আধুনিক জীবনে সংবাদপত্রের ভূমিকা – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা

আধুনিক জীবনে সংবাদপত্রের ভূমিকা – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা

আধুনিক জীবনে সংবাদপত্রের ভূমিকা

উত্তর:

আধুনিক জীবনে সংবাদপত্রের ভূমিকা

সংবাদপত্র সমগ্র পৃথিবীর সঙ্গে মানুষের যােগসূত্র। সংবাদপত্র আবার সমাজের জাগ্রত বিবেকও। শব্দের সারিবদ্ধ মিছিলে বিশ্বের চলমান ঘটনাপ্রবাহের অনবদ্য গ্রন্থনা। আধুনিক মানুষের জীবন তাই সংবাদপত্রকে অসংকোচে তার সঙ্গী করে নিয়েছে।

১৬০৫ খ্রিস্টাব্দে জার্মানিতে প্রথম সংবাদপত্রের অস্তিত্বের কথা জানা যায়। বিভিন্ন সরকারি ঘােষণা ও নির্দেশনামায় যদিও সংবাদপত্রের আদিরূপ দেখা গিয়েছিল। প্রাচীন রােমে জুলিয়াস সিজারের এরকম বুলেটিনের কথা জানা যায়। ভারতে ১৭৮০ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা থেকে প্রকাশিত জেমস্ অগাস্টাস হিকি সম্পাদিত বেঙ্গল গেজেট-ই প্রথম সংবাদপত্র হিসেবে চিহ্নিত। এরপর ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয় বোম্বে হেরল্ড। প্রথম বাংলা সংবাদপত্র হিসেবে ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দের ২৩ মে প্রকাশিত হয় সমাচার দর্পণ। সংবাদপত্রের বিকাশের এই ইতিহাস সময়ের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে আরও সমৃদ্ধ হয়েছে। ২০০৭ খ্রিস্টাব্দে ভারতেই পাঁচ হাজার সংবাদপত্রের অস্তিত্বের কথা জানা যায়। সমগ্র পৃথিবীতে রােজ ৩৯৫ মিলিয়ন সংবাদপত্র বিক্রি হয়, ভারতে এর পরিমাণ ৯৮.৮ মিলিয়ন। এইসব তথ্য আধুনিক জনজীবনে সংবাদপত্রের গ্রহণযােগ্যতারই প্রমাণ।

বিভিন্ন দেশে বেশ কিছু সংবাদপত্র জনমত গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে। ইংল্যান্ডে দ্য টাইমস, দ্য গার্ডিয়ানস, দ্য অবসার্ভার ইত্যাদি কিংবা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দ্য নিউইয়র্ক টাইমস, দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল, দ্য ওয়াশিংটন পােষ্ট ইত্যাদির নাম উল্লেখযােগ্য। ভারতে টাইমস অফ ইন্ডিয়া, দ্য স্টেটসম্যান, দ্য টেলিগ্রাফ দ্য হিন্দু, হিন্দুস্থান টাইমস ইত্যাদি সংবাদপত্রের জনজীবনে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রয়েছে। বাংলায় আনন্দবাজার পত্রিকা, আজকাল, বর্তমান, সংবাদ প্রতিদিন ইত্যাদির নাম উল্লেখযােগ্য।

সংবাদপত্র হল গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ। রাষ্ট্র পরিচালনায় সংবাদপত্রের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার জন্য ফ্রান্সে একে ‘ফোর্থ এস্টেট’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। সংবাদপত্র কোনাে দেশের সরকার পরিচালন পদ্ধতিতে যেমন সতর্ক নজর রাখে, তেমনি রাষ্ট্রনীতি-সমাজনীতি-অর্থনীতির বিশ্লেষণ ও গঠনমূলক সমালােচনার মধ্যে দিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করে। পাঠকদের মতামত প্রকাশের সুযােগ দিয়ে সরকার ও প্রশাসনের কাছে পৌঁছে দেয় জনগণের কণ্ঠস্বর। এইভাবে সংবাদপত্র হয়ে ওঠে গণতন্ত্রের সদাজাগ্রত প্রহরী।

সংবাদপত্র বিনােদনেরও মাধ্যম। চলচ্চিত্র এবং খেলাধুলার বিস্তারিত খবর তুলে ধরে সংবাদপত্র। একজন কৃষকও তার কৃষি সংক্রান্ত পরামর্শ পেয়ে যান সংবাদপত্র থেকে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে অচেনা নানা প্রতিভাকে প্রচারের আলােয় নিয়ে আসে সংবাদপত্র। শিক্ষার্থীদের জন্য নানা পরামর্শ ও পথ-নির্দেশনাও এর মাধ্যমে পাওয়া যায়। নানা ক্ষেত্রে বিশিষ্ট মানুষদের তথ্যসমৃদ্ধ বিশ্লেষণধর্মী লেখা পাঠকদের চিন্তার জগৎকে সমৃদ্ধ করে।

বৈদ্যুতিন গণমাধ্যমের সর্বগ্রাসী প্রভাব সংবাদপত্রকে কঠিন লড়াইয়ের সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। বিভিন্ন অনলাইন সংবাদপত্র এই পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। তা সত্ত্বেও সংবাদপত্রের সর্বব্যাপী যে আবেদন—তা আজও অক্ষত। কিন্তু মনে রাখতে হবে, সংবাদপত্র, যেন তার গুরুত্বের অপব্যবহার না করে। কোনাে বিশেষ স্বার্থের কাছে নিজেকে না বিকিয়ে দেয়। সংবাদপত্রকে হতে হবে নিরপেক্ষ এবং সত্যনিষ্ঠ। তবেই তা জাতির জাগ্রত বিবেকের কণ্ঠস্বর হয়ে উঠবে।

আরো পড়ুন

ইনটারনেট এবং আধুনিক জীবন – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা

মানবধর্ম – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা

বাংলার উৎসব – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা

হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা

শিক্ষাবিস্তারে গণমাধ্যম | মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা

Read More »

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment