প্রশ্ন – উনিশ-বিশ শতকের নারী জাগরণের পটভূমি আলােচনা করাে 8 Marks | Class 10
উত্তর: ঔপনিবেশিক ভারতে উনিশ শতকের সমাজ সংস্কার আন্দোলনে নারী সমাজের অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার দিকে বিশেষ। নজর দেওয়া হয়। এইভাবেই নারীশিশু হত্যা বন্ধ হয়, সতীদাহ প্রথা রদ হয় এবং বিধবা পুনর্বিবাহ আইন সিদ্ধ হয়। তবে সরকারি আইনের পাশাপাশি ভারতীয় শাস্ত্রকেও বৈধতার রক্ষাকবচ হিসেবে রাখা হয়। কিন্তু নারী জাতি মর্যাদার জন্য সংস্কার কার্যক্রমে নারী জাতির নিজস্ব ভূমিকা ছিল না।
নারী জাগরণের পটভূমি : উনিশ শতকে ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষার বিস্তার, নারী শিক্ষার প্রসার ও নারীকল্যাণ সাধনের প্রচেষ্টা প্রাথমিকভাবে নারী জাগরণের পটভূমি তৈরি করেছিল। এই পটভূমির অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ দিক হল—
১) নতুন নারীর আবির্ভাব : ঔপনিবেশিক পর্বের আগে হিন্দু বা মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের মহিলারা সামাজিক অনুশাসনে আবদ্ধ ছিল। তবে নারী সমস্যাকে কেন্দ্র করে নারী শিক্ষার প্রশ্নটি যখন বড়াে হয়ে ওঠে তখন পুরুষদের পাশাপাশি কতিপয় শিক্ষিত নারীও সমস্যার সমাধানে এগিয়ে আসেন। এইসব শিক্ষিত নারীরা ভদ্রমহিলা’ নামে পরিচিত হন।
২) ভারতীয় পুরুষ সংস্কারক : রাধাকান্ত দেব, ডেভিড হেয়ারের। স্কুল বুক সােসাইটি; পরে কেশবচন্দ্র সেন ও ব্রাহ্ সমাজ, পশ্চিম ভারতে মহাদেব গােবিন্দ রানাডে ও প্রার্থনা সমাজ, উত্তর ভারতে স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী ও আর্যসমাজ নারী শিক্ষার প্রসার ও আধুনিকীকরণে সচেষ্ট হন। প্রকৃতপক্ষে ব্রাত্ম সমাজ ছিল উনিশ শতকের নারী প্রগতির ধারক ও বাহক।
৩) পূর্ণায়ত নারী উদ্যোগ : বিদেশি ও শিক্ষিত ভারতীয় যে সমস্ত নারীরা যারা নারী প্রগতি নিয়ে চিন্তাভাবনা করছিলেন, তাদের মধ্যে উল্লেখযােগ্য ছিল মাদ্রাজের অ্যানি বেসান্ত ও তাঁর থিওসফিকাল সােসাইটি, পশ্চিম ভারতে পণ্ডিতা রমাবাই, মাদ্রাজে ভগিনী শুভলক্ষ্মী ও বাংলার বেগম রােকেয়া শাখাওয়াত হােসেন, কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায়, চন্দ্রমুখী বসু।
৪) বঙ্কিমচন্দ্র ও অবনীন্দ্রনাথের উদ্যোগ : বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় তার রচিত আনন্দমঠ উপন্যাসে দেশকে দেশমাতারূপে উপস্থাপন করেন। তিনি তার অন্যান্য কয়েকটি উপন্যাসে। নারীমহিমাকেও তুলে ধরেন। অন্যদিকে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর কর্তৃক অঙ্কিত ‘ভারতমাতা’ ছবিতে ভারতমাতাকে দেবী ও মানবীরূপে চিহ্নিত করে নারী মহিমাকে তুলে ধরেন।
৫) রাজনৈতিক চেতনা : উনিশ শতকের শেষ ও বিশ শতকের শুরুতে নারীশিক্ষার হার ক্রমশই বাড়তে থাকে। কিছু ধনী পরিবার, ঔপনিবেশিক শাসক গােষ্ঠী নারীশিক্ষা উদ্যোগে শামিল হন। নারীরা। শিক্ষিত হওয়ার ফলে তাদের রাজনৈতিক চেতনাও বাড়ে এবং স্বাধীনতা আন্দোলনেও তারা অংশ নেন।
৬) পত্রপত্রিকার ভূমিকা : উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে ‘বামাবােধিনী পত্রিকা’, নারীশিক্ষা ও নারীদের মধ্যে জাতীয়তাবাদী চেতনা সারে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছিল। আবার বিংশ শতকে কৃয়কুমার মিত্রের কন্যা কুমুদিনী মিত্রের সুপ্রভাত’, মীরা দাশগুপ্তার সম্পাদিত ‘বেণু’ পত্রিকা এবং সরলাদেবী চৌধুরানির ভারতী’ পত্রিকা নারী জাগরণে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছিল।
উপসংহার : উপরােক্ত বিভিন্ন সহায়ক উপাদানের প্রভাবে ভারতের নারী সমাজে শিক্ষার প্রসার ও জাতীয়তাবাদের প্রসার ঘটেছিল। শেষপর্যন্ত বঙ্গভঙ্গ-বিরােধী আন্দোলনকালে নারীরা। নিজস্ব পরিসরে অন্দরমহলের বাইরে সভাসমিতি, মিটিং-মিছিল এবং জাতীয় আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে।
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।