ফরাজি আন্দোলনের সূচনা ও প্রসার আলােচনা করাে। 

ফরাজি আন্দোলনের ওপর একটি প্রবন্ধ রচনা করাে। 
অথবা, ফরাজি আন্দোলনের সূচনা ও প্রসার আলােচনা করাে।  8 Marks/Class 10

উত্তর:

ভূমিকা : ঊনবিংশ শতকের প্রথমার্ধে কৃষক বিদ্রোহের ইতিহাসে মুসলিম সম্প্রদায়ের ভূমিকা ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ফরাজি আন্দোলন হল এইরকমই একটি কৃষক বিদ্রোহ।

হাজি শরিয়ত উল্লাহ

আন্দোলনের উৎপত্তি : পূর্ববঙ্গের ফরিদপুর নিবাসী হাজি শরিয়ত উল্লাহ মুসলিম ধর্মের সংস্কারের জন্য ফরাজি আন্দোলনের সূচনা করেন। তিনি ব্রিটিশ-শাসিত ভারতবর্ষকে ‘দার-উল-হারব’ বা বিধর্মীদের দেশ বলে অভিহিত করেন। ইসলামের আদি ও অকৃত্রিম আদর্শের পুনরুজ্জীবন ঘটিয়ে বাংলাদেশকে তিনি দার-উল-ইসলাম’-এ পরিণত করতে চেয়েছিলেন। পরবর্তীকালে এই বিদ্রোহ কৃষক বিদ্রোহের চরিত্র নেয়।

আদর্শ : এই আন্দোলনের মূল আদর্শ ছিল– (১) ইসলাম আদর্শ বিরােধী সকল আচার-অনুষ্ঠান, রীতিনীতি ও কুসংস্কার বর্জন করা, (২) ইসলামের সাম্যের আদর্শকে প্রতিষ্ঠা করা এবং (৩) ভারতবর্ষকে ‘দার-উল-ইসলামে’ পরিণত করা। 

উদ্দেশ্য : কোরানের পবিত্র আদর্শ অনুসরণ করে চলা, ইসলামীয় ভাবধারার পুনরুজ্জীবন করা, জমিদারদের শােষণের হাত থেকে কৃষকদের মুক্ত করা, ব্রিটিশ শাসনের উচ্ছেদ করে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠা করা, জমিদার মহাজনের বিরােধিতা করা, সাম্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা করাই ছিল এই আন্দোলনের লক্ষ্য। 

দুদু মিঞার ভূমিকা : ১৮৩৭ খ্রিস্টাব্দে শরিয়ত উল্লাহের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র দুদু মিঞা (মােহম্মদ মহসীন) ১৮৬২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ফরাজি আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। তিনি — (১) বাহাদুরপুরে প্রধান কার্যালয় স্থাপন করে, লাঠিয়াল ও গুপ্তচর বাহিনী গঠন করেন;  (২) তার প্রভাবাধীন এলাকাকে কয়েকটি হক্কায় বিভক্ত করে খলিফা নিয়ােগ করেন এবং (৩) জমিদার নীলকরদের বিরুদ্ধে আক্রমণ ও পদক্ষেপ গ্রহণ করে ফরাজি আন্দোলনকে ধর্মীয় আন্দোলন থেকে আর্থসামাজিক-রাজনৈতিক আন্দোলনে উন্নীত করেন।

আতঙ্কিত জমিদার, মহাজন, নীলকরদের চাপে ১৮৩৮ খ্রিস্টাব্দে, ১৮৪১ খ্রিস্টাব্দে এবং ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে দুদু মিঞাকে গ্রেপ্তার করা হলেও প্রমাণাভাবে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। ১৮৬২ খ্রিস্টাব্দে দুদু মিঞার মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র নােয়া মিঞা এই আন্দোলনে ধর্মীয় আদর্শকে গুরুত্ব প্রদান করলে এর গুরুত্ব কমে যায়। 

প্রকৃতি : ঢাকা, বরিশাল, ফরিদপুর, ময়মনসিংহ, ত্রিপুরা প্রভৃতি জেলায় এই আন্দোলন বিস্তার লাভ করে। ফরাজি আন্দোলন ইসলাম ধর্মের সংস্কার সাধনের উদ্দেশ্যে শুরু হলেও ক্রমশ তা জমিদার-বিরােধী আন্দোলনে পরিণত হয়। অধিকাংশ জমিদাররাই হিন্দু হলেও ফরাজি আন্দোলন সম্পূর্ণভাবে হিন্দু-বিরােধী সাম্প্রদায়িক আন্দোলন ছিল না, কারণ এই আন্দোলনে মুসলমান কৃষকদের পাশাপাশি বহু হিন্দু কৃষকও শামিল হয়েছিল।

ব্যর্থতার কারণ : দুদু মিঞার মৃত্যুর পর যােগ্য নেতৃত্বের অভাব, ধর্মীয় সংকীর্ণত, রাজনৈতিক দূরদর্শিতার অভাবে আন্দোলন দুর্বল হয়ে পড়ে। এ ছাড়া সাধারণ লােককে জোর করে দলভুক্ত করা, অর্থ আদায়, সরকারি দমননীতি প্রভৃতি কারণে ফরাজি আন্দোলন ব্যর্থ হয়ে যায়।

গুরুত্ব : ফরাজি আন্দোলন শেষপর্যন্ত ব্যর্থ হলেও ব্রিটিশ বিরােধী কৃষক আন্দোলন হিসেবে এই আন্দোলন ছিল খুবই গুরত্বপর্ণ। ড. অভিজিৎ দত্ত বলেছেন, ফরাজিরা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের উচ্ছেদক না পারলেও বাংলা থেকে ব্রিটিশ শাসনের উচ্ছেদ কামনা করেছিল l

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment