অন্তর্দৃষ্টি শিখনের বৈশিষ্ট্য লেখাে। এই শিখন কৌশলের শিক্ষাগত প্রয়ােগ লেখাে।

অন্তর্দৃষ্টি শিখনের বৈশিষ্ট্য লেখাে। এই শিখন কৌশলের শিক্ষাগত প্রয়ােগ লেখাে। অথবা, অন্তদৃষ্টিমূলক শিখন কী? শিক্ষাক্ষেত্রে ইহার প্রয়ােগ লেখাে। Class 12 | Education (শিক্ষার কৌশল) | 8 Marks

উত্তর:

অন্তদৃষ্টি শিখনের বৈশিষ্ট্য 

[1] সামান্যীকরণ ও পৃথকরণ: সমগ্রতাবাদীগণ অন্তর্দৃষ্টি জাগ্রত হওয়ার জন্য দুটি মানসিক প্রক্রিয়ার ওপর গুরুত্ব আরােপ করেন। এই দুটি প্রক্রিয়া হল, i . সামান্যীকরণ এবং ii. পৃথক্‌করণ। শিখন পরিস্থিতির মধ্যে যেগুলি অপ্রাসঙ্গিক, সেগুলিকে বাতিল করে কেবলমাত্র প্রাসঙ্গিক ও সাধারণ বৈশিষ্ট্যগুলিকে বেছে নেওয়ার নামই হল পৃথক্‌করণ এবং পরে ওই সাধারণ বৈশিষ্ট্যগুলির ওপর ভিত্তি করে সামান্যধর্মী সূত্র তৈরি করার নামই হল সামান্যীকরণ। 

[2] নিজস্ব বৈশিষ্ট্যাবলি; শিখনের ক্ষেত্রে কোনাে কাজ সম্পূর্ণ হওয়ার আগে বাধাপ্রাপ্ত হলে লিখনে অংশগ্রহণকারীর অর্থাৎ, শিক্ষার্থীর মধ্যে একটি অতৃপ্তিকর অবস্থার উন্মেষ ঘটে। তখন সে তার ওই ধরনের অতৃপ্তিকর অবস্থার সমাধানের উদ্দেশ্যে শিখন পরিস্থিতির সম্পূর্ণ অংশকে বিশ্লেষণ করে ও তার মধ্য থেকে এলােমেলাে বিষয়গুলি বাদ দিয়ে সঠিক গুণকে নির্বাচন করে। এর ফলে তার সামনে সম্পূর্ণ সমস্যার সমাধানটি স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

        এই পরীক্ষাগুলি থেকে, কোলার এই সিদ্ধান্তে আসেন যে, শিখনের জন্য পরিস্থিতির সামগ্রিক সম্পর্ক পর্যবেক্ষণ করা প্রয়ােজন। কারণ। প্ৰথমক্ষেত্রে শিম্পাঞ্জিকে কলার ছড়াটি পেড়ে নেওয়ার কৌশল তিনি না দেখিয়ে দেওয়া পর্যন্ত সে তা বুঝে উঠতে পারেনি যে, কলার ছড়াটি পেড়ে নেওয়ার সঙ্গে প্যাকিং বাক্সের কী ধরনের সম্পর্ক রয়েছে। কিন্তু বিষয়টি দেখিয়ে দেওয়ার পর, তা শিম্পাঞ্জিটি বুঝতে পারে এবং সহজে কলার ছড়া। পেড়ে নেয়। দ্বিতীয় ক্ষেত্রে, বােকা শিম্পাঞ্জিটি তার নিজের বুদ্ধির দ্বারা বাস দেখা এবং লাফ দেওয়া ছাড়া, অন্য কিছুই সামগ্রিক আচরণের অংশ হিসে বুঝে উঠতে পারেনি। অর্থাৎ, তার মধ্যে সামগ্রিকতার বােধ সৃষ্টি হয়নি ব” সে কলার ছড়াটি পেড়ে নিতে পারেনি।

[3] সমস্যা বিশ্লেষণ ও সমাধান: সমগ্রতাবাদীদের মতে অন্তর্দৃষ্টি শিখনের নিজস্ব কতকগুলি বৈশিষ্ট্য বা স্তর রয়েছে। এগুলি হল—. i.শিখন পরিস্থিতি বা সমস্যাকে সামগ্রিকভাবে প্রত্যক্ষ করা, ii. অংশ বিশেষের পরিবর্তে সমগ্র। সমস্যাটির উদ্দেশ্য সামগ্রিকভাবে উপলদ্ধি করা, iii. পরিস্থিতির অংশগুলির মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক নির্ণয় করা, iv. সমস্যাটির অন্তর্নিহিত তত্ত্ব এবং বৈশিষ্ট্যগুলির পৃথকরণ ও সামান্যীকরণ ঘটানাে এবং v.সবশেষে হঠাৎই নিজের (শিক্ষার্থীর) আচরণের পরিবর্তন ঘটানাে। 

অন্তদৃষ্টি শিখন কৌশলের শিক্ষাগত প্রয়ােগ

 সমগ্রতাবাদী বা গেস্টান্টবাদীদের মতে, শিক্ষার্থীদের শিখন ঘটে অন্তর্দৃষ্টির ফলে। এ প্রসঙ্গে গেস্টান্টবাদীরা অন্তর্দৃষ্টি শিখন কৌশলকে শিক্ষাক্ষেত্রে প্রয়ােগ করার ক্ষেত্রে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ উপায় অবলম্বনের কথা বলেছেন। এগুলি হল— 

[1] বিষয়বস্তুর সামগ্রিক উপস্থাপনা: শিক্ষার্থীর শিখন পরিস্থিতি সামগ্রিকতার ওপর নির্ভরশীল | তাই শ্রেণিতে পাঠ পরিচালনার সময় শিক্ষকশিক্ষিকারা শিক্ষার্থীদের কাছে শিক্ষণীয় বিষয়বস্তুর ছােটো ছােটো অংশে উপস্থাপন না করে যাতে সামগ্রিকভাবে তা উপস্থাপন করে, সেদিকে নজর দিতে হবে। 

[2] সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে যান্ত্রিক প্রচেষ্টা নিরসন: শিক্ষার্থীরা পাঠ গ্রহণকালে বা সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে অন্ধ বা যান্ত্রিক প্রচেষ্টা থেকে যাতে বিরত থাকে, সে বিষয়টিও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের লক্ষ রাখতে হবে|

 [3] পৃথকরণ ও সামান্যীকরণ সহায়তা: প্রতিটি শিক্ষার্থী যাতে শিক্ষণীয় বিষয়বস্তুর অন্তর্গত অপ্রয়ােজনীয় অংশগুলি বাদ দিয়ে প্রাসঙ্গিক ও প্রয়ােজনীয় সাধারণধমী বৈশিষ্ট্যগুলিকে আলাদা করে নিয়ে একটি সর্বজনীন সূত্র গঠনে সমর্থ হয়, সেই বিষয়টির প্রতি শিক্ষক-শিক্ষিকাকে যত্নবান হতে হবে।

[4] শিখনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা: পাঠ গ্রহণের আগে শিক্ষার্থীরা যাতে শিখনের লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য সম্পর্কে অবহিত হওয়ার সুযােগ পায়, সেদিকে সজাগ দৃষ্টি দিতে হবে। তাই পাঠ গ্রহণের পূর্বে শিক্ষার্থীদের পাঠের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ভালােভাবে ব্যাখ্যা করা প্রয়ােজন। 

[5] বিষয়বস্তুর ধারাবাহিক উপস্থাপনা: শিক্ষার্থীদের মধ্যে অন্তর্দৃষ্টি জাগিয়ে তােলার জন্য শিক্ষাদানকালে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের পাঠ্য বিষয়ের বিভিন্ন অংশের মধ্যে ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে। তবেই শিক্ষার্থীদের পক্ষে শিখনলব্ধ অভিজ্ঞতা আয়ত্ত করা সহজ হবে। 

[6] শিক্ষার্থীর সক্রিয়তা ও আগ্রহ সৃষ্টি: শিক্ষার্থী যেহেতু শিখন পরিস্থিতির একটি সক্রিয় অঙ্গ, তাই তাকে সমস্যাভিমুখী এবং সমস্যা সমাধানে আগ্রহী করে তােলার প্রয়ােজনে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের উপযুক্ত শিক্ষা-সহায়ক উপকরণের সাহায্য গ্রহণ করতে হবে। আকর্ষণীয় বাচনভঙ্গি, সুন্দর ও সাবলীল বিষয় উপস্থাপনার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে পাঠ্য বিষয়ের প্রতি প্রেষণা সৃষ্টি করতে হবে। শিখনের অন্তদৃষ্টির তত্ত্বে শিক্ষার্থীদের আত্মসক্রিয়তা এবং শিক্ষণীয় বিষয়ের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টির ওপর যে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, তাকে যদি সঠিকভাবে কাজে লাগানাে যায়, তাহলে শিক্ষার্থীদের পক্ষে শিক্ষণীয় বিষয়টি সহজে আয়ত্ত করা যে সম্ভবপর হবে, সে বিষয়ে কোনাে সন্দেহ নেই।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment