে কবি। উল্লাস ব্যক্ত করেছেন।
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।