অবশিল্পায়ন বলতে কী বোঝো | উপনিবেশিক যুগে ভারতের ওপর এর কি প্রভাব পড়েছিল 

অবশিল্পায়ন বলতে কী বোঝো ? উপনিবেশিক যুগে ভারতের ওপর এর কি প্রভাব পড়েছিল 
অথবা, অবশিল্পায়ন কি ? উপনিবেশিক আমলে ভারতে অবশিল্পায়নের ফলাফল সম্পর্কে আলোচনা করো। Class 12 | History 8 Marks

উত্তর:

ভূমিকা : অবশিল্পায়ন শব্দটি শিল্পের অধঃপতনকে বোঝায়। শিল্পায়নের সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে তাই ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ প্রসারে সর্বাপেক্ষা বিষময় ফল হলো ভারতের চিরাচরিত ও ঐতিহ্যমন্ডিত কুটির শিল্পের ধ্বংস। অর্থনৈতিক ইতিহাসের পরিভাষায় এই অবস্থাকে অবশিল্পায়ন বলেঅবশিল্পায়নের ফলে ভারত ইংল্যান্ডের কারখানায় তৈরি পণ্যের বাজারে পরিণত হয়।

অবশিল্পায়নের ফলাফল : অবশিল্পায়নের পর ভারতে যে সমস্ত ফলাফল লক্ষ্য করা যায় সেগুলি হল যথা —

কর্মহীনতা : অবশিল্পায়নের ফলে ভারতের চিরাচরিত হস্তশিল্প এবং কারিগর শ্রেনী কাজ হারিয়ে বেকার সমস্যার সম্মুখীন হয়ে পড়ে এবং সেই বেকারত্ব থেকে মুক্তির জন্য তাদের পৈত্রিক কাজ ছেড়ে অন্য জীবিকা গ্রহণ করে।

কুটির শিল্পের ধ্বংসসাধন : অবশিল্পায়নের ফলে কুটির শিল্প ধ্বংসসাধন হয় যন্ত্রচালিত কলকারখানা গড়ে ওঠে। কিন্তু ভারতে তা না ঘটায় কুটির শিল্পীরা চরম দূর্দশার মুখে পড়ে।

নগরজীবনের অবক্ষয় : অবশিল্পায়নের ফলে ভারতের প্রাচীন ও সমৃদ্ধ শহরগুলির অবক্ষয় শুরু হয়। অষ্টাদশ শতকে ঢাকা,মুর্শিদাবাদ,সুরাট,মুসলিম পট্টম, তাঞ্জোর প্রভৃতি ছিল শিল্পসমৃদ্ধ ঘনবসতিপূর্ণ নগর। শিল্প-বাণিজ্য ধ্বংসের ফলে এসব নগর ক্রমে জনবিরল হতে থাকে এবং নগরের অক্ষবয় শুরু হয়।

কাঁচামাল সরবরাহের দেশ : অবশিল্পায়নের ফলে ভারত বর্ষ একটি কাঁচামাল রপ্তানিকারক দেশে পরিণত হয়। এখানকার কাঁচামাল সস্তায় ক্রয় করে ইংরেজ বণিকরা ইংল্যান্ডের রপ্তানি করতে থাকে। যার ফলে ভারত থেকে কাচা রেশম, নীল,কাঁচা,তুলা প্রভৃতি কাঁচামাল সংগ্রহ করে মুনাফার শীর্ষে পৌঁছায়।

কৃষির ওপর চাপ বৃদ্ধি : অবশিল্পায়নের ফলে কর্মহীন শিল্পী ও কারিগররা কাজ হারিয়ে বিকল্প কর্মসংস্থান হিসেবে কৃষিক্ষেত্রে ভিড় জমায়। যার ফলে কৃষি জমির অনুপাত মানুষের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার ফলে তাদের জীবিকা নির্বাহের প্রচন্ড দুর্দশা দেখা দেয়। ফলে দেশে কৃষিজীবী ভূমিহীন কৃষকদের সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পায়।

গ্রামীণ অর্থনীতিতে ভাঙ্গন : অবশিল্পায়নের ফলে ভারতের গ্রামীণ অর্থনীতি ভেঙে পড়ে। যার ফলে গ্রামগুলির দরিদ্রতা বৃদ্ধি পেলে সেখানে অর্থনৈতিক সমস্যায় জর্জরিত হয়ে প্রাণে বেঁচে থাকার তাগিদে কৃষিকে ঘৃণার ছলে মনেপ্রাণে বেছে নিয়ে বিশাল বহুল জীবন থেকে ন্যূনতম জীবনকে পাথেয় করে নেয়।

দরিদ্রতা বৃদ্ধি : শিল্প-বাণিজ্য ধ্বংসের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতি ধ্বংস হলে ভারত একটি দরিদ্র দেশে পরিণত হয়। অবশিল্পায়নের ফলে একদিকে যেমন ভারতের অর্থনীতি রক্তশূন্য হয়ে পড়ে অন্যদিকে তেমনি দরিদ্রতা বৃদ্ধি পায় তাই দারিদ্র্য,দুর্ভিক্ষ ও মহামারী ভারতীয় জীবনের নিত্য সঙ্গী হয়ে পড়ে।উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে অবশিল্পায়নকে অনেক ঐতিহাসিকও গবেষকরা সমালোচনা করে অলীক কল্পনা করে আখ্যা দিয়েছেন। ডাক্তার বিপিনচন্দ্র ও তপন রায় চৌধুরী প্রমূখ মনে করেন অবশিল্পায়ন একটি বাস্তব ঘটনা যা ভারতবাসীকে দুঃখ-দুর্দশার অতল গহবরে নিক্ষেপ করেছিল।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment

error: Content is protected !!