বায়ুর সঞয়কার্যের ফলে গঠিত ভূমিরূপের বর্ণনা দাও | উদাহরণ ও চিত্র-সহ বায়ুর সঞয়জাত ভূমিরূপগুলি বর্ণনা করাে। Class 10 | Geography | 5 Marks
উত্তর:-
বায়ুর সঞ্চয়জাত ভূমিরূপসমূহ : বায়ুর সঞ্চয়কার্যের ফলে গঠিত উল্লেখযােগ্য ভূমিরূপগুলি হল—
বালিয়াড়ি :
বালিপূর্ণ বায়ুর গতিপথে গাছপালা, বড়াে প্রস্তরখণ্ড, ঝােপঝাড় বা অন্য কোনােরকম বাধা থাকলে বায়ুবাহিত বালির কিছু অংশ সেখানে সঞ্চিত হয়ে ক্রমশ ঢিবির মতাে উঁচু হয়ে যায়। স্থূপাকারে সঞ্চিত এই বালির ঢিপিগুলিকে বলা হয় বালিয়াড়ি।
উপবিভাগ: বিখ্যাত বিজ্ঞানী ব্যাগনল্ড বালিয়াড়িকে দুটি শ্রেণিতে ভাগ করেন — (1) তির্যক বালিয়াড়ি এবং (2) অনুদৈর্ঘ্য বালিয়াড়ি।
(1) তির্যক বালিয়াড়ি: যেসব বালিয়াড়ি বায়ুর গতির সঙ্গে আড়াআড়িভাবে গড়ে ওঠে, তাদের বলে তির্যক বালিয়াড়ি। এদের আবার তিন ভাগে ভাগ করা যায় — [i] বারখান, [ii] অ্যাকলে বালিয়াড়ি এবং [iii] রাের্ডস বালিয়াড়ি।
[i] বারখান: যেসব বালিয়াড়ি একেবারে অর্ধচন্দ্রের আকারে গড়ে ওঠে, সেই বালিয়াড়িগুলিকে বলে বারখান। উদাহরণ: সাহারা মরুভূমিতে অনেক বারখান দেখা যায়।
[ii] অ্যাকলে বালিয়াড়ি: একাধিক বারখান পরপর পাশাপাশি গঠিত হওয়ার ফলে যে আঁকাবাঁকা ও সারিবদ্ধ শৈলশিরার মতাে বালিয়াড়িশ্রেণির সৃষ্টি হয়, তাদের একত্রে অ্যাকলে বালিয়াড়ি বলা হয়। এই বালিয়াড়ির বাঁকের সামনের অংশকে লিংগুয়েড এবং পিছনের অংশকে বারখানয়েড বলে।
[iii] রাের্ডস বালিয়াড়ি: যেসব তির্যক বালিয়াড়ি দেখতে অনেকটা পিরামিডের মতাে সেই বালিয়াড়িগুলিকে বলে রাের্ডস বালিয়াড়ি। বিভিন্ন দিক থেকে বায়ু প্রবাহিত হলে বারখানগুলিই। রাের্ডস বালিয়াড়িতে পরিণত হয়।
(2) অনুদৈর্ঘ্য বালিয়াড়ি বা সিফ বালিয়াড়ি: যেসব বালিয়াড়ি বায়ুর গতিপথের সঙ্গে সমান্তরালভাবে গড়ে ওঠে, সেইসব বালিয়াড়িকে বলা হয় অনুদৈর্ঘ্য বালিয়াড়ি। এদের মধ্যে যেগুলি খুব দীর্ঘ কিন্তু সংকীর্ণ, একেবারে তরবারির মতাে দেখতে, সেগুলিকে বলে সিফ বালিয়াড়ি।
উদাহরণ: থর মরুভূমিতে সিফ দেখা যায়।
(3) অন্যান্য বালিয়াড়ি: উল্লিখিত প্রধান দুই বালিয়াড়ি ছাড়াও উৎপত্তি, আকার ও অবস্থান অনুসারে আরও কয়েক ধরনের বালিয়াড়ি মরুভূমিতে দেখা যায়। তবে এগুলি অপ্রধান বালিয়াড়ি, যেমন —
[i] মস্তক বালিয়াড়ি: ঝােপঝাড়, প্রস্তরখণ্ড প্রভৃতির যে দিক থেকে বায়ু প্রবাহিত হয়, সেই দিকেই বালিয়াড়ি সৃষ্টি হলে তাকে মস্তক বালিয়াড়ি বলে।
[i] পুচ্ছ বালিয়াড়ি: প্রস্তরখণ্ড, গাছপালা প্রভৃতির যে দিক থেকে বায়ু প্রবাহিত হয় , ঠিক তার বিপরীত দিকে সরু ল্যাজের মতাে গড়ে ওঠা বালিয়াড়িকে বলে পুচ্ছ বালিয়াড়ি।
[iii] পার্শ্বস্থ বালিয়াডি: প্রস্তরখণ্ড, ঝােপঝাড় প্রভৃতির উভয়দিকে বালিয়াড়ি সৃষ্টি হলে তাকে পার্শ্বস্থ বালিয়াড়ি বলে।
[iv] অগ্রবর্তী বালিয়াড়ি: মস্তক বালিয়াড়ির সামনে ঘূর্ণি বাতাসের প্রভাবে সৃষ্ট বালিয়াড়ি অগ্রবর্তী বালিয়াড়ি নামে পরিচিত।
[v] নক্ষত্র বালিয়াড়ি: বিভিন্ন দিক থেকে আসা বাতাসের মাধ্যমে প্রস্তরখণ্ড, গাছপালা প্রভৃতির বিভিন্ন দিকে বালিয়াড়ি সৃষ্টি হলে তাকে নক্ষত্র বা তারা বালিয়াড়ি বলে।
[vi] অস্থায়ী বা চলমান বালিয়াড়ি: বেশিরভাগ বালিয়াড়িই বায়ুপ্রবাহের মাধ্যমে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় সরে সরে যায়। এদের বলে অস্থায়ী বা চলমান বালিয়াড়ি। রাজস্থানের মরু অঞ্চলে এই চলমান বালিয়াড়িকে বলে ধ্রিয়ান।
লােয়েস সমভূমি :
উৎপত্তি: মরুভূমির বালুকামিশ্রিত হলুদ রঙের শিথিল অতিসুক্ষ পলিকণা বায়ুপ্রবাহের সঙ্গে বহুদূর পর্যন্ত উড়ে গিয়ে সঞ্চিত হয়। একে লােয়েস বলে। এভাবে বায়ুবাহিত সূক্ষ্ম বালুকণা ও পলিকণা দীর্ঘপথ অতিক্রম করে সেখানকার বিস্তৃত এলাকায় সঞ্চিত হয়ে যখন সমভূমি সষ্টি করে। তখন তাকে লােয়েস সমভূমি বলে।
উদাহরণ: উত্তর চিনের হােয়াং নদীর উপত্যকায় এই লােয়েস সমভূমি দেখা যায়। মধ্য এশিয়ার গােবি মরুভূমি থেকে বায়ুপ্রবাহের সঙ্গে বিপুল পরিমাণ বালুকারাশি উড়ে এসে চিনের হােয়াংহাে নদীর উপত্যকায় সঞ্চিত হয়ে এই সমভূমি গঠন করেছে।
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।