চিত্র-সহ ভূপৃষ্ঠের নিয়ত বায়ুগুলির পরিচয় দাও। অথবা, পৃথিবীর নিয়ত বায়ুপ্রবাহগুলির উৎপত্তি ও গতিপথ চিত্রসহ ব্যাখ্যা করাে। Class 10 | Geography | 5 Marks
উত্তর: নিয়ত বায়ুপ্রবাহ
পৃথিবীতে 3টি স্থায়ী নিম্নচাপ ও 4 টি স্থায়ী উচ্চচাপ বলয় থাকার জন্য কতকগলি বায়ু সারাবছর ধরে ওই উচ্চচাপ বলয়গুলি থেকে নিম্নচাপ বলয়গুলির দিকে নিয়মিতভাবে নির্দিষ্ট পথে প্রবাহিত হয়। এদের বলে নিয়ত বায়ু। নিয়ত বায়ু প্রধানত তিনপ্রকার—
![](http://wbshiksha.com/wp-content/uploads/2022/06/33.png)
1. আয়ন বায়ু: উত্তর ও দক্ষিণ গােলার্ধের যথাক্রমে কর্কটীয় ও মকরীয় বা উপক্রান্তীয় উচ্চচাপ বলয় থেকে যে দুটি বায়ু সারাবছর নিয়মিতভাবে নির্দিষ্ট পথে নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয়ের দিকে প্রবাহিত হয়, তাদের বলা হয় আয়ন বায়ু।
শ্রেণিবিভাগ: আয়ন বায়ু দু-প্রকার—[i] উত্তর-পূর্ব আয়ন বায়ু : উত্তর গােলার্ধের উপক্রান্তীয় উচ্চচাপ বলয় থেকে আয়ন বায়ু নিরক্ষীয় নিম্নচাপ। বলয়ের দিকে প্রবাহিত হওয়ার সময় ফেরেলের সূত্র অনুসারে ডান দিকে বেঁকে উত্তর-পূর্ব দিক থেকে প্রবাহিত হয়। একে বলা হয় উত্তর-পর্ব আয়ন বায়ু। [ii] দক্ষিণ-পূর্ব আয়ন বায়ু: দক্ষিণ গােলার্ধের উপক্রান্তীয় উচ্চচাপ বলয় থেকে আয়ন বায়ু নিয়মিতভাবে নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয়ের। দিকে প্রবাহিত হওয়ার সময় ফেরেলের সূত্র অনুসারে বাম দিকে বেঁকে দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে প্রবাহিত হয়। তাই এই বায়ুর নাম আয়ন বায়ু।
বৈশিষ্ট্য: [i] বায়ুর গতিবেগ: উত্তর গােলার্ধে স্থলভাগ বেশি বলে উত্তর-পূর্ব আয়ন বায়ুর গতিবেগ একটু কম, ঘণ্টায় 15-25 কিলােমিটার। দক্ষিণ গােলার্ধে জলভাগ বেশি থাকায় দক্ষিণ-পূর্ব আয়ন বায়ু ঘণ্টায় 25-35 কিলােমিটার বেগে প্রবাহিত হয়। [ii] প্রবাহ অঞল: আয়ন বায়ু সাধারণত নিরক্ষরেখার দু-দিকে 5° থেকে 25° অক্ষরেখার মধ্যে সারাবছর প্রবাহিত হয়। [iii] প্রভাব: আয়ন বায়ুর প্রবাহপথে মহাদেশগুলির পশ্চিম দিকে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় পৃথিবীর বড়াে বড়াে মরুভূমিগুলি (যেমন—সাহারা, থর, কালাহারি, আটাকামা প্রভৃতি) সৃষ্টি হয়েছে।
2. পশ্চিমা বায়ু : উত্তর ও দক্ষিণ গােলার্ধের উপক্ৰান্তীয় উচ্চচাপ বলয় থেকে যে বায়ু দুই মেরুবৃত্তপ্রদেশীয় নিম্নচাপবলয় (সুমেরুবৃত্তপ্রদেশীয় ও কুমেরুবৃত্তপ্রদেশীয়)-এর দিকে সারাবছর নির্দিষ্ট পথে নিয়মিতভাবে প্রবাহিত হয়, তাদের বলা হয় পশ্চিমা বায়ু ।
শ্রেণিবিভাগ: পশ্চিমা বায়ু দু প্রকার—[i] দক্ষিণ-পশ্চিমা বায়ু: উত্তর গােলার্ধের উপক্ৰান্তীয় উচ্চচাপ বলয় থেকে পশ্চিমা বায়ু সুমেরুবৃত্তপ্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয়ের দিকে প্রবাহিত হওয়ার সময় ফেরেলের সূত্রানুসারে ডান দিকে বেঁকে দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে প্রবাহিত হয়। তাই এই বায়ুকে বলা হয় দক্ষিণ-পশ্চিম পশ্চিমা বায়ু। [ii] উত্তর-পশ্চিম পশ্চিমা বায়ু: দক্ষিণ গােলার্ধের উপক্ৰান্তীয়। উচ্চচাপ বলয় থেকে পশ্চিমা বায়ু ফেরেলের সুত্রানুসারে বাম দিকে বেঁকে উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে কুমেরুবৃত্তপ্রদেশীয় নিম্নচাপ। বলয়ের দিকে প্রবাহিত হয়। তাই এই বায়ুকে বলা হয় উত্তর-পশ্চিম পশ্চিমা বায়ু।
বৈশিষ্ট্য: [i] নামকরণ: পশ্চিম দিক থেকে প্রবাহিত হয় বলে এই বায়ু পশ্চিমা বায়ু নামে পরিচিত। [ii] নিম্নচাপ বলয় অভিমুখী প্রবাহ: উত্তর ও দক্ষিণ উভয় গােলার্ধে 35-60° অক্ষাংশের মধ্যে। উপক্রান্তীয় উচ্চচাপ বলয় থেকে মেরুবৃত্তপ্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয় অভিমুখে পশ্চিমা বায়ু প্রবাহিত হয়। [iii] বৃষ্টিপাতের আধিক্য: পশ্চিমা বায়ুর প্রভাবে মহাদেশগুলির পশ্চিম অংশে বৃষ্টিপাত তুলনামূলকভাবে বেশি হয়। [iv] নাতিশীতােয় তৃণভূমির অবস্থান: পশ্চিমা বায়ুর প্রভাবে মহাদেশগুলির পূর্বাংশে বৃষ্টির পরিমাণ ক্রমশ কমে যাওয়ায় বিস্তীর্ণ নাতিশীতােয় তৃণভূমির সৃষ্টি হয়েছে। [v] গতিবেগ: এই বায়ুর গতিবেগ উত্তর গােলার্ধের থেকে দক্ষিণ গােলার্ধে (জলভাগের বণ্টন বেশি থাকার কারণে) বেশি।
3. মেরু বায়ু : সুমেরু ও কুমেরু উচ্চচাপ বলয় থেকে যে বায়ু। নিয়মিতভাবে মেরুবৃত্তপ্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয়ের দিকে প্রবাহিত হয়, তাদের মেরু বায়ু বলে।
শ্রেণিবিভাগ: মেরু বায়ু দু-প্রকার—[i] উত্তর-পূর্ব মেরু বায়ু: উত্তর গােলার্ধের মেরু বায়ু সুমেরু দেশীয় উচ্চচাপ বলয় থেকে ফেরেলের সূত্রানুসারে ডান দিকে বেঁকে উত্তর-পূর্ব দিক থেকে সুমেরুবৃত্তপ্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয়ের দিকে প্রবাহিত হয়। এর নাম উত্তর-পূর্ব মেরু বায়ু। [ii] দক্ষিণ-পূর্ব মেরু বায়ু: দক্ষিণ গােলার্ধের মেরু বায়ু কুমেরু দেশীয় উচ্চচাপ বলয় থেকে কুমেরুবৃত্তপ্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয়ের দিকে ধাবিত হওয়ার সময় ফেরেলের সূত্রানুসারে। বাম দিকে বেঁকে দক্ষিণ-পূর্ব মেরু বায়ু নামে প্রবাহিত হয়।
বৈশিষ্ট্য: [i] শুষ্ক প্রকৃতি: মেরু বায়ু অতিশীতল ও শুষ্ক প্রকৃতির। [ii] শীতকালীন প্রাধান্য: এই বায়ুর প্রভাব বছরের অন্য সময়ের তুলনায় শীতকালে বেশি পরিলক্ষিত হয়। [iii] তুষারপাত ও বৃষ্টিপাত: মেরু বায়ুর প্রভাবে মহাদেশগুলির পূর্ব অংশে তুষারপাত ও সামান্য বৃষ্টিপাত হয় এবং দুই মেরুবৃত্তে ভয়াবহ তুষারঝড়ের সৃষ্টি হয়।
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।
একটু ছোট করেলে খুব ভালো হত