আগ্রহ সৃষ্টিকারী উপাদানসমূহ সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দাও। Class 12 | Education (শিক্ষাবিজ্ঞান) | 8 Marks
উত্তর:-
আগ্রহ সৃষ্টিকারী উপাদান
আগ্রহ সৃষ্টিকারী উপাদানকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়—[1] ব্যক্তিগত উপাদান ও [2] পরিবেশগত উপাদান। আগ্রহ সৃষ্টিকারী উপাদানগুলির সংক্ষিপ্ত বর্ণনা নীচে উল্লেখ করা হল—
[1] আগ্রহ সৃষ্টিকারী ব্যক্তিগত উপাদান: আগ্রহ সৃষ্টিকারী ব্যক্তিগত উপাদানের মধ্যে উল্লেখযােগ্য হল শারীরিক স্বাস্থ্য ও শারীরিক বিকাশ, মানসিক স্বাস্থ্য ও মানসিক বিকাশ, ব্যক্তির বয়স ও লিঙ্গ, প্রবৃত্তিমূলক আচরণের প্রকৃতি, ক্ষমতা, আদর্শ, প্রেষণা, ইচ্ছা, চাহিদা, অনুভূতি, জটিলতা ইত্যাদি। এইসব উপাদানগুলি সম্পর্কে নীচে সংক্ষিপ্ত আলােচনা করা হল
i. শারীরিক স্বাস্থ্য ও শারীরিক বিকাশ: ব্যক্তির শারীরিক স্বাস্থ্য এবং শারীরিক বিকাশ অনুরাগ বা আগ্রহ সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ii. মানসিক স্বাস্থ্য ও মানসিক বিকাশ: ব্যক্তির মানসিক স্বাস্থ্য ও মানসিক বিকাশ আগ্রহ সৃষ্টিতে বিশেষ ভূমিকা নেয়। যে ব্যক্তির মানসিক স্বাস্থ্য উন্নত সেই ব্যক্তির বিভিন্ন বিষয়ের প্রতি আগ্রহ লক্ষ করা যায়। মানসিক দিক থেকে যারা পিছিয়ে পড়ে, তারা বহু বিষয়ে আগ্রহ দেখায় না।
iii. বয়স: অনুরাগ বা আগ্রহ সৃষ্টির ক্ষেত্রে ব্যক্তির বয়স একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। অল্পবয়সে ছেলেমেয়েদের মধ্যে খেলাধুলায় যতটা আগ্রহ থাকে, বয়স বাড়ার সাথে সাথে ততটা আর থাকে না। পরিবর্তে অন্য বিষয়ে নতুন আগ্রহ বা অনুরাগ সৃষ্টি হতে দেখা যায়।
iv. লিঙ্গ: লিঙ্গভেদে ব্যক্তির মধ্যে আগ্রহের বিভিন্নতা দেখা যায়। একই বয়সের ছেলেরা যে ধরনের বিষয়ের প্রতি আগ্রহী হয়, মেয়েদের আগ্রহের বিষয়গুলি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তার থেকে আলাদা হয়।
v. চাহিদা: ব্যক্তির চাহিদা আগ্রহ সৃষ্টির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, যে ব্যক্তি বিভিন্ন ধরনের খাদ্য পছন্দ করেন, তিনি বাজার করতে গিয়েও নানা ধরনের খাওয়ার জিনিস কেনেন।
vi. অন্যান্য উপাদান: ব্যক্তির ক্ষমতা, আদর্শ, প্রেষণা, ইচ্ছা, প্রক্ষোভ, অনুভূতি প্রভৃতিও আগ্রহ সৃষ্টিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
[2] আগ্রহ সৃষ্টিকারী পরিবেশগত উপাদান: আগ্রহ সৃষ্টিকারী পরিবেশগত উপাদানগুলির মধ্যে উল্লেখযােগ্য হল— আর্থসামাজিক অবস্থা, সাংস্কৃতিক পরিকাঠামাে, প্রশিক্ষণ, সামাজিক মর্যাদা, অধিক সুযােগসুবিধা ইত্যাদি। নীচে এগুলির বর্ণনা দেওয়া হল
i. পরিবারের আর্থসামাজিক অবস্থা: পরিবারের আর্থ-সামাজিক অবস্থা আগ্রহ সৃষ্টির ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। তাই দেখা যায়, ধনী পরিবারের ছেলেমেয়েরা গলফ, লন টেনিস প্রভৃতি ব্যয়বহুল খেলায় আগ্রহী। অন্যদিকে, সাধারণ পরিবারের ছেলেমেয়েদের ফুটবল, ভলিবল, ক্রিকেট প্রভৃতি কম ব্যয়সাপেক্ষ খেলার প্রতি আগ্রহ দেখা যায়।
ii. সাংস্কৃতিক পরিকাঠামাে: যেসব বাড়িতে উন্নতমানের সংস্কৃতিচর্চার পরিকাঠামাে রয়েছে, সেইসব বাড়ির ছেলেমেয়েরা সাহিত্যচর্চা, গানবাজনা, বিশেষত উচ্চাঙ্গ সংগীত প্রভৃতিতে বিশেষভাবে আগ্রহী হয়।
iii. প্রশিক্ষণ: আগ্রহ সৃষ্টিতে প্রশিক্ষণের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ছেলেমেয়েদের মধ্যে ধীরে ধীরে বিভিন্ন বিষয়ের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করা যায়।
iv. সামাজিক মর্যাদা: যেসব কাজে সামাজিক মর্যাদা অনেক বেশি সেইসব কাজে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বেশি থাকে, যেমন— চিকিৎসাবিদ্যা, ইঞ্জিনিয়ারিং, অধ্যাপনা, ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি।
v. অধিক সুযােগসুবিধা: ব্যক্তিকে যদি কোনাে বিষয়ে অধিক সুযােগসুবিধা দেওয়া হয় তা হলে সে ধীরে ধীরে ওই বিষয়ের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠে।
পরিবেশগত বা আর্থসামাজিক উপাদানগুলি শিশুকে বিশেষ বিশেষ বিষয়ে আগ্রহী করে তােলে। ওই আগ্রহ পরবর্তীকালে তাকে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে সাহায্য করে।
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।