আকস্মিক বা অনিয়মিত বায়ু সম্পর্কে সংক্ষেপে আলােচনা করাে। অথবা, ঘূর্ণবাত ও প্রতীপ ঘূর্ণবাত কী? এগুলির সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও। Class 10 | Geography | 5 Marks
উত্তর: আকস্মিক বা অনিয়মিত বায়ু
কোনাে স্বল্প পরিসর স্থানে যদি খুব অল্প সময়ের মধ্যে বা হঠাৎই বায়র চাপ অত্যধিক কমে যায় বা বৃদ্ধি পায়, তাহলে সেখানে আবহাওয়ার দ্রুত পরিবর্তন ঘটে। এর ফলে যেসব বায়ুপ্রবাহ হঠাৎই সেখানে আবির্ভূত হয়ে। প্রবল বেগে বইতে শুরু করে; সেই সকল বায়ুপ্রবাহ কিছু সময় অবস্থানের পর হঠাৎই অন্তর্হিত হয়। এই বায়ুপ্রবাহকে আকস্মিক বা অনিয়মিত বায়ুপ্রবাহ বলে।
![](http://wbshiksha.com/wp-content/uploads/2022/06/xxxxxxxxxx.png)
শ্রেণিবিভাগ
এই বায়ু প্রধানত দুধরনের — ঘূর্ণবাত এবং প্রতীপ ঘূর্ণবাত।
1. ঘূর্ণবাত: কোনাে স্থান হঠাৎ বেশি উত্তপ্ত হলে সেখানে গভীর নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়। তখন চারিদিক (উচ্চচাপযুক্ত স্থান থেকে অপেক্ষাকৃত শীতল ও ভারী বায়ু প্রবল বেগে ওই নিম্নচাপযুক্ত কেন্দ্রের দিকে ছুটে যায় এবং ঘুরতে ঘুরতে নিম্নচাপ কেন্দ্রে প্রবেশের চেষ্টা করে। তবে কেন্দ্রে পৌছানাের আগেই ওই বায়ু উর্ধ্বগামী হয়। এই প্রবল গতিবেগ সম্পন্ন কেন্দ্রমুখী ঘূর্ণায়মান ঊধ্বগামী বায়ুপ্রবাহকে বলে ঘূর্ণবাতস
বৈশিষ্ট্য: [i] বায়ুপ্রবাহের দিক: ঘূর্ণবাতের বায়ু উত্তর গােলার্ধে ঘড়ির কাঁটার গতির বিপরীতে বা বামাবর্তে এবং দক্ষিণ গােলার্ধে ঘড়ির কাঁটার গতির দিকে বা দক্ষিণাবর্তে ঘুরতে ঘুরতে নিম্নচাপ কেন্দ্রের দিকে অগ্রসর হয়। [ii] উপবিভাগ: গঠন ও উৎসস্থানের পার্থক্য অনুসারে ঘূর্ণবাতকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়—[a] ক্রান্তীয় অঞ্জলের ঘূর্ণবাত: উভয় গােলার্ধের ক্রান্তীয় অঞ্চলে, বিশেষত 10° অক্ষাংশ থেকে 30° অক্ষাংশের মধ্যে সাগর-মহাসাগরীয় জলভাগের। ওপর উষ্ণতা খুব বেশি বেড়ে গেলে মাঝে মাঝে গভীর নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়। এর ফলে তখন চারপাশের উচ্চচাপ অঞল থেকে। অপেক্ষাকৃত শীতল ও ভারী বায়ু ওই নিম্নচাপের দিকে প্রবল বেগে ছুটে যায় এবং ঘুরতে ঘুরতে নিম্নচাপ কেন্দ্রের দিকে প্রবেশের চেষ্টা করে। তবে নিম্নচাপের কেন্দ্রভাগ উষ্ণ বলে আগত ওই বায়ুও কম। উষ্ণ হয়ে ওপরে উঠে যায়। এই প্রবল গতিবেগসম্পন্ন (নিম্নচাপের) কেন্দ্রমুখী ঘূর্ণায়মান উর্ধ্বগামী বায়ুপ্রবাহকে বলা হয় ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাত । এই প্রকার ঘূর্ণবাত বঙ্গােপসাগরে সাইক্লোন, দক্ষিণ ও পূর্ব চিন সাগরে টাইফুন, ক্যারিবিয়ান সাগরে হারিকেন নামে পরিচিত। [b] নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলের ঘূর্ণবাত: নিরক্ষরেখার উভয়দিকে 35° থেকে 65° অক্ষাংশের মধ্যে যখন দুটি বিপরীতধর্মী বায়ু অর্থাৎ একটি উষ্ণ বায়ু এবং অপরটি শীতল বায়ু দু-দিক থেকে ছুটে আসে, তখন দুই বায়ুর মধ্যে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষ যখন তীব্র হয়, সংঘর্ষস্থান বা সীমান্ত ক্রমশই সংকুচিত হতে হতে শেষে, শীতল বায়ু ভারী বলে নীচের দিকে নেমে উষ্ণ বায়ুর স্থান দখল করে নেয়। এর ফলে তখন উষ্ণ বায়ু বক্রাকারেশীতল বায়ুর মধ্যে প্রবেশ করে এবং প্রবল বেগে ঘুরতে ঘুরতে ওপরে উঠে যায়। একে নাতিশীতোষ্ণ ঘূর্ণবাত বলা হয়।
২। প্রতীপ ঘূর্ণবাত: অনেকসময় নাতিশীতোষ্ণমণ্ডল ও হিমমণ্ডলের। কোনাে স্বল্প পরিসর স্থানে তীব্র শৈত্যের জন্য প্রবল উচ্চচাপের সৃষ্টি হয়। যেহেতু ওই উচ্চচাপের বাইরের দিকে থাকে নিম্নচাপ, তাই ওই উচ্চচাপযুক্ত কেন্দ্র থেকে শীতল ও শুষ্ক বায়ু বাইরের নিম্নচাপ অঞলের দিকে প্রবল বেগে কুণ্ডলীর আকারে প্রবাহিত হয়। উচ্চচাপ কেন্দ্র থেকে বাইরের নিম্নচাপ অঞলের দিকে এইভাবে প্রবাহিত বায়ুর নাম প্রতীপ ঘূর্ণবাত।
বায়ুপ্রবাহের দিক: এই বায়ুপ্রবাহের গতি থাকে ঘূর্ণবাতের বিপরীত দিকে অর্থাৎ বহির্মুখী ও অধঃগামী এবং উত্তর গােলার্ধে দক্ষিণাবর্তে অর্থাৎ ঘড়ির কাটার গতির দিকে আর দক্ষিণ গােলার্ধে বামাবর্তে অর্থাৎ ঘড়ির কাটার গতির বিপরীত দিকে।
![](http://wbshiksha.com/wp-content/uploads/2022/06/xx.png)
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।