আধুনিক প্রযুক্তি ও আমরা- মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
উত্তর:
আধুনিক প্রযুক্তি ও আমরা
সভ্যতার ঊষাকালে মানুষের জীবন ছিল প্রতিকূলতা ও অনিশ্চয়তায় পূর্ণ। সেই কঠিন দিনযাপনকে ক্রমশ সহজ করে তােলে মানুষেরই মস্তিষ্কপ্রসূত নানান প্রয়ােগকৌশল। কৃষিকাজ, আত্মরক্ষা, পশুশিকার, রান্নাবান্না প্রভৃতি ক্ষেত্রে লাঙল, অস্ত্রশস্ত্র, যন্ত্রপাতির ব্যবহার তার জীবনে প্রযুক্তির প্রাথমিক সুফল এনে দেয়। আর প্রাচীনকালের সেইসব থুল প্রযুক্তির ক্রমােন্নয়নই আজ মানুষকে পৌঁছে দিয়েছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিবিজ্ঞানের যুগে।
আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সবকিছুতেই আজ জড়িয়ে রয়েছে আধুনিক প্রযুক্তিবিজ্ঞান। ইলেকট্রিক আলাে-পাখা, টেলিভিশন, রেডিয়াে, ফ্রিজ, হিটার, টেলিফোন, গ্যাস ওভেন প্রভৃতিতে তার ছাপ অত্যন্ত স্পষ্ট। বাইরে পা বাড়ালেও একই দৃশ্য। ট্রেন, বাস, এরােপ্লেন, বড়াে বড়াে কলকারখানা থেকে শুরু করে জমিচাষের ট্রাক্টর, বীজ বপন ও ফসল কাটার মেশিন, ফসল ঝাড়াইয়ের মেশিন সবই প্রযুক্তিবিজ্ঞানের অবদান।
সংবাদপত্র, রেডিয়াে, চলচ্চিত্র, দুরদর্শন প্রভৃতি গণমাধ্যম প্রযুক্তিবিজ্ঞানেরই অবদান। যত দিন যাচ্ছে ততই আরও উন্নত প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে এইসব গণমাধ্যম আরও বহু মানুষের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে। সংবাদপত্রের মুদ্রণ ও প্রকাশের ক্ষেত্রে যুগান্তর এসেছে। উন্নত হয়েছে বেতার সম্প্রচার ব্যবস্থা। আর টেলিভিশনের ক্ষেত্রে প্রযুক্তির বিস্ময়কর ব্যবহার সমগ্র বিশ্বকে এনে দিয়েছে আমাদের হাতের মুঠোয়।
মহাকাশ এবং পরমাণু গবেষণা—এই দুটি ক্ষেত্রে একালের বিজ্ঞানীদের আগ্রহ ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। মহাকাশে স্থাপন করা হচ্ছে কৃত্রিম উপগ্রহ, চন্দ্রেমঙ্গলেশুক্রে চলছে অভিযান, চলছে মহাকাশ সংক্রান্ত নানান গবেষণা। পরমাণুশক্তিকে ব্যবহার করা হচ্ছে বিভিন্ন কাজে। কীভাবে এই শক্তিকে আরও বেশি করে কাজে লাগানাে যায় তার জন্য বিজ্ঞানীদের চেষ্টার অন্ত নেই। আর এই প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রধান অবলম্বন প্রযুক্তিবিজ্ঞান।
প্রযুক্তিবিজ্ঞানের একটি উল্লেখযােগ্য অবদান কম্পিউটার। কম্পিউটারকে বাদ দিয়ে আধুনিক জীবনকে আজ ভাবাই যায় না। এই যন্ত্রটির সাহায্যে মানুষ ঘরে বাইরে বহু জটিল ও দুরূহ কর্ম সম্পাদন করছে অত্যন্ত অল্প সময়ে। প্রযুক্তিবিজ্ঞানীদের অবিরাম চেষ্টায় দিন দিন এই যন্ত্রটি উন্নত হয়ে উঠছে।
প্রযুক্তিবিজ্ঞানের অভাবনীয় উন্নতি মানবসভ্যতাকে বহুদুর এগিয়ে দিয়েছে। দ্রুততর হয়েছে সভ্যতার অগ্রগতি। তবু মানুষের অশুভ বুদ্ধি এই প্রযুক্তিবিজ্ঞানের অসামান্য শক্তিকে ধ্বংসাত্মক কাজে ব্যবহার করতে দ্বিধা করছে না, যা অত্যন্ত আক্ষেপের বিষয়। এই শক্তিকে কাজে লাগিয়ে মানুষ তৈরি করছে ভয়ংকর মারণাস্ত্র। সেইসব মারণাস্ত্র প্রয়ােগের আশঙ্কায় আজ সমগ্র পৃথিবী কাঁপছে। অন্যদিকে, কাণ্ডজ্ঞানহীনভাবে প্রযুক্তিবিজ্ঞানকে ব্যবহারের ফলে প্রাকৃতিক ভারসাম্যও নষ্ট হতে বসেছে। অবিলম্বে সতর্ক না হলে চরম বিপদ ঘনিয়ে উঠতে আর বেশি দেরি নেই, মানবসভ্যতার বিনাশ তখন হবে কেবল সময়ের অপেক্ষামাত্র।
আধুনিক প্রযুক্তিবিজ্ঞান আজ যে জায়গায় গিয়ে পেছছে তা মানবসভ্যতার চরম উৎকর্ষের প্রমাণ। মানুষ তার বুদ্ধি আর অধ্যবসায় দিয়ে এই অসাধ্যসাধন করেছে। তবে এই প্রযুক্তিবিজ্ঞান যাতে মানুষের এবং প্রকৃতির শরু না হয়ে উঠতে পারে, সে বিষয়ে আমাদের তৎপর হতে হবে। শপথ নিতে হবে—প্রযুক্তিবিজ্ঞানকে আমরা ব্যবহার করব শুধুমাত্র মানবকল্যাণেই।
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।