হিমবাহের সঞ্জয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপের বর্ণনা দাও।

হিমবাহের সঞ্জয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপের বর্ণনা দাও।    Class 10 | Geography | 5 Marks

উত্তর:-

হিমবাহের সঞ্চয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ : হিমবাহের সঞয়কার্যকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়, যথা— [1] পর্বতের উপরিভাগে সঞয় এবং [2] পর্বতের পাদদেশে সঞ্চয় বা হিমবাহ ও জলধারার মিলিত সঞয়। এর ফলে বিভিন্ন প্রকার ভূমিরূপ গঠিত হয়। যেমন—

1. পর্বতের উপরিভাগে সঞ্চয় :
(i) গ্রাবরেখা: উৎপত্তি: পার্বত্য উপত্যকা দিয়ে যাওয়ার সময় ক্ষয়জাত পদার্থগুলি ওই হিমবাহের সঙ্গে বাহিত হয়ে উপত্যকার বিভিন্ন অংশে সঞ্চিত হয়। সঞ্চিত এইসব পদার্থ গ্রাবরেখা বা মােরেন নামে পরিচিত।
শ্রেণিবিভাগ: অবস্থানের পার্থক্য অনুসারে বিভিন্ন প্রকার গ্রাবরেখা দেখতে পাওয়া যায়, যেমন—
[a] পার্শ্ব গ্রাবরেখা: হিমবাহের প্রবাহপথের দু-পাশে হিমবাহের সাথে বাহিত পদার্থসমূহ সঞ্চিত হলে তাকে বলে পার্শ্ব গ্রাবরেখা।
[b] প্রান্ত গ্রাবরেখা: হিমবাহের প্রবাহপথের শেষপ্রান্তে ওইসব পদার্থ সঞ্চিত হলে, তাকে বলে প্রান্ত গ্রাবরেখা
[c] মধ্য গ্রাবরেখা: দুটি হিমবাহ পাশাপাশি মিলিত হলে মাঝখানে সৃষ্টি হয় মধ্য গ্রাবরেখা
[d] ভূমি গ্রাবরেখা: হিমবাহের তলদেশে গ্রাবরেখা সঞ্চিত হলে তাকে ভূমি গ্রাবরেখা বলে। আকৃতি ও প্রকৃতি অনুসারে গ্রাবরেখা চার ভাগে বিভক্ত, যেমন—
[a] অবিন্যস্ত গ্রাবরেখা: হিমবাহের সামনে ইতস্তত বা বিক্ষিপ্তভাবে গ্রাবরেখা গড়ে উঠলে অবিন্যস্ত গ্রাবরেখার সৃষ্টি হয়।
[b] বলয়ধর্মী গ্রাবরেখা: গ্রাবরেখা বলয়াকারে সৃষ্টি হলে তাকে বলয়ধর্মী গ্রাবরেখা বলে।
[c] রােজেন গ্রাবরেখা: একটির ওপর একটি গ্রাবরেখা থাকলে রােজেন গ্রাবরেখার সৃষ্টি হয়।
[d] স্তরায়িত গ্রাবরেখা : হিমবাহ দ্বারা বাহিত পদার্থ সমুদ্র তলদেশে সঞ্চিত হলে স্তরায়িত গ্রাবরেখার সৃষ্টি হয়।
উদাহরণ: পূর্ব হিমালয়ে জেমু হিমবাহের শেষ প্রান্তে তিস্তা নদীর উচ্চ অববাহিকায় বিভিন্ন গ্রাবরেখা আছে।

চিত্র : বিভিন্ন ধরনের গ্রাবরেখা।

(ii) আগামুক বা ইরাটিক: হিমবাহের সঙ্গে বহুদূর থেকে বিভিন্ন আকৃতির। শিলাখণ্ড বাহিত হয়ে এসে কোনাে স্থানে সঞ্চিত হলে যে ভূমিরূপ গড়ে ওঠে, তা আগামুক বা ইরাটিক নামে পরিচিত l
বৈশিষ্ট্য: [a] আগামুক হিমবাহের সঞয় কাজের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ। [b] এর শিলাধর্মের সঙ্গে স্থানীয় শিলাধর্মের কোনাে মিল থাকে না। [c] এগুলি কঠিন শিলায় গঠিত হয়।
উদাহরণ: কাশ্মীরের পহেলগামের উঁচু পার্বত্য অঞ্চলে আগামুক দেখতে পাওয়া যায়। 

2. পর্বতের পাদদেশে সঞ্চয় বা হিমবাহ ও জলধারার মিলিত কাজের ফলে গঠিত ভূমিরূপ: পর্বতের পাদদেশে হিমবাহের প্রান্তসীমায় (অর্থাৎ হিমরেখার নীচে) হিমবাহ ও হিমবাহগলিত জলধারা মিলিতভাবে কিছু ভূমিরূপ গঠন করে, যেমন— 

(i) বহিঃধৌত সমভূমি: উৎপত্তি: প্রান্ত গ্রাবরেখার শেষে বরফগলা জলপ্রবাহের মাধ্যমে হিমবাহবাহিত নুড়ি, কাকর, বালি প্রভৃতি বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে সঞ্চিত হলে যে সমভূমির সৃষ্টি হয়, তাকে বলে বহিঃধৌত সমভূমি বা আউট-ওয়াশ প্লেন
বৈশিষ্ট্য: [a] বহিঃধৌত সমভূমি হিমবাহ ও জলধারার মিলিত কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ। [b] বহিঃধৌত সমভূমিতে অনেকসময় কোনাে গর্তে হিমবাহগলা জল জমে হ্রদের সৃষ্টি হয়।
উদাহরণ: উত্তর আমেরিকার কানাডা ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বৃহৎ হ্রদ অঞ্চলে এরূপ সমভূমি দেখা যায়।

(ii) ড্রামলিন: উৎপত্তি: বহিঃধৌত সমভূমিতে বা তার কাছে হিমবাহ ও জলধারাবাহিত প্রস্তরখণ্ড, নুড়ি, কাকর, বালি প্রভৃতি এমনভাবে টিলার মতাে সঞ্চিত হয় যে, সেগুলিকে দূর থেকে দেখলে মনে হয় যেন উলটানাে নৌকা বা চামচ উলটানাে অবস্থায় আছে। এই ধরনের ভূমিরূপগুলি ড্রামলিন নামে পরিচিত। যেসব জায়গায় একসঙ্গে অনেক ড্রামলিন অবস্থান করে সেই জায়গাকে দূর থেকে ডিম ভরতি ঝুড়ির মতাে দেখতে লাগে। এজন্য ড্রামলিন অধ্যুষিত অঞ্চলকে ডিমের ঝুড়ি ভূমিরূপ (Basket of Eggs Topography) বলা হয়।
উদাহরণ: আয়াল্যান্ড ও স্কটল্যান্ডে এই ধরনের ভূমিরূপ দেখা যায়।
বৈশিষ্ট্য: [a] ড্রামলিন হিমবাহের সঞ্চয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ। [b] এগুলির উচ্চতা 6 মি থেকে 60 মি হয়। [c] এগুলি হিমবাহপ্রবাহের দিকে। অমসৃণ ও খাড়াই এবং বিপরীত দিকে মসৃণ ও ঢালু হয়। উদাহরণ:  সুইটজারল্যান্ডের আল্পস পর্বতে এই ধরনের ভূভাগ দেখা যায়। 

চিত্র: ড্রামলিন।

(iii)কেম: উৎপত্তি: হিমবাহের শেষপ্রান্তে হিমবাহবাহিত শিলাখণ্ড, নুড়ি, কাকর, বালি, কাদা প্রভৃতি পদার্থকে যখন হিমবাহগলিত জলধারা বহন করে নিয়ে গিয়ে কোনাে বড়াে জলাভূমি বা হ্রদে সঞ্চয় করে ত্রিকোণাকার বা বদ্বীপের মতাে ভূমিরূপ গড়ে তােলে, তখন তাকে বলা হয় কেম
বৈশিষ্ট্য: [a] কেম হিমবাহ ও জলধারার মিলিত কার্যের ফলে গড়ে ওঠা একটি ভূমিরূপ। [b] হিমবাহ উপত্যকার দু-পাশে কেম সৃষ্টি হলে তাকে কেম মঞ্চ বলে।
উদাহরণ: ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জের নরফেকেন গ্লাভেন উপত্যকায় কেম ও কেম সােপান আছে। 

চিত্র: কেম

(iv)এসকার: উৎপত্তি: অনেক সময় হিমবাহবাহিত প্রস্তরখণ্ড, নুড়ি, কাকর, বালি প্রভৃতি হিমবাহগলিত জলধারার মাধ্যমে পরিবাহিত হয়ে পর্বতের পাদদেশে আকাবাকা শৈলশিরার মতাে ভূমিরপ গঠন করে। একে এসকার বলা হয়।
বৈশিষ্ট্য: [a] এসকারগুলির উচ্চতা প্রায় 3 থেকে 5 মিটার হয়। [b] এগুলি আঁকাবাঁকা ও সংকীর্ণ হয় এবং দৈর্ঘ্যে কয়েক কিলােমিটার পর্যন্ত হয়।
উদাহরণ: ফিনল্যান্ডের পুনকাহারয়ু এসকারের উল্লেখযােগ্য উদাহরণ।

চিত্র: এসকার ।

(v) কেটল: উৎপত্তি: কোনাে কোনাে সময় বহিঃধৌত সমভূমিতে বিরাট বিরাট বরফের চাই নানা ধরনের অবক্ষেপের মধ্যে চাপা পড়ে থাকে। পরে যখন ওই বরফ গলে যায়, তখন সেখানে বেশ বড় গর্তের সৃষ্টি হয়। এই গর্তগুলিই কেটল নামে পরিচিত। পরবর্তীকালে ওইসব গর্তে হিমবাহ গলিত জল জমে যে হ্রদের সৃষ্টি হয় তাকে বলে কেটল হ্রদ।
উদাহরণ: স্কটল্যান্ডের উত্তরে ওকনি  দ্বীপে কে এবং কেটল হ্রদ আছে।

(vi) নব: উৎপত্তি: হিমবাহবাহিত পাথর, নুড়ি, কাকর প্রভৃতি হিমবাহ গলিত জলধারার মাধ্যমে বহিঃধৌত সমভূমির ওপর ছােটো ছােটো টিলার আকারে সঞ্চিত হলে সেই টিলাগুলিকে নব বলে।
উদাহরণ: আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের হ্রদ অঞ্চলে বহু নব আছে।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

1 thought on “হিমবাহের সঞ্জয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপের বর্ণনা দাও।”

Leave a Comment