বাংলা নাটকে মধুসূদন দত্তের অবদান আলোচনা করো l
উত্তর:–
ভূমিকা:- বাংলা নাট্য সাহিত্যের ইতিহাসে মধুসূদন এক অবিস্মরণীয় ব্যক্তিত্ব। বাংলা নাট্যমঞ্চে মধুসূদনের আবির্ভাব কিছুটা আকস্মিকভাবেই। বেলগাছিয়া রঙ্গমঞ্চে রামায়ণ তর্করত্নের লেখা রত্নাবলী নাটকের অভিনয় দেখে মধুসূদন বিরক্ত হন। সেই বিরক্তি থেকেই মদুসূদন নিজেকে বাংলা নাটক রচনায় নিয়ােজিত করেছিলেন। তার চেষ্টায় বাংলা নাটকে ইউরােপীয় নাট্যরীতির অনুপ্রবেশ ঘটেছে।
নাটকসমূহ:- মধুসূদন দত্ত অসংখ্য নাটক লিখেছিলেন। আলােচনার সুবিধার জন্য তাঁর নাটকগুলিকে কতকগুলি ভাগে ভাগ করা হল—
(১) পৌরাণিক নাটক:- শর্মিষ্ঠা (১৮৫৯), পদ্মাবতী (১৮৬০)
(২) ঐতিহাসিক নাটক:- কৃষ্ণকুমারী (১৮৬১)
(৩) রূপক নাটক:- মায়াকানন (১৮৭৩)
(৪) প্রহসন:- একেই কী বলে সভ্যতা (১৮৬০), বুড়াে শালিকের ঘাড়ে রোঁ ((১৮৬০)
(ক) শর্মিষ্ঠা:- মধুসূদনের প্রথম নাটক হল ‘শর্মিষ্ঠা’। এখানে মহাভারতের যযাতি-শর্মিষ্ঠা- দেবযানীর কাহিনী স্থান পেয়েছে। এই নাটকে ঈর্ষা, কাম ও ত্রিকোণ প্রেমের চিত্র ধরা পড়েছে। এই নাটকে নারী চরিত্রগুলি উনবিংশ শতকে ব্যক্তিত্বময়ী নারীর মতো। এই নাটকে পাশ্চাত্য রীতির প্রভাব লক্ষ্য করা যায়।
(খ) পদ্মাবতী:- মধুসূদন গ্রিক পুরাণ অবলম্বনে ‘পদ্মাবতী’ নাটকটি লেখেন। গ্রিক পুরাণে আছে কে বেশি সুন্দরী তা নিয়ে তিনজন দেবী জুনাে, ভেনাস ও প্যালাসের মধ্যে বিবাদ লাগে। রাজা প্যারিস শ্রেষ্ঠ সুন্দরীরূপে ভেনাসকে নির্বাচন করে। বিনিময়ে রাজা প্যারিস সুন্দরী হেলেনকে লাভ করে। মধুসূদনের নাটকে প্যারিস হল ইন্দ্রনীল এবং হেলেন হল পদ্মবতী। ইন্দ্রনীল রতিকে (ভেনাস) শ্রেষ্ঠ সুন্দরী রূপে নির্বাচন করে এবং বিনিময়ে ইন্দ্রনীল সুন্দরী পদ্মাবতীকে লাভ করে।
(গ) কৃষ্ণকুমারী:- মধুসূদনের একমাত্র ঐতিহাসিক নাটক হল কৃষ্ণকুমারী। নাটকটির কাহিনী উইলিয়াম টডের ‘রাজস্থান’ নামক গ্রন্থ থেকে সংগৃহীত হয়েছে। এই নাটকে দেখানাে হয়েছে রাজা ভীমসিংহের কন্যা কৃষ্ণকুমারী ছিলেন অসাধারণ সুন্দরী। রাজা জয়সিংহ ও রাজা মানসিংহ উভয়ে কষ্ণকুমারীকে বিবাহ করতে চায়। কৃষ্ণকুমারীকে না পেলে তারা ভীমসিংহের রাজ্য আক্রমণ করবে বলে জানিয়ে দেয়। পিতা ভীমসিংহকে উভয়মুখী আক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করতে কৃষ্ণকুমারী আত্মহত্যা করে।
(ঘ) একেই কী বলে সভ্যতা:- মধুসূদনের শ্রেষ্ঠ প্রহসনমূলক নাটক হল ‘একেই কী বলে সভ্যতা’। এই নাটকে নব্য যুবকদের নিয়ম ভাঙার নামে অপরিমিত মদ্যপান, নীতিহীন জীবনযাপন, জীবনের সহজ ধর্মকে অস্বীকার প্রভৃতি ব্যঙ্গচিত্রের মাধ্যমে দেখানাে হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে ইয়ংবেঙ্গলরাই ছিল এই নাটকের প্রধান চরিত্র।
(ঙ) বুড়াে শালিকের ঘাড়ে রোঁ:- মধুসূদনের আরেকটি প্রহসনমূলক নাটক হল ‘বুড়াে শালিকের ঘাড়ে রো’। এই নাটকে ধর্মের নামে অনাচারী, লালসাগ্রস্থ ও অত্যাচার মানুষের স্বরূপ অঙ্কিত হয়েছে। বৃদ্ধ ভক্তপ্ৰসাদ জমিদার, সে গরীব চাষিদের এক পয়সা খাজনা মাফ করে না, সর্বদা ধর্মের কথা বলে, নারী ঘেঁষা। হানিফের স্ত্রী ফতেমাকে দেখতে খুব সুন্দর। তাই ভক্তরাম ফতেমাকে পাবার জন্য লােভ দেখায়। ভক্তরামের, পিঠে পড়ে একটা গুমসাে কিল।
মূল্যায়ন:- মধুসূদন বাংলা নাটককে আধুনিকতার অঙ্গনে এনেছিলেন। তিনি নাটকের সংলাপে অমিত্রাক্ষর ছন্দ ব্যবহার করেছেন। তিনি বাংলা নাটকের একটি পথরেখা তৈরি করে দিয়েছিলেন যা পরবর্তী বহু নাট্যকার অনুসরণ করেছেন। তবে মধুসূদন নাটকে সবই করেছিলেন, শুধু প্রাণ প্রতিষ্ঠা করতে পারেননি।
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ , উপকৃত হলাম!
Ami anek upokar holam kintu aktu problem thaklo karon ti holo uposonghar ney
Thanks
Khub help korlo
Thanks
Khub bhalo
Thanks👍
Thank you 😊
It’s very helpfull for me thank u so much 🙏💕