ফরাজি ও ওয়াহাবি আন্দোলনের পার্থক্যগুলি আলােচনা করাে। 

ফরাজি ও ওয়াহাবি আন্দোলনের পার্থক্যগুলি আলােচনা করাে।  8 Marks/Class 10

উত্তর:

ভূমিকা : ভারতে ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসন প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপটে উনিশ শতকে ইসলামীয় পুনরুজ্জীবনের জন্য যে সমস্ত আন্দোলন হয়েছিল তার মধ্যে ফরাজি ও ওয়াহাবি আন্দোলন ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। 

পার্থক্য : দুটি আন্দোলনের মধ্যে যথেষ্ট মিল থাকলেও উভয় আন্দোলনের মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য লক্ষ করা যায়, যেমন— 

ব্রিটিশ বিরােধিতা : ওয়াহাবি আন্দোলন তথা তিতুমিরের আন্দোলন যতটা ইংরেজ-বিরােধী ছিল ফরাজি আন্দোলন ততটা ছিল না । তিতুমির ব্রিটিশ শাসনের উচ্ছেদের পক্ষে ছিলেন। অন্যদিকে, দুদু মিঞা সরকারের কাছে এক আর্জিতে জানান যে, জমিদার ও নীলকরদের বিরুদ্ধে তাদের সংগ্রাম, ব্রিটিশ রাজ সম্পর্কে তাদের কোনাে বিদ্বেষ নেই। 

স্বাধীনতার ধারণা : তিতুমির ব্রিটিশ শাসনকে গুরুত্ব না দিয়ে স্বাধীন ওয়াহাবি রাজ্য ঘােষণা করেন। অন্যদিকে, দুদু মিঞা। খিলাফত প্রশাসন নামক একটি স্বশাসিত প্রশাসন গড়ে তােলেন।

আন্দোলনের পরিধি : ফরাজি আন্দোলন মূলত বাংলাদেশে বিস্তার লাভ করেছিল কিন্তু ওয়াহাবি আন্দোলনের পরিধি ছিল অনেক বিস্তৃত। 

ধর্মীয় আচরণ : ওয়াহাবিদের বলা হত জুম্মাওয়ালা, কেননা তারা নামাজ ও জুম্মা পাঠ করতেন। অন্যদিকে ফরাজিদের বলা হত বে-জুম্মাওয়ালা। কারণ তাঁদের মতে, ইংরেজ অধিকৃত ভারতবর্ষ ছিল ‘দার-উল-হারব। সুতরাং এই অবস্থায় ভারতে জুম্মা প্রার্থনা উচিত নয় বলে তারা মনে করতেন।

সাম্যের ধারণা : ওয়াহাবিরা প্রত্যেক ওয়াহাবিকে সমান মনে করলেও ফরাজি মতে সকল ফরাজি ছিল সমান।

শীর্ষ নেতৃত্ব : তিতুমির ও তাঁর অনুগামীরা সৈয়দ আহম্মদকে গুরু বলে মনে করতেন, কিন্তু ফরাজিরা সৈয়দ আহম্মদের গুরু শাহ ওয়ালিউল্লাহের মতাবলম্বী ছিল।

মূল্যায়ন : দুটি আন্দোলনের মধ্যে কিছু কিছু পার্থক্য থাকলেও এই আন্দোলন দুটির হাত ধরেই মুসলমান সমাজের সংস্কার শুরু হয় যা পরবর্তীকালের আন্দোলনগুলির পথপ্রদর্শক রূপে চিহ্নিত হয়ে আছে।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

2 thoughts on “ফরাজি ও ওয়াহাবি আন্দোলনের পার্থক্যগুলি আলােচনা করাে। ”

Leave a Comment