মরু অঞ্চলের প্রসারণ কেন ঘটছে? কীভাবে এর প্রতিকার করা সম্ভব?

মরু অঞ্চলের প্রসারণ কেন ঘটছে? কীভাবে এর প্রতিকার করা সম্ভব? Class 10 | Geography | 5 Marks

উত্তর:-

মরু অঞ্চলের প্রসারণের কারণ :

বর্তমানে ভারতের থর বা আফ্রিকার সাহারাসহ পৃথিবীর অধিকাংশ মরুভূমির সম্প্রসারণ ঘটে চলেছে, এর কারণগুলি হল— 

1. বালিপূর্ণ প্রবল বায়ুপ্রবাহ : মরুভূমি থেকে আগত বালিপূর্ণ বাতাসের মাধ্যমে সংলগ্ন এলাকাসমূহে বালি জমা হতে হতে ধীরে ধীরে মরুভূমির সম্প্রসারণ ঘটে।

2. অনিয়ন্ত্রিত পশুচারণ : মরুভূমির প্রান্তভাগে স্বল্প বৃষ্টিপাতযুক্ত এলাকাসমূহে কিছু কিছু তৃণভূমি সৃষ্টি হয়। কৃষিকাজের অভাবে মরুভূমির অধিবাসীরা ওইসব তৃণভূমিতে পশুচারণ করে জীবিকা নির্বাহ করে। কিন্তু অধিক সংখ্যায় পশুচারণের জন্য ওইসব তৃণভূমি দ্রুত বিলুপ্ত হয়ে সেখানে মরুভূমির সম্প্রসারণ ঘটে।

চিত্র: মরু সম্প্রসারণ (সাহারা মরুভুমির বিস্তার) 

3. বন নিধন: মরুভূমিসংলগ্ন অঞ্চলে ব্যাপক হারে গাছপালা কাটলে মরুভূমির বিস্তার দ্রুত হয়। 

4. অবৈজ্ঞানিক প্রথায় কৃষিকাজ : মরুভূমির আশেপাশে কোনাে কোনাে স্থানে চাষাবাদ করার সুযােগ থাকলেও অবৈজ্ঞানিক প্রথায় ফসল উৎপাদনের জন্য জমির উর্বরতা হ্রাস পেয়ে ওইসব স্থানে মরুভূমি বিস্তার লাভ করে। 

5. খরার প্রাদুর্ভাব : পরপর কয়েক বছর খরা হলে সেখানে মাটির আদ্রতা এতটাই হ্রাস পায় যে গাছপালা শুকিয়ে জায়গাটি ধীরে ধীরে মরুভূমিতে পরিণত হয়।

6. বিশ্ব উয়ায়ন : বর্তমানে বিশ্ব উন্নয়ন তথা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে অধিকাংশ মরুভূমির আশেপাশে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ যেমন হ্রাস পেয়েছে তেমনই তাপমাত্রাও ক্রমশ বেড়ে চলেছে এবং এই অবস্থা মরুভূমির সম্প্রসারণে অনুকূলে প্রভাব ফেলেছে। 

এ ছাড়া অবৈজ্ঞানিক প্রথায় জলসেচ,  মরু অঞলে যান্ত্রিক আবহবিকারের প্রাধান্যের কারণে ক্রমশ শিলাচূর্ণ ও বালুকণার পরিমাণ বৃদ্ধি প্রভৃতিও মরু সম্প্রসারণে সহায়তা করে। 

মরুভুমির প্রসারণ প্রতিরােধের উপায় : 

মরুভূমির প্রসারণ কিছুটা হলেও প্রতিরােধ করা সম্ভব। মরুভূমির প্রসারণ রােধ করার উপায়গুলি হল— 

1. বনসৃজন : মরুভূমির প্রান্ত বরাবর নিবিড়ভাবে বনভূমি গড়ে তুলতে হবে। গাছ মরু প্রসারণ রােধ করে। এমন উদ্ভিদ রােপণ করতে হবে, যা মরু জলবায়ুর উপযুক্ত অর্থাৎ খরা সহনশীল। 

2. পশুচারণ নিয়ন্ত্রণ : মরুভূমির সম্প্রসারণ রােধে মাত্রাহীন পশুচারণ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। 

3. জ্বালানি কাঠের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ : মরুভূমির উদ্ভিদসমূহকে সুরক্ষিত রাখার জন্য আলাদাভাবে জ্বালানি কাঠের চাষ তথা উৎপাদন ছাড়াও বিকল্প জ্বালানির উৎসগুলি ব্যবহারের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। 

4. বৈজ্ঞানিক প্রথায় চাষ: মরুভূমিতে আধুনিক জলসেচ পদ্ধতির প্রয়ােগ, জলের সঠিক ব্যবহার, খরা সহনশীল শস্যের উৎপাদন প্রভৃতির মাধ্যমে মরুভূমির বিস্তার রােধ করা সম্ভব। 

5. জল সংরক্ষণ: রেন ওয়াটার হারভেস্টিং এবং অধিক সংখ্যায় পুকুর খননের মাধ্যমে বৃষ্টির জল সংরক্ষণ ও ভৌমজলকে রিচার্জ করা, জলের অপচয় বন্ধ করা, জলের বহুমুখী ও বিজ্ঞানসম্মত ব্যবহার বাড়ানাে প্রভৃতির মাধ্যমে মরুভূমির প্রসার রােধ করা যায়। 

অন্যান্য : 
6. মরুভূমির প্রান্তে গাছ ও ঝােপঝাড়ের সাহায্যে বায়ুপ্রবাহে বাধা সৃষ্টিকারী উইন্ডব্রেক গড়ে তােলা, 7. স্যান্ড শিল্ড নির্মাণ, ৪. লবণ সহ্যকারী উদ্ভিদ রােপণ প্রভৃতির মাধ্যমে মরুভূমির সম্প্রসারণ রােধ করা যায়। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, সাহারা মরুভূমির সম্প্রসারণ রােধে এর দক্ষিণ সীমায় প্রায় 8000 কিমি দীর্ঘ এবং প্রায় 15 কিমি প্রস্থ সমন্বিত সবুজ উদ্ভিদের একটি প্রাচীর গড়ে তােলা হচ্ছে যার নাম গ্রেট গ্রিন ওয়াল। প্রকল্পটি সম্পূর্ণ হলে সাহারার দক্ষিণমুখী সম্প্রসারণ বন্ধ হবে বলে আশা করা যায়।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment